সোমবার সংসদে মহুয়া মৈত্র। ছবি: পিটিআই।
সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হয়েছে সোমবার। বিজেপি সূত্রে গত এক মাস ধরেই বলা হচ্ছিল, অধিবেশনের প্রথম দিনই তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবে সংসদের এথিক্স কমিটি। কিন্তু দেখা গেল, আনুষ্ঠানিক ভাবে সোমবার লোকসভার স্পিকারের কাছে এথিক্স কমিটি রিপোর্ট পেশ করল না। ফলে মহুয়ার বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ হবে, তা স্পষ্ট হল না শীতকালীন অধিবেশনের শুরুর দিন।
সূত্রের খবর, মহুয়ার বিষয়ে আপাতত খানিক ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়েছে বিজেপি। একটি সূত্রের দাবি, আগামী বৃহস্পতিবার রিপোর্টটি লোকসভায় পেশ করা হতে পারে। কেন ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, সে বিষয়ে একাধিক জল্পনা রয়েছে। সূত্রের খবর, সোমবার অধিবেশন শুরুর আগে কংগ্রেসের বৈঠকে ওই বিষয়ে ‘আক্রমণাত্মক অবস্থান’ নেওয়া হয়। লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী আগেই স্পিকারকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন, এথিক্স কমিটির সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে যে ভাবে চলে আসছে, তা কাম্য নয়। তা সংসদের রীতিনীতিরও পরিপন্থী। এথিক্স কমিটি তদন্ত করে কী পেয়েছে, তাদের রিপোর্টে কী রয়েছে বা মহুয়া দোষী হলে কী শাস্তির সুপারিশ তারা করছে, এ সবই গোপন থাকার কথা। কিন্তু মহুয়ার বিরুদ্ধে ‘ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্ন’ অভিযোগে এথিক্স কমিটির তদন্ত রিপোর্ট আর গোপন নেই। এথিক্স কমিটি যে মহুয়ার সাংসদ পদ খারিজের সুপারিশ করেছে তা আগেই জানা গিয়েছিল।
সোমবার কংগ্রেসের বৈঠকে এবং পরে ‘বিজ়নেস অ্যাডভাইসরি কমিটি’র বৈঠকেও কংগ্রেস কড়া অবস্থান নেয় মহুয়ার বিষয়ে। প্রকাশ্যেও অধীর জানান, তাঁরা মহুয়ার পাশে রয়েছেন। দ্বিতীয়ত, এথিক্স কমিটি কোনও সাংসদকে বহিষ্কারের কথা বলতে পারে না। সেই অধিকার একমাত্র রয়েছে প্রিভিলেজ কমিটির। ফলে এথিক্স কমিটি যদি মহুয়াকে বহিষ্কারের কথা বলে রিপোর্ট পেশ করে, তা তাদের এক্তিয়ার বহির্ভূত হবে। বিরোধী শিবির যদি বিষয়টি নিয়ে আইনের দ্বারস্থ হয়, তা হলে সরকারপক্ষ বিড়ম্বনায় পড়তে পারে। তৃতীয়ত, মহুয়া-প্রশ্নে বিরোধী শিবির যে ভাবে সংসদের বাইরে ‘এককাট্টা’ হয়ে গিয়েছে, তার প্রতিফলন লোকসভার মধ্যে পড়লে তিন রাজ্যে জয়ের কৃতিত্ব অনেকটা ‘ফিকে’ হয়ে যেতে পারে।
এই সমস্ত বিবেচনা করেই এথিক্স কমিটির রিপোর্ট পেশের দিনক্ষণ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে একটি সূত্রের দাবি। ওই সূত্রের বক্তব্য, সংসদীয় রীতিনীতি মেনে সেটি স্পিকারের হাতে দেওয়া হবে। সরাসরি তাতে শাস্তি সুপারিশ করা না-ও হতে পারে। বিষয়টি স্পিকারের উপরেই ছেড়ে দেওয়া হবে। আগামী বৃহস্পতিবার লোকসভায় রিপোর্টটি পেশ করা হতে পারে। রিপোর্ট কেন োমবার জমা পড়ল না, তা জানেন না মহুয়াও। তিনি শুধু বলেছেন, ‘‘আগে ওরা রিপোর্ট দিক, তার পর যা বলার বলব।’’
প্রসঙ্গত, সোমবার সকালেই সংসদে পৌঁছে গিয়েছিলেন মহুয়া। আবার তাঁর বিরুদ্ধে অন্যতম অভিযোগকারী বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবেও সংসদে প্রবেশের সময়ে সংবাদমাধ্যকে বলেছিলেন, ‘‘পাপ করেছে, সাজা হবে।’’ যদিও সে সব কিছুই আজ হয়নি সংসদে। তবে তৃণমূল-বিজেপি বাগ্যুদ্ধে তপ্ত থেকেছে সংসদ। সেই সময়ে মহুয়াকেও দেখা গিয়েছে আসন থেকে উঠে দাঁড়িয়ে চেনা মেজাজে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন।
লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার সংসদে বলতে উঠে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বাংলার পাওনা, বঞ্চনা, ইত্যাদি নিয়ে সরব হন। পাল্টা কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান অভিযোগ করেন, বাংলায় মিড ডে মিল প্রকল্পে চার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। সরকার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। সব প্রকাশ্যে আসবে। ধর্মেন্দ্র যখন তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ করছেন, তখন দেখা যায় তৃণমূলের বেঞ্চ থেকে সব চেয়ে আগ্রাসী মেজাজে পাল্টা গলা তুলছেন মহুয়া। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে চিৎকার করতে দেখা যায় শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কেও।
সোমবার উত্তরবঙ্গ যাওয়ার আগে মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘‘মহুয়া মৈত্র নিজের লড়াই নিজেই লড়তে পারেন। তিনি স্বাবলম্বী। দল অবশ্যই তাঁর পাশে থাকবে।’’ মহুয়ার পাশে দল-সহ বিরোধী শিবিরের অনেকেরই সমর্থন ছিল। কিন্তু সোমবার রিপোর্ট পেশ করল না বিনোদ সোনকরের নেতৃত্বাধীন লোকসভার এথিক্স কমিটি। কবে তা পেশ হয়, কী পদক্ষেপ হয় সে দিকে নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy