প্রার্থী: রঘুনাথপুরের সাঁকড়া গ্রামের কালী মন্দিরে। ছবি: সঙ্গীত নাগ
বিদায়ী সাংসদ মুনমুন সেনকে এলাকায় পাওয়া যায়নি বলে ক্ষোভ রয়েছে রঘুনাথপুরের তৃণমূল কর্মীদের একাংশের মধ্যে। সেই রঘুনাথপুরেই প্রথম প্রচারে এসে তৃণমূলের এ বারের প্রার্থী সুব্রত মুখোপাধ্যায় কর্মীদের আশ্বস্ত করলেন, তিনি এলাকায় আসবেন। বললেন, ‘‘আমি কাজের লোক। কাজ করতে গেলে এলাকায় আসতেই হবে। এক জন সাংসদের যে ভাবে এলাকায় আসা দরকার, ততখানি আমি নিশ্চয় আসব।’’
তিনি কেমন কাজের লোক, কর্মীদের কাছে তার বিস্তারিত ফিরিস্তিও তুলে ধরেন। এত দিন রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘বাকিরা এসে বলবেন, তাঁকে ভোট দিন। তিনি এই করবেন, সেই করবেন। আর আমি কাজ করে এসেছি। এটাই তফাৎ।’’
বাঁকুড়া লোকসভার মধ্যে পড়ে রঘুনাথপুর বিধানসভাও। এত দিন বাঁকুড়ায় জেলায় প্রচার করে শনিবার প্রথম রঘুনাথপুরে আসেন সুব্রতবাবু। এ দিন তিনি রঘুনাথপুর বিধানসভার তিনটি ব্লক সাঁতুড়ি, নিতুড়িয়া, রঘুনাথপুর ১ এবং রঘুনাথপুর পুরসভার দলীয় কর্মীদের নিয়ে তিনটি জায়গায় কর্মিসভা করেন। সঙ্গে ছিলেন বাঁকুড়ার জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ খাঁ ও পুরুলিয়ার জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো, রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি। দল সূত্রে খবর, এ দিন বর্ষীয়ান নেতা এলাকার কর্মীদের সঙ্গে পরিচিত হতে এসেছিলেন। এরপরে তিনি নিবিড় ভাবে ঘুরে ঘুরে প্রচার করবেন।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
নিতুড়িয়ার সভায় তিনি জানান, বাঁকুড়া কেন্দ্র তাঁর পরিচিত। সে কারণে এখান থেকে তাঁর লড়াইয়ের প্রস্তাব পেয়ে সম্মতি জানাতে দেরি করেননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি বলতাম, কোনও দিন এমপি পদের জন্য লড়াই করলে, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া থেকেই করব।’’
তিনটি সভাতেই তিনি মূলত পঞ্চায়েত মন্ত্রী হিসাবে এই দুই জেলায় উন্নয়নের যে কাজ করেছেন, তার ফিরিস্তি তুলে ধরেন কর্মীদের কাছে। সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরুলিয়া, বাঁকুড়া সফরে এসেছিলেন। সঙ্গে আমি ছিলাম। তিনি প্রস্তাব দিয়েছিলেন, এই দুই মানুষের জন্য কি জলের ব্যবস্থা করা যায় না? কলকাতার মানুষ যে পরিস্রুত জল পান, তা এই দুই জেলার মানুষকেও দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন। দেরি না করে কাজে নেমে পড়ি।’’ তিনি জানান, টাকার সমস্যা ছিলই। ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট’ ব্যাঙ্ক আর জাপানের ‘জাইকা’ থেকে টাকা নিয়ে এসেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘পানীয় জলের প্রকল্প শেষের মুখে। অনেক জায়গায় আবার শেষও হয়ে গিয়েছে। এর থেকে বড় কাজ আর কী হতে পারে?’’
তাঁর আরও দাবি, ‘‘দুই জেলায় এত রাস্তা করেছি, অতীতে হয়নি। একশো দিনের কাজেও প্রচুর মানুষ কাজ পেয়েছেন। ঘরে ঘরে শৌচালয় তৈরি হয়েছে।’’
শুধু কাজের ফিরিস্তি দেওয়াই নয়, প্রতিপক্ষদের সম্পর্কেও তীব্র সমালোচনা শোনা গিয়েছে। তাঁর মন্তব্য, ‘‘কংগ্রেস এখানে প্রার্থী দেয়নি। বাকিদের মধ্যে এক জন রাজনীতি করেই না, আর এক জন নিজেদের এলাকায় বিধানসভা ভোটে ১৪ হাজার ভোটে হেরেছেন।’’
বিদায়ী সাংসদ মুনমুন সেনের পরে সুব্রত প্রার্থী করায় তাঁকেও ‘বহিরাগত’ বলে বিঁধতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। সেই প্রসঙ্গে সুব্রত বলেন, ‘‘বহিরাগত একজনই নরেন্দ্র মোদী। বাড়ি গুজরাটে, প্রার্থী হন বারাণসীতে। আমি তো রাজ্যের লোক, রাজ্যেই প্রার্থী হয়েছি। বহিরাগত কেন হব?’’
বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকারের দাবি, ‘‘গ্রাম বাংলায় উন্নতি করে থাকলে, পঞ্চায়েত ভোটে সুব্রতবাবুর দলকে সন্ত্রাস করতে হল কেন? আমি গত ছ’বছর ধরে বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতির পদে আছি। সুব্রতবাবুর বিরোধীদের সম্পর্কে হোমওয়ার্ক করা আগে দরকার।’’ সিপিএম প্রার্থী অমিয় পাত্রকে চেষ্টা করেও ফোনে পাওয়া যায়নি। সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতি বলেন, ‘‘বাঁকুড়ায় তৃণমূল রাজনৈতিক ভাবে দুর্বল বলে বারবার তাঁদের বাইরে থেকে প্রার্থী আনতে হচ্ছে। রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা থেকেই সুব্রতবাবু এই মন্তব্য করছেন।’’ সুব্রতবাবু অবশ্য বিরোধীদের অভিযোগকে আমল দিতে নারাজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy