ফাইল চিত্র।
শিয়ালদহ যে শিয়ালদহেই আছে, মঙ্গলবারের যাত্রী-বিক্ষোভ চোখে আঙুল দিয়ে আবার সেটা দেখিয়ে দিল!
আমযাত্রীর অভিযোগ, অসুখ মূলত একটাই। ট্রেন চলাচলে সময় না-মানা। তার থেকেও বড় কথা, সেই ক্রনিক অসুখ সারানোর কোনও চেষ্টাও নেই রেলের তরফে। সকালে-বিকেল দমদমে ঢোকার মুখে ১০-১৫ মিনিটের ‘বাধ্যতামূলক হল্ট’! অফিসের সময় বয়ে যাচ্ছে, কিন্তু অসহায় অপেক্ষা ছাড়া গতি নেই। বারাসত, বনগাঁ, বসিরহাট স্টেশনেও একই রোজনামচা। দেরির ফলে গিজগিজে ভিড়ে কামরায় পা রাখার জো থাকে না। তার প্রতিবাদে যাত্রী-ক্ষোভ লেগে থাকলেও শিয়ালদহ ডিভিশনে কিছুতেই সময়ে ট্রেন চালাতে পারছেন না রেল-কর্তৃপক্ষ।
বারবার রেলমন্ত্রী বদলের পরেও রেল-সফরের এই ভোগান্তি থেকে রেহাই মিলছে। নিরুপায় হয়ে অবরোধকেই হাতিয়ার করছেন এক শ্রেণির যাত্রী। মঙ্গলবারেও সেটাই হল। বারাসত স্টেশনে দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষার পরেও ট্রেন না-মেলায় যাত্রীদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে যে-বারাসত লোকালের ছাড়ার কথা, শিয়ালদহ থেকে সেটি কখনওই ১০-১৫ মিনিট দেরি না-করে বারাসতে ঢোকে না। এ দিন সেটি আরও বেশি দেরি করে বলে যাত্রীদের অভিযোগ। তত ক্ষণে বনগাঁ ও হাসনাবাদ থেকে আরও দু’টি ট্রেনের যাত্রীর ভিড়ে বারাসত স্টেশন ছয়লাপ। ‘লেট-যন্ত্রণা’য় কাবু যাত্রীরা বেলা ১১টায় রেললাইনে নেমে অবস্থান শুরু করে দেন। বিক্ষোভ চলে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। রেলের পাল্টা বক্তব্য, বিক্ষোভের জেরে ট্রেন লেটের বহর আরও বেড়েছে। আরও দু’টি লোকাল ট্রেন গড়ে আধ ঘণ্টা দেরিতে চলেছে। সোমবারেও বসিরহাট লাইনে ট্রেন না-পেয়ে এক শ্রেণির যাত্রী বিক্ষোভ দেখানোয় ট্রেন চলাচল দীর্ঘ ক্ষণ ব্যাহত হয়েছিল।
লেটের অসুখ কেন সারাচ্ছে না রেল? কিছু রেলকর্তার বক্তব্য, গত চার-পাঁচ বছরে কলকাতার আশেপাশে লোকাল ট্রেনের যাত্রী-সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। রেলের হিসেবে নিত্যযাত্রীর সংখ্যা ২০ লক্ষের কাছাকাছি। শুধু শিয়ালদহ স্টেশনেই টিকিট কেটে রোজ ১২ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করেন। বিনা টিকিটের যাত্রীদের ধরলে সংখ্যাটা আরও ৭-৮ লক্ষ বাড়বে। কোনও একটি ট্রেন দেরি করলে ‘চেন রি-অ্যাকশন’ অর্থাৎ তার প্রতিক্রিয়ায় পরপর ট্রেন দেরি করতে থাকা। আর যাত্রীদের বক্তব্য, পরের পর ট্রেন লেট করায় ভিড়ের বহর বাড়তে থাকে। গাদাগাদি করেও সময়ে গন্তব্যে পৌঁছনো যায় না।
রেলকর্তাদের একাংশ ঠারেঠোরে মানছেন, এই ‘ঐতিহ্যবাহী লেট’-এর নেপথ্যে আছে রেল পরিকাঠামোর সমস্যা। কোথাও লাইনে মেরামতি দরকার তো কোথাও সিগন্যালিং ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে অকেজো। সেই সঙ্গে ট্রেনের চালক-গার্ডের সংখ্যাও কম। ফলে সময়-সারণি মেনে ট্রেন চালানো কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
নিত্যযাত্রীদের ‘পথের কাঁটা’র মধ্যে আছে দমদম স্টেশনের ‘ভজকট’ দশাও! শিয়ালদহ মেন, ডানকুনি এবং বনগাঁ— এই তিনটি রুট যেখানে মিলেছে, সেই দমদমে রোজই হরেক গোলযোগে সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। কখন, কোন ট্রেন ছাড়া হবে, তা নিয়ে সংশয় প্রায় প্রতিদিনের।
রেল সূত্রের খবর, এত বেশি ক্রসিং যে, কেবিন থেকে লাইন সেট করতে অনেক সময় লেগে যায়। ফলে বেশির ভাগ ট্রেনই গড়ে ২০ মিনিট থমকে যাচ্ছে। দমদমে একটি উড়ালপুল তৈরি করা গেলে মুশকিল আসান হতে পারে। টাকাও বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু দখলদার হটিয়ে জমি পাওয়াটাই দুষ্কর। এক-এক সময় ট্রেনের ভিড় এত বেড়ে যায় যে, শিয়ালদহ স্টেশনেও ঠাঁই মেলে না। কিন্তু জমির বন্দোবস্ত করে প্ল্যাটফর্মের সংখ্যা বাড়ানো যাচ্ছে না।
দ্রুত লেট-সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিচ্ছেন পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র। কিন্তু পরিস্থিতি জটিলতা কাটানোর বিশেষ উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। প্রাক্তন রেলকর্তাদের মতে, ব্যস্ত সময়ে ট্রেন চলাচলের উপরে কন্ট্রোল রুম থেকে উঁচু তলার নজরদারি না-বাড়ালে সমস্যা মিটবে না।
সেই সঙ্গে আপৎকালীন পরিস্থিতির জন্য বাড়তি দু’-একটি রেক হাতে রাখা ছাড়া গতি নেই। তার জন্য ব্যবস্থা করতে হবে যথেষ্ট চালক এবং গার্ডেরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy