ধর্মতলায় সভামঞ্চে অখিলেশ যাদব। ছবি: ফেসবুক।
অখিলেশ বলেন, ‘‘আমরা, আপনারা নেতিবাচক রাজনীতি করি না। ইতিবাচক রাজনীতি করি। মানুষের জীবনে বদল আসবে শীঘ্রই। মানুষের জন্য আমাদের একজোট হতে হবে। বদল আনতে হবে। কর্মীদের বলতে চাই, আপনাদের নেতা অনেক বড় নেতা। তিনি লড়াই করে নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে এই দলকে এখানে পৌঁছেছেন। আরও দূরে যেতে হবে। আমার বিশ্বাস, আপনারা পাশে থাকবেন। আগামী লড়াইয়ে আমরাও আপনাদের পাশে থাকব।’’ মমতাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তৃতা শেষ করেন অখিলেশ।
অখিলেশ বলেন, ‘‘দিল্লিতে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা মানুষের ভাল চান না। এঁরা অন্যের প্রাণ নেন, কিন্তু দেন না। তা ধরে রাখার জন্য শহিদ ধার নেন। অন্যদের মহাপুরুষকে নিজেদের বলে দাবি করেন। এঁদের গুরুদেব বা নেতাজিও থাকেন না। মহাপুরুষ হতে গেলে মানবিক হতে হবে। এঁরা তা করেন না। যা খুশি তা-ই করতে পারেন। যখন জনতা জেগে ওঠে, এই সব লোকের মিথ্যা প্রচার ধাক্কা খায়। হতাশ হয়ে নিজেদের মধ্যে লড়াই শুরু করেন। দেশ জেগে উঠেছে।’’
অখিলেশ বলেন, ‘‘দিল্লিতে যাঁরা ক্ষমতায় রয়েছেন, তাঁরা লাভের জন্যই সব করেন। ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করেন। বাংলায় বিজেপিকে আপনারা হারিয়ে দিয়েছেন। উত্তরপ্রদেশের মানুষও তা-ই করেছে। এঁরা আসলে দিল্লিতে কিছু দিনের অতিথি। দিল্লিতে সরকারের পতন হবে। দেখব আমরা। আমাদের খুশির দিন আসবে।’’
অখিলেশ বলেন, ‘‘আজ বিপদ অনেক বেশি। সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথা তুলছে। দিল্লিতে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা ষড়যন্ত্র করছেন। আপনাদের মতো মানুষ দিদির পাশে থাকলে, তিনি সব ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করতে পারবেন। কিছু সময়ের জন্য ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হলেও আখেরে হারবেন। যাঁরা মানুষের পক্ষে থাকেন, তাঁদেরই জয় হয়।’’
অখিলেশ বলেন, ‘‘এর আগে নির্বাচনে হাঁটতে পারছিলেন না। পায়ে প্লাস্টার নিয়েই কর্মীদের জন্য লড়েছিলেন। তখন দুটো লাইন বলেছিলাম, এক জন একা লড়ে চলেছেন, জিতে এগিয়ে যাচ্ছেন। কম নেতা রয়েছেন, যাঁরা প্রাণ বাজি রেখে লড়াই করেন এ ভাবে। তাঁর সঙ্গ দিয়েছেন এই বিপুল পরিমাণ কর্মী। এক বার রাজনৈতিক কর্মীরা জোটবদ্ধ হলে, সারা জীবন ওই দলের জন্য লড়াই করেন। এই কর্মীদের ধন্যবাদ দিচ্ছি। শুরুর দিন থেকে এখন পর্যন্ত লড়াই করে চলেছেন, এমন কর্মীদের কুর্নিশ জানাই।’’
অখিলেশ বলেন, ‘‘দিদি কী ভাবে শহিদদের মনে রেখেছেন, তা এই সভা থেকেই প্রমাণিত হয়। এ রকম দলের ভবিষ্যৎ আরও মজবুত হবে।’’
নেত্রীর প্রশংসার মধ্যে দিয়ে বক্তৃতা শুরু করেন অখিলেশ। তিনি বলেন, ‘‘দূর পর্যন্ত দিদির দলের কর্মীরা রয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ যে, এই কর্মসূচিতে আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। দিদি যে ভাবে খুশি হয়ে কর্মীদের সঙ্গে দেখা করছেন— এই যে নেতা এবং কর্মীদের সম্পর্ক— এটাই দলকে মজবুত করে। যে কর্মীরা শহিদ হয়েছেন, তাঁদের স্মরণ করছি আজ। সব দলের ভাগ্যে এ রকম কর্মী মেলে না, যাঁরা প্রাণ দিতে পারেন। দিদির কাছে এ রকম কর্মী রয়েছেন। কর্মীরাই দলের ভিত্তি। যিনি যত বড়ই নেতা হন, তিনি আসলে কর্মীই থাকেন। কর্মীরা ছোট নন, তাঁরাই বড়।’’
মমতার সঙ্গেই সভাস্থলে প্রবেশ করলেন অখিলেশ যাদব। জয়ধ্বনি দিয়ে তাঁদের অভ্যর্থনা জানানো হল মঞ্চে। অখিলেশকে সংবর্ধনা অভিষেকের।
ভোটের পর এক-দেড় মাসের বিরতিতে কী করেছেন, জানিয়ে দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘‘এই এক-দেড় মাস আপনারা আমাকে কোনও দলীয় কর্মসূচিতে দেখেননি। তার কারণ, আমি পর্যালোচনা করছিলাম। সেই পর্যালোচনার ফল আপনারা তিন মাসের মধ্যে দেখতে পাবেন। ’’
মঞ্চে বক্তৃতা করতে উঠলেন নয়াগ্রামের বিধায়ক দুলাল মুর্মু। সাঁওতালি ভাষায় বক্তৃতা করলেন তিনি। তুলে ধরলেন সাঁওতালিদের কথা। এর পর তিনি বলেন, ‘‘মমতা গুলির সামনে দাঁড়িয়ে বারুদ আটকেছেন জঙ্গলমহলে। রক্ত মুছিয়েছেন।’’ তার পর ফের সাঁওতালি ভাষায় বক্তৃতা করেন দুলাল। ‘জয় হিন্দ’ বলে মমতা এবং অভিষেকের নামে জয়ধ্বনি দিয়ে বক্তৃতা শেষ করেন তিনি।
ফিরহাদের পর মঞ্চে উঠলেন বাগদার নতুন নির্বাচিত বিধায়ক মধুপর্ণা ঠাকুর। তিনি বিজেপিকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘নির্বাচনের আগে নারীশক্তি নিয়ে কথা বলেছে। অথচ গত ৭ এপ্রিল বিজেপির সাংসদ শান্তনু ঠাকুর, আমার দাদা, মাঝরাতে আমার বিধবা মা, আমাকে ঘর থেকে বার করে দিয়েছিলেন। সেই জবাব বিজেপি দেয়নি। আপনাদের ক্ষমতা নেই মমতার সামনে দাঁড়ানোর।’’ মাঝে আজানের জন্য বক্তৃতা থামিয়ে দেন মধুপর্ণা। তার পর সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করেন বক্তৃতা।
ফিরহাদ জানান, লড়াই এখনও থামেনি। অভিষেক দিল্লি থেকে দাবিদাওয়া আদায়ের লড়াই করছেন। বাংলার মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আজকের লড়াই দেশ বাঁচানোর লড়াই। দেশকে সাম্প্রদায়িক শক্তি কুরে কুরে খেয়েছে। বাংলায় দোকানের নাম লিখে রাখতে হবে উত্তরপ্রদেশের মতো, ভাবতে পারি? আমরা ভাঙন রুখব। দুর্গাপুজো, ইদ, বড়দিনে সবাই মেতে যাই। তবু লড়াই করতে হবে।’’ ফিরহাদ বলেন, ‘‘মমতাকে বলব তুমি লড়াই করো। তৃণমূলের কর্মীরা তোমার সঙ্গে রয়েছে। বাংলায় হিন্দু, মুসলিম, শিখ, সাই, আমরা ভাই ভাই। ভারতকে বোঝাতে হবে, পথ দেখাচ্ছে বাংলা। মমতার রাস্তাই ভারতের মুক্তির রাস্তা।সেই পথ ধরে এগিয়ে যাবে ভারতবাসী। সাম্প্রদায়িকতার অন্ধকার দূর করবই। লড়াই লড়াই লড়াই চাই।’’
জগদীশের পর মঞ্চে উঠলেন ফিরহাদ হাকিম। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক, রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সুব্রত, অরূপ, কল্যাণ, ইউসুফ, কীর্তি-সহ সাংসদদের নাম নিয়ে সম্ভাষণ করেন। তার পর বক্তৃতা শুরু করেন ফিরহাদ। তিনি বলেন, ‘‘সুব্রত সবটাই বলেছেন। তৃণমূল অনেক রক্ত ঝরিয়ে বাংলাকে সিপিএম-মুক্ত করেছে। এই দল অভিলাষের বস্তু না। বিলাসের বস্তু না। এই দল নিজেকে জাহির করার বস্তু না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে যিনি দাঁড়াবেন, এটা তাঁর দল। মানুষের পাশে থেকে মানুষের সেবা করতে শিখিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’ এর পর তিনি মমতার ২৬ দিনের অনশনের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। হাজরা মোড়, গার্ডেন রিচে মমতার উপর হামলার কথাও তোলেন তিনি। বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামেও মমতাকে খুনের চেষ্টা হয়েছে। কী ভাবে অত্যাচার হয়েছিল বাংলার মানুষের উপর। মমতা ত্রাতা হয়ে এসেছেন। আজ শপথ নিতে হবে। বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়ামে শহিদদের স্মৃতিতে তৈরি সৌধে সম্মান জানিয়ে এসেছি। শহিদের রক্ত হয় নাকো ব্যর্থ।’’
সুব্রতের পর কোচবিহারের সদ্যনির্বাচিত সাংসদ জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়া বক্তৃতা করেন। তাঁর নাম ঘোষণা করেন অরূপ। তিনি বলেন, ‘‘আজ ঐতিহাসিক দিন। আমরা বাস, ট্রেনে করে এখানে এসে জড়ো হয়েছি। ২০১৪ সাল থেকে একটা রাজনৈতিক দল সরল মানুষগুলির মাথায় কাঁঠাল ভেঙে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করেছে। পদ্মফুলে ভোট দিয়েছি। কী পেয়েছি? প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, আলাদা রাজ্য করবে, চা বাগান খুলে দেবে, পঞ্চানন বর্মার স্মৃতিসৌধ হবে। বড় বড় কথা বলে কাজ করেনি তারা। তাই এ বার কোচবিহারের মানুষ ভুল করেনি। দিদির প্রার্থী হিসাবে আমাকে জোড়া ফুল চিহ্নে জিতিয়েছেন। দিদিই পারবেন দাবি পূরণ করতে। সরল মানুষের মাথায় কাঁঠাল ভাঙল। দিদি কোচবিহারে মেডিক্যাল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, পঞ্চানন বর্মার মূর্তি করে দিয়েছেন। আমাদের জন্য যা কাজ করা হয়েছে, তৃণমূল করেছে। সে কারণেই আমাকে সাংসদ করেছে। তাই দায়িত্ব আমার বেড়ে গিয়েছে। উত্তরবঙ্গে যত বিধানসভা আসন রয়েছে, ২০২৬ সালকে মাথায় রেখে জোটবদ্ধ হতে হবে। বিজেপি কর্মের নামে নয়, ধর্মের নামে ভোট চায়। উত্তরবঙ্গের মানুষ ১০০ দিনের কাজের টাকা পায় না। নেত্রী, নেতা আমাদের জন্য দিল্লি গিয়ে লড়াই করেছেন। তার পরেও কেন্দ্র টাকা দেয়নি। ভোটের আগে দিদি টাকা মিটিয়ে দিয়েছে। যত দিন রাজ্যের সব আসনে জোড়া ফুল না ফুটবে, তত দিন আমাদের লড়াই থামবে না।’’ তিনি নাম না করে নিশীথ প্রামাণিককেও একহাত নিয়েছেন।
সুব্রত বলেন, ‘‘ বিনা প্ররোচনায় আমাদের ১৩ জন শহিদ হয়েছিলেন সে দিন। আমরা বলি শহিদের রক্ত হবে নাকো ব্যর্থ। ব্যর্থ হয়নি। ভারতের সরকার নীতিগত ভাবে সচিত্র পরিচয়পত্রের কথা মেনে নেন। ১৯৯৪ সালের ১ জুলাই থেকে ধাপে ধাপে ৯৫ কোটি ভোটারের কাছে পৌঁছে যায় সচিত্র পরিচয়পত্র। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারীর মানুষ যখন ভোট দিতে যান, সঙ্গে থাকে সচিত্র পরিচয়পত্র।’’ এর পর তিনি তৃণমূলের ইতিহাস তুলে ধরেন। জানান, ১৯৯৮ সাল থেকে মমতার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মানুষ লড়াই করছেন। ২০১১ সালে ক্ষমতায় এসেছে সেই দল। সুব্রতের কথায়, ‘‘আজও শহিদ তর্পণ করছেন মমতা। মমতা যা দায়িত্ব দেবেন, তা পালন করে গ্রামে ঘুরে বেড়াব।’’
সুব্রত বলেন, ‘‘প্রথমে ১৪ জুলাই মহাকারণ অভিযানের ডাক দেওয়া হয়। পরে মমতা যখন বাংলার মাটি পরিক্রমা করেন, তখন কিছু বিষয় তিনি উপলব্ধি করেন। তৎকালীন রাজ্যপাল নুরুল হাসান প্রয়াত হন ১২ জুলাই। তাই রাজনৈতিক শিষ্টাচার মেনে মমতা অভিযান করেন ২১ জুলাই। সচিত্র পরিচয়পত্রের দাবি তুলে অভিযান করেন। সিপিএম দাবি করেছিল, মমতা রাইটার্স দখল করতে এসেছিলেন। সে দিন বাংলার মাটিতে নির্বাচন পরিচালনা হত মহাকরণের ঘর থেকে। সে দিন সচিত্র পরিচয়পত্রের দাবিতে জড়ো হন সাধারণ মানুষ। মমতাকে সামনে রেখে মানুষ অধিকার ফিরে পেতে চেয়েছিলেন।’’
সুব্রত জানান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন কংগ্রেসের পতাকা হাতে ধরে। পরবর্তী পর্যায়ে অনেক কর্মসূচি নিয়েছেন। আটের দশকের মাঝামাঝি অবিভক্ত কংগ্রেসের সভানেত্রী হলেন। পরবর্তী পর্যায়ে বাংলার বিভিন্ন জেলায় মমতা পৌঁছলেন। উপলব্ধি করলেন, বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে সিপিএম পেশি, প্রশাসনকে ব্যবহার করে মানুষকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দেয় না।
সভার সভাপতি হিসাবে সুব্রত বক্সীর নাম প্রস্তাব করলেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। সেই দাবি সমর্থন করলেন ফিরহাদ হাকিম। সভা পরিচালনা শুরু করলেন সুব্রত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy