পানিহাটির তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক নির্মল ঘোষ। —ফাইল ছবি।
আর জি করের চিকিৎসক-ছাত্রীর খুন ও তার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে শাসক দলের স্থানীয় নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে ফের চাপানউতোর তুঙ্গে উঠল। নির্যাতিতার দেহ তড়িঘড়ি সৎকার করতে পানিহাটির তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক নির্মল ঘোষ এবং স্থানীয় এক নেতা তৎপর ছিলেন বলেই আগেই অভিযোগ উঠেছিল। সিবিআইয়ের তলব পেয়ে সোমবার সিজিও কমপ্লেক্সে তদন্তকারীদের জিজ্ঞসাবাদের মুখোমুখি হয়েছিসেন নির্মল। তার পরেই আরও সুর চড়িয়েছে বিরোধীরা। শাসক দলের তরফে অবশ্য বলা হচ্ছে, তদন্তের প্রয়োজনে সিবিআই কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তা নিয়ে দলের কিছু বলার নেই।
নির্যাতিতার দেহ উদ্ধারের পরে সন্ধ্যায় ময়না তদন্ত করিয়ে সেই রাতেই সৎকার করা হয়েছিল পানিহাটি শ্মশানে। সেখানে বিধায়ক নির্মলের উপস্থিত থাকার ছবি দেখা গিয়েছিল আগেই। সেই সঙ্গে শ্মশান দাহ সংক্রান্ত শংসাপত্রে সই ছিল সঞ্জীব মুখোপাধ্যায় নামে স্থানীয় এক নেতার। সিবিআইয়ের ডাকে জিজ্ঞাসাবাদ-পর্ব সেরে বেরিয়ে নির্যাতিতার ময়নাতদন্তের অন্যতম চিকিৎসক অপূর্ব বিশ্বাস রবিবার অভিযোগ করেছিলেন, নিহতের কাকা পরিচয় এক ব্যক্তি হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, রাতের মধ্যে ময়নাতদন্ত না-হলে ‘রক্তগঙ্গা বইবে’! কারও নাম না-করলেও তাঁর ইঙ্গিত সঞ্জীবের দিকেই ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। তার পর থেকেই সমাজমাধ্যমে তৃণমূলের তরফে প্রচার শুরু হয়েছিল, সঞ্জীব সিপিএমের প্রাক্তন কাউন্সিলর। সিপিএমের পানিহাটি-১ এরিয়া কমিটির তরফে এ দিন অনির্বাণ ভট্টাচার্য, শুভব্রত চক্রবর্তী, চারণ চক্রবর্তীরা ছবি দেখিয়ে পাল্টা দাবি করেছেন, ২০১৮ সালেই সঞ্জীব তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। অতীতে সিপিএমের পুর-প্রতিনিধি হলেও তিনি দলের সদস্যপদ পাননি। আর জি করের ঘটনায় সঞ্জীবের ভূমিকার সঙ্গে সিপিএমের কোনও যোগসূত্র নেই বলেই তাদের দাবি।
তৃণমূলের বিধায়ক সিবিআইয়ের ডাক পাওয়ার পরে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন, “নির্মল গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়। নির্মলকে হেফজাতে নিক, মোবাইল নিয়ে নিক। ভাল করে আপ্যায়ন করুক! সব সামনে আসবে!” সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘বিধায়ক, প্রাক্তন পুর-প্রতিনিধি, পাতানো ‘কাকু’, কেউই বাদ যাবেন না। শ্রীঘরে যাওয়া উচিত! দুর্নীতি, খুন, প্রমাণ লোপাটের একটার পরে একটা চক্রান্ত পেঁয়াজের খোসার মতো বেরিয়ে পড়ছে। কে কোথায় জন্মেছিলেন, সে সব গল্প করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টায় লাভ নেই!’’
সিবিআই দফতর থেকে বেরিয়ে নির্মল অবশ্য দাবি করেছেন, স্থানীয় বিধায়ক হিসেবে ‘নৈতিক দায়িত্ব’ থেকে তিনি হাসপাতাল ও বাড়ির এলাকায় গিয়েছিলেন। এমন ‘নারকীয় ঘটনা’য় ‘ফাঁসির চেয়েও বড় শাস্তি’ দাবি করেছেন তিনি। তৃণমূলের নেতা কুণাল ঘোষ বলেছেন, ‘‘তদন্তের প্রয়োজনে সিবিআই যদি কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায়, করবে। এখানে কোনও দল বা রাজনীতির বিষয় থাকতে পারে না। তদন্তকারী সংস্থা আর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিষয়।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘এই নিয়ে কারও কিছু জানা থাকলে তিনি সিবিআইকে বলছেন না কেন? বিরোধী দলনেতা বাজার গরম করছেন কেন? যদি সত্যিই তদন্তে সহযোগিতা করতে চান, সিবিআইয়ের কাছে নিজের বয়ান নথিভুক্ত করিয়ে আসুন! তথ্যপ্রমাণ থাকলে তদন্তকারীদের দিয়ে আসুন।’’
মগরাহাটে এ দিন দলের ছাত্র, যুব ও মহিলা সংগঠনের সভায় সিপিএমের যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় দাবি করছেন, সরকার, আদালত, সিবিআই দেরি করছে বলেই এখনও বিচার মেলেনি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এ প্রতিবাদ শুধু আমার নয়। এ প্রতিবাদ আমার আপনার সকলের।’’ মীনাক্ষীর আহ্বান, ‘‘আপনারা ২৬ সেপ্টেম্বর কলকাতায় প্রতিবাদ সভায় যোগ দেবেন।’’ হলদিবাড়িতে এ দিনই বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দাবি, ‘‘সঞ্জয় রায় এই একা যুক্ত নয়। যারা এই ঘটনাকে লুকোনোর চেষ্টা করেছিল, তাদের প্রত্যেককে সাজা দিতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy