সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানি। ছবি: ভিডিয়ো থেকে।
রাজ্যের আইনজীবী আরও জানান, হাসপাতালে বেড না দেওয়ার জন্য এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। কোনও ডাক্তার চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসেননি বলে অভিযোগ জানান তিনি। যদিও ডাক্তারদের আইনজীবী করুণা নন্দী এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। এই তথ্য সঠিক নয় বলেই জানান তিনি। সলিসিটর জেনারেলকে প্রধান বিচারপতি জানান, আগামী শুনানিতে টাস্ক ফোর্সের কাছ থেকে রিপোর্ট নেবে আদালত। তবে সেই টাস্ক ফোর্সে পশ্চিমবঙ্গের কারও নাম নেই, সেই বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন জুনিয়র ডাক্তারদের আইনজীবী ইন্দিরা। কমপক্ষে এক জন প্রতিনিধি যাতে রাজ্য থেকে থাকে, সেই অনুরোধ জানান তিনি। ইন্দিরার বক্তব্যের সঙ্গে সহমত প্রধান বিচারপতিও। টাস্ক ফোর্সের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলার জন্য ইন্দিরাকে জানান তিনি।
রাজ্যের তরফে জানানো হয়, জুনিয়র ডাক্তারেরা শুধুমাত্র জরুরি পরিষেবা দিচ্ছেন। বহির্বিভাগ ও অন্য ক্ষেত্রে পরিষেবা দিচ্ছেন না তাঁরা। যদিও তাতে আপত্তি জানান জুনিয়র ডাক্তারদের আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ। তিনি বলেন, “এটি ঠিক নয়। প্রয়োজনীয় পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে।” তখন প্রধান বিচারপতিও জানতে চান, কেন শুধু প্রয়োজনীয় পরিষেবা কথা বলা হচ্ছে? তা হলে কি সব ডাক্তার সব ডিউটি করছেন না? ইন্দিরা জানান, জুনিয়র ডাক্তারেরা জরুরি পরিষেবায় রয়েছেন। জরুরি পরিষেবার মধ্যে ওপিডি ও আইপিডি উভয়ই পড়ে। যদিও প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও অন্য ক্ষেত্রগুলি-সহ সমস্ত প্রয়োজনীয় পরিষেবা কাজ করবেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।
রাজ্যের আইনজীবী জানান, ১৫ অক্টোবরের মধ্যে ২৮টি হাসপাতালে সিসিটিভি বসানো এবং শৌচাগার নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ হয়ে যাবে। সে কথা শুনে প্রধান বিচারপতি নির্দেশ দেন, রাজ্যকে নিশ্চিত করতে হবে যাতে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে কাজ সম্পূর্ণ হয়। রাজ্য আরও জানিয়েছে, আরজি কর হাসপাতালে ডিউটি রুমের টেন্ডার হওয়ার পরে কাজ থমকে রয়েছে। সিবিআই ছাড়পত্র দিলে কাজ শুরু করা যাবে। যদিও তখন সিবিআই জানায়, “ঘটনার পরে ৫ দিন কাজ হয়েছে। এখন আর আমাদের আপত্তি থাকবে কেন?”
সিসিটিভি বসানোর কাজ কতদূর এগিয়েছে তা রাজ্যের আইনজীবীর থেকে জানতে চান প্রধান বিচারপতি। রাজ্য জানিয়েছে, তাতে আরও কিছু সময় লাগবে। ১০ অক্টোবরের মধ্যে সিসিটিভি বসানোর কাজ হয়ে যাবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি। আইনজীবী জানান, রাজ্যে উদ্ভূত বন্যা পরিস্থিতির কারণে কাজ কিছুটা থমকে গিয়েছে।
রাজ্যের তরফেও আদালতে আশ্বস্ত করা হয়, তদন্তকারী সংস্থা নামের তালিকা দিলে পদক্ষেপ করা হবে। রাজ্যের আইনজীবী জানান, কেউ যত প্রভাবশালীই হোন, সিবিআই তাঁদের নামের তালিকা দিলে পদক্ষেপ করা হবে। তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে রাজ্যের কোনও সমস্যা নেই বলেও জানান তিনি। প্রধান বিচারপতি নির্দেশ, তদন্তের আওতাধীন রয়েছেন এমন ব্যক্তিদের নাম সিবিআই রাজ্যকে দিলে পদক্ষেপ করতে হবে। রাজ্যকে আইন মেনে পদক্ষেপ করতে হবে।
কারা তদন্তের অধীনে রয়েছেন সেই নামের তালিকা আদালতে জমা দেওয়ার জন্য সিবিআইকে নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়। তখন রাজ্যের আইনজীবী জানান, পাঁচ জনকে ইতিমধ্যে নিলম্বিত করা হয়েছে। কোন পাঁচ জনকে নিলম্বিত করা হয়েছে, সেই নামের তালিকাও জানতে চান প্রধান বিচারপতি।
জুনিয়র ডাক্তারদের আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ আদালতে বলেন, “এটা সাধারণ খুন ও ধর্ষণের ঘটনা হিসাবে দেখলে ভুল হবে। আমাদের কাছে চার জনের নাম রয়েছে। দু’জনের নাম আমরা সিবিআইকে দিয়েছি। ওই চার জন অকুস্থলে ছিলেন।” পাশাপাশি তদন্তের আওতায় আসা হাসপাতালের সাত জনকে আপাতত সাসপেন্ড (নিলম্বিত) করারও দাবি জানান তিনি। ইন্দিরার যুক্তি, তাঁরা এখনও হাসপাতালে কাজ করছেন এবং তাঁরা প্রভাব খাটাতে পারেন। একই আর্জি জানান জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস-এর আইনজীবী করুণা নন্দীও। তিনি বলেন, “যে হেতু দুর্নীতির তদন্ত করছে সিবিআই, তাই তদন্তের স্বার্থে কয়েক জনকে প্রভাবশালীকে নিলম্বিত করা হোক।”
জনস্বার্থ মামলাকারীর আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি অভিযোগ তোলেন, হাসপাতালে জাল ওষুধের একটি চক্র চলছে। ২০০৩ সালে চন্দন সেন নামে এক চিকিৎসক মারা গিয়েছিকলেন বলেও আদালতে জানান এডুলজি।
রিপোর্ট খতিয়ে দেখে বিচারপতি জানান, চোখে গুরুতর আঘাত লেগেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে। ঘুমন্ত অবস্থায় কী ভাবে এটি হল? যদিও সলিসিটর জেনারেল জানান, চশমা খুলে না রাখার জন্য সেটি হয়েছে।
সিবিআইয়ের তদন্তের স্টেটাস রিপোর্ট খতিয়ে দেখে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ। প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের মন্তব্য, “সিবিআই তদন্তে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। তারা তদন্ত চালিয়ে নিয়ে যাক।”
আইনজীবী মহেশ জেঠমলানী সুপ্রিম কোর্টে জানান, কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে এফআইআর করতে চেয়ে মামলা দায়ের হয়েছে। এই মামলা সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন থাকায় হাই কোর্টে শুনানি হয়নি। ওই বিষয়টি হাই কোর্ট শুনতে পারবে কি না, সে বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের থেকে জানতে চান আইনজীবী।
আরজি করের ঘটনায় তদন্ত প্রক্রিয়া কতদূর এগোল, তা জানতে চায় সুপ্রিম কোর্ট। সিবিআইয়ের থেকে স্টেটাস রিপোর্ট দেখতে চাইলেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়।
নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী আরও জানান, আরজি কর নিয়ে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি বানানো হয়েছে। তাঁর আর্জি, ওই ছবিটি বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হোক। যদিও প্রধান বিচারপতি জানান, ওই ছবিটি বন্ধের নির্দেশ দিতে হলে শুনানির প্রয়োজন রয়েছে। তখন বৃন্দা আবেদন জানান, সমাজমাধ্যমে নজরদারি চালানোর জন্য নোডাল অফিসার নিয়োগ করা হোক। নির্যাতিতার ছবি-সহ তথ্য দেখলে তা মুছে ফেলার জন্য এই নিয়োগের আর্জি জানান তিনি।
নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী বৃন্দা জানান, চিঠি নিয়ে সিবিআই পদক্ষেপ করেছে। নির্যাতিতার ছবি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে বলেও আদালতে জানান তিনি। সে কথায় প্রধান বিচারপতি জানান, “আমরা এই নিয়ে আগেই নির্দেশ দিয়েছি।” সলিসিটর জেনারেল তখন জানান, এটি রাজ্যের দেখা উচিত। নির্দিষ্ট করে কোথায় পোস্ট হচ্ছে সেই বিষয়ে পরিবারের তরফে জানানো হলে বিষয়টি দেখা হবে।
সিবিআইয়ের আইনজীবী তথা সলিসিটর জেনারেল শুনানি পিছিয়ে দেওয়ার আর্জি করেন। প্রধান বিচারপতি জানান, “৫ মিনিট পরে আমরা ফিরে আসেছি।” অন্যদিকে জুনিয়র ডাক্তারদের আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ জানান, তিনি দুটো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলতে চান। এর পরে বিচারপতিরা উঠে যান এবং পাঁচ মিনিট পরে আবার বেঞ্চ বসে।
বিকাল ৪টে ১৫মিনিট নাগাদ আরজি কর মামলাটি শুনানির জন্য ওঠে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে। শুরুতেই সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা অনুরোধ জানান, মঙ্গলবার কিংবা বৃহস্পতিবার শুনানির জন্য।
আরজি কর মামলার শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতির এজলাসে উপস্থিত রয়েছেন রাজ্যের আইনজীবী আস্থা শর্মা। এ ছাড়া আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার, ইন্দিরা জয়সিংহ, করুণা নন্দীরাও রয়েছেন এজলাসে।
দুপুর ২টোয় প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ বসার পর শুরুতে অন্য কিছু মামলার শুনানি চলছে। অল্প কিছু ক্ষণের মধ্যেই আরজি কর মামলা শুনবে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।
দুপুর ২টোয় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বসল। অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই শুরু হবে আরজি কর মামলার শুনানি।
রাজ্যের হয়ে গত শুনানিগুলিতে লড়ছেন আইনজীবী কপিল সিব্বল।
সিবিআইয়ের হয়ে আদালতে লড়বেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা।
নির্যাতিতার পরিবারের হয়ে থাকবেন আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার ও শামিম আহমেদ।
ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের হয়ে লড়বেন আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ।
জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস ওয়েস্ট বেঙ্গলের হয়ে লড়বেন আইনজীবী করুণা নন্দী ও সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়।
ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের হয়ে সওয়াল করেন প্রবীণ আইনজীবী মনিন্দর সিংহ।
দিল্লি মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের হয়ে রয়েছেন আইনজীবী বিজয় হংসরিয়া।
কলকাতা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলাকারী শুভেন্দু অধিকারীর আইনজীবী হিসাবে থাকছেন সিদ্ধার্থ লুথরা ও বাঁশরী স্বরাজ।
অপর জনস্বার্থ মামলাকারী বিজয়কুমার সিঙ্ঘলের হয়ে সওয়াল করবেন আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy