Advertisement
২২ জানুয়ারি ২০২৫

স্পিডব্রেকার দিদি বনাম এক্সপায়ারি মোদী, বিপদ চেনালেন সূর্য

নির্বাচনী প্রচারে প্রথম দফায় রাজ্যে এসে শিলিগুড়ির সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে উন্নয়নের পথে ‘স্পিডব্রেকার’ বলে আক্রমণ করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।

দ্বৈরথে মোদী-মমতা।

দ্বৈরথে মোদী-মমতা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৫৩
Share: Save:

এক দিকে ‘স্পিডব্রেকার’, অন্য দিকে ‘এক্সপায়ারিবাবু’। উত্তরবঙ্গে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নরেন্দ্র মোদী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরজায় উঠে এল এই দু’টি শব্দ।

নির্বাচনী প্রচারে প্রথম দফায় রাজ্যে এসে শিলিগুড়ির সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে উন্নয়নের পথে ‘স্পিডব্রেকার’ বলে আক্রমণ করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। দু’ঘণ্টার মধ্যেইদিনহাটায় তৃণমূলের মঞ্চ থেকে মোদীকে ‘এক্সপায়ারিবাবু’ বলে পাল্টা কটাক্ষ করলেন মমতা। আর তাৎপর্যপূর্ণ ভাবেমোদীর বিরুদ্ধে আক্রমণের সুর চড়িয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র তাঁকেই আরও বড় ‘স্পিডব্রেকার’ আখ্যা দিয়েছেন। বিজেপির বিরুদ্ধে লোকসভা ভোটে নানা বিরোধী দলের আলাদা লড়াইয়ের মধ্যেও সিপিএমের এই অবস্থান রাজনৈতিক শিবিরের নজর এড়ায়নি।

শিলিগুড়ির কাওয়াখালিতে বিজেপির সভা থেকে এ দিন মোদীর অভিযোগ, ‘‘পাঁচ বছরে দেশে বিকাশের নতুন গতি এসেছে। তবে বাংলায় সেই গতি নেই। কাজ হচ্ছে না। তার কারণ এখানে একটা স্পিডব্রেকার আছে। তার নাম দিদি।’’আয়ুষ্মান ভারত, প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান যোজনা, রিয়েল এস্টেট রেগুলেশন অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট আইন এবং চা-বাগানের কথা উল্লেখ করে মোদীর অভিযোগ, রাজ্য সরকারের বাধায় বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা থেকে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন। মোদীর কথায়, ‘‘তাঁকে (দিদি) না সরালে কিছু হবে না!’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

দিনহাটায় আবার মমতা পাল্টা বলেছেন, ‘‘পাঁচ বছরে কী উন্নয়ন করেছি, জানতে চাইছেন? মিথ্যে কথা না বলে আপনি পাঁচ বছরে কী করেছেন, তার কৈফিয়ত দিন। ক্ষমতা থাকলে সরাসরি আমার সঙ্গে বিতর্কে বসুন। আপনি প্রশ্ন করবেন, আমি তথ্য, রেকর্ড নিয়ে তার জবাব দেব।’’

সভার ভিড়কে ইঙ্গিত করে এ দিন মোদী বলেন, ‘‘এই জনসমুদ্র দেখেই বুঝতে পারছি দিদির নৌকা ডুবছে!’’ যার জবাবে দিনহাটায় মমতার চ্যালেঞ্জ, ‘‘আগে দিল্লি সামলাও। পরে বাংলা দেখবে। বাংলার দিকে তাকিয়ে লাভ নেই।’’

কলকাতায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যবাবুওমোদীকে বিঁধেবলেছেন, ‘‘স্বাধীনতার পরে দেশের এগনোর পথে যদি কোনও প্রধানমন্ত্রী স্পিডব্রেকার হয়ে থাকেন, তা হলে সেটা তিনিই। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মোদীযে অভিযোগগুলি তুলেছেন, তার সবটা অসত্য নয় ঠিকই। কিন্তু এ প্রত্যেকটাই তাঁর বিরুদ্ধে অনেক বেশি করে প্রযোজ্য। এটা তো একটা রাজ্য। উনি দেশ চালিয়েছেন। অনেক বেশি দায়িত্ব তাঁর। জবাবদিহির দায়ও তাঁর।’’ সূর্যবাবুর আরও মন্তব্য, ‘‘পরে কী হবে, সে পরের কথা। ওঁর তরী তো আগে ডুববে!’’

রাজ্যে বিজেপি এবং তৃণমূলের বিরোধিতা করেই ভোটে লড়ছে সিপিএম। তাই একই সঙ্গে সূর্যবাবু বলেছেন, ‘‘রাজ্যে তৃণমূলের তরী যখন ডোবার উপক্রম হয়েছিল, তখন ফুটো মেরামত করার দায়িত্ব মোদী নিয়েছিলেন! এখন ভোটের সময়ে এসে অন্য কথা বলছেন।’’

প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ,‘‘মমতা গরিবকে গরিব রাখতে চান। না হলে রাজনীতি করতে পারবেন না তিনি।’’ চিটফান্ড প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘‘চিটফান্ড কেলেঙ্কারি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। গরিবের টাকা গিয়েছে চিটফান্ডে। আর সেই টাকা নিয়ে দিদির মন্ত্রী, বিধায়ক, সঙ্গীরা কেটে পড়েছেন। তাঁরা গরিবদের লুট করেছেন।’’

মোদীকে জবাব দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত সাড়ে সাত বছরে ২ কোটি ১০ লক্ষ ছেলেমেয়েকে বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। স্বরোজগার যোজনায় ৪ লক্ষ মানুষ সাহায্য পেয়েছেন।’’ আয়ুষ্মান ভারতের পাল্টা হিসেবে তিনি জানান, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে রাজ্যের বেশির ভাগ মানুষকে। হাসপাতালে এখন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়। রাস্তা তৈরি, গ্রামীণ আবাসন এবং একশো দিনের কাজে যে পশ্চিমবঙ্গ দেশের মধ্যে এক নম্বরে, তাও জানান তিনি। একই সঙ্গে উল্লেখ করেন সবুজসাথী সাইকেল, ৯৮% মানুষকে২ কেজি টাকা দরে চাল দেওয়ার কথাও।

তরজায় এসেছে টাকা লুটের প্রসঙ্গও। মমতা বলেন, ‘‘তৃণমূলকে বলছে লুটেরা! তোমার টাকা খেয়ে লুটেরা, নাকি তোমার বিজেপির টাকা খেয়ে লুটেরা?’’ পাল্টা অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘‘আপনারা লুটেরাকে টিকিট দেন। আর্মস ডিলারকে টিকিট দেন।’’ চিটফান্ড প্রসঙ্গে আরও আক্রমণাত্মক মমতা বলেন, ‘‘ওই কেলেঙ্কারি সিপিএমের আমলে হয়েছে। কিন্তু আপনারা সিপিএম, কংগ্রেসের কোনও নেতার গায়ে হাত দিয়েছেন?’’ এক ধাপ এগিয়ে তাঁর অভিযোগ, ‘‘বিজেপির উপমুখ্যমন্ত্রীও এমন চিটফান্ডের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর গায়ে হাত দিয়েছেন?’’মমতার সাফ কথা, ‘‘গায়ের জোরে মিথ্যা বলেছেন এক্সপায়ারিবাবু প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ওঁর মেয়াদ এক্সপায়ার করে গিয়েছে।’’

সিপিএমের সূর্যবাবু এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘লুটের কথা মোদী কী বলছেন? ওঁর মেহুলভাই, নীরবভাইয়েরা হাজারা হাজার কোটি টাকা লুটে পালিয়ে গিয়েছেন। অন্যদের দাগী বলছেন মোদী! সব চেয়ে বড় দাগী তো উনি নিজে! রাফাল কেলেঙ্কারি নিয়ে কোনও জবাব আছে?’’ তৃণমূলের বিরুদ্ধে সারদা বা নারদ-কাণ্ডের তদন্তে পাঁচ বছরে কেন্দ্রীয় সরকার যে প্রায় কিছুই করেনি, সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন সূর্যবাবু।

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 লোকসভা ভোট ২০১৯ Mamata Banerjee Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy