Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Shantanu Banerjee

শান্তনুর বিষয়-আশয় বিস্ময় জাগানোর মতোই! কী কী রয়েছে ইডির নজরে থাকা সেই দীর্ঘ তালিকায়

নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে শান্তনুর নাম জড়ানোর পর থেকেই, নামে-বেনামে তাঁর এবং তাঁর স্ত্রীর একাধিক সম্পত্তির হদিস মিলেছে। ইডির দাবি, একাধিক বাড়ি, রেস্তরাঁ, বাগানবাড়ির মালিক এই শান্তনু।

image of shantanu Banerjee

বিদ্যুৎ দফতরের সাধারণ কর্মী শান্তনু কী ভাবে এত সম্পত্তির মালিক, তাই খতিয়ে দেখছে ইডি। — ফাইল ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা, বলাগড় শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৩ ০৯:১০
Share: Save:

তিনি নাকি ‘চিটিংবাজি’তে বড় দাদা! এ কথা আদালতে দাবি করেছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তদন্তে নেমে তাঁর সম্পত্তির খতিয়ান নিতে গিয়ে খাবি খেতে হয়েছে ইডিকে। আধিকারিকদের প্রায় গোটা দিন কেটে যাচ্ছে তাঁর বিষয়-আশয়ে তল্লাশি চালাতে। ঠিক কত সম্পত্তি রয়েছে শান্তনুর? তাঁকে হেফাজতে চেয়ে যে রিমান্ড কপি আদালতে পেশ করেছিল ইডি, তাতে তাঁর রেস্তরাঁ আর অংশীদারি সংস্থার কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে তদন্তকারীদের একাংশ বলছে, এ আসলে হিমশৈলের চূড়া মাত্র। বিদ্যুৎ দফতরের সাধারণ কর্মী শান্তনুর সম্পত্তির পরিমাণ এর কয়েক গুণ।

নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে শান্তনুর নাম জড়ানোর পর থেকেই, নামে-বেনামে তাঁর এবং তাঁর স্ত্রীর একাধিক সম্পত্তির হদিস মিলেছে। ইডির দাবি, একাধিক বাড়ি, রেস্তরাঁ, বিলাসবহুল বাগানবাড়ির মালিক এই শান্তনু। রয়েছে হোমস্টে। ইডি সূত্রে খবর, জিরাটে ‘দ্য স্পুন নামে’ একটি রেস্তরাঁ রয়েছে। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্ভবত এই রেস্তরাঁকে কেন্দ্র করেই একদা ‘ঘনিষ্ঠ’ নিলয় মালিকের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছিল শান্তনুর। শনিবার এই নিলয়কে জেরা করেছে ইডি। ইডির জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রিসর্ট থেকে বেরোনোর সময় নিলয় দাবি করেন, শান্তনুর সঙ্গে অতীতে তাঁর সুসম্পর্ক থাকলেও গত দেড় বছর ধরে তিক্ততা তৈরি হয়েছে। কারণ, শান্তনুর নিজের একটি ধাবা রয়েছে। নিলয়ও একটি ধাবা খুলেছেন। এ নিয়ে রেষারেষিতে তাঁদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলে দাবি নিলয়ের। জিরাটের সেই ধাবা নিয়েই রেষারেষি কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়।

ইডি সূত্রে খবর, ওই ধাবার বিপরীতে অসম লিঙ্ক রোডের পাশে ‘ইচ্ছে ডানা’ নামে একটি হোম স্টেও রয়েছে শান্তনুর। বলাগড় চাঁদড়ায় গঙ্গার পারে রয়েছে রিসর্ট। রিসর্টের চারপাশে প্রায় দু’বিঘা জমি পাঁচিল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, ১০০ দিনের কাজের টাকাতেই পাঁচিল তোলার কাজ করানো হয়েছে। শনিবার সেই রিসর্টে তল্লাশি চালিয়েছে ইডি। খাতায়কলমে বলাগড়ের চাঁদড়া বটতলা এলাকার ওই রিসর্টের মালিক সুপ্রতিম ঘোষ ওরফে আকাশ। তিনি নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত শান্তনুর ছায়াসঙ্গী। শনিবার সকালে তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে রিসর্টে নিয়ে যান ইডি আধিকারিকেরা। আকাশকে সঙ্গে নিয়েই তাঁরা এলাকা ঘুরে দেখেছেন। রিসর্ট থেকে প্রচুর নথি উদ্ধার হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।

ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, বলাগড় স্টেশন এলাকায় কয়েকটি প্লটও রয়েছে শান্তনুর। ব্যান্ডেল বালির মোড় এলাকায় চার কাঠা জমির উপর একটি দোতলা বাড়িও নাকি কিনেছিলেন তিনি। দাম প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। ওই বাড়ির পাশেই থাকেন প্রবীণ শ্যামল ভট্টাচার্য। তিনি দাবি করেছেন, কালো গাড়িতে চেপে শান্তনুর ওই বাড়িতে দিনে-রাতে লোক যাতায়াত করতেন। শ্যামলের কথায়, ‘‘দিনে এবং রাতে কালো গাড়ি করে লোকজন আসা-যাওয়া করত এই বাড়িতে। তবে গত ৬ মাসে আর কাউকে ওই বাড়িতে আসতে দেখিনি।’’

image of list of wealth of shantanu banerjee

ইডি সূত্রের দাবি, নিয়োগ দুর্নীতিতে কুন্তলের নাম সামনে এলেও কার্যত তাঁর ‘গুরু’ ছিলেন শান্তনু। গ্রাফিক্স: শোভিক দেবনাথ

ইডি সূত্রেই জানা গিয়েছে, চুঁচুড়া জগুদাস পাড়ায় বহুতল আবাসনে দু’টি ১৭০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে শান্তনুর। সেগুলির দাম প্রায় ৫০-৫৫ লক্ষ টাকা। চুঁচুড়া ময়ূরপঙ্খি ঘাট এলাকায় প্রোমোটিং করার জন্য একটি দোতলা বাড়ি এবং দু’কাঠা জমি কিনেছিলেন তিনি। ৮৪ লক্ষ টাকা দিয়ে সেগুলি কিনেছিলেন তিনি। ইডি সূত্রেই জানা গিয়েছে, স্ত্রী প্রিয়াঙ্কার নামে নিলয় মালিকের অংশীদারিত্বে ছেলের নামে ‘ইভান কনট্রেড সংস্থা’ খুলেছিলেন শান্তনু। চন্দননগরে জিটি রোডের ধারে সত্যপিরতলায় ছ’কাঠা জায়গার উপর তৈরি হবে বহুতল। সেই ঠিকাদারি সংস্থাতেও স্ত্রীর নামে বিনিয়োগ করেছিলেন শান্তনু। ৩৩ শতাংশ অংশীদারি রয়েছে প্রিয়াঙ্কার। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন ওই ঠিকাদার সংস্থার বাকি দুই অংশীদার। যদিও শনিবার প্রিয়াঙ্কা সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছে, কিছুটা জানলেও স্বামীর যে এত সম্পত্তি রয়েছে, তা জানতেন না।

চন্দননগর বড় বাজারে ১,৮০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে শান্তনুর, এমনটাই ইডি সূত্রে খবর। এ-ও জানা গিয়েছে, ১০ লক্ষ টাকা দিয়ে বাকি আর দেননি তিনি। ইডির তদন্ত সূত্রেই জানা গিয়েছে, হাওড়া মুন্সিরহাটে বহুতল নির্মাণে বিনিয়োগ করেছিলেন প্রাক্তন যুব তৃণমূল নেতা। এ সব ছাড়াও বলাগড়ের বারুইপাড়ায় পৈতৃক দোতলা বাড়ি রয়েছে শান্তনুর। ইডি তদন্তে জানা গিয়েছে, তাঁর স্ত্রী ‘ক্যানভাস’ নামে একটি বুটিকও চালান।

রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমে বেতন বাবদ শান্তনুর বছরে আয় ৬ লক্ষ টাকা। অথচ সেই তৃণমূল নেতা শান্তনু কোটি-কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক। কী ভাবে, তা নিয়েই তদন্ত চালাচ্ছে ইডি। শুক্রবার শান্তনুর পাশাপাশি, তাঁর স্ত্রী এবং তাঁদের সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত অন্তত ২০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ়’ করা হয়েছে। ইডি সূত্রে খবর, নজরে থাকা অ্যাকাউন্টগুলিতে সব মিলিয়ে ১ কোটি টাকারও বেশি গচ্ছিত রয়েছে। সেই টাকা কোথা থেকে এল, কোথায় গেল, কবে গেল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

ইডি সূত্রের দাবি, নিয়োগ দুর্নীতিতে কুন্তলের নাম সামনে এলেও কার্যত তাঁর ‘গুরু’ ছিলেন শান্তনু। ওই সূত্রের আরও দাবি, কলকাতার ইএম বাইপাস সংলগ্ন একটি ফ্ল্যাট থেকে দুর্নীতির কাজ চলত এবং সেখানেই তাপস গিয়ে কুন্তল এবং শান্তনুর সঙ্গে শলাপরামর্শ করেছিলেন। সাড়ে ১৯ কোটি টাকার লেনদেনও হয়েছিল। ইডির অভিযোগ, চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ‘প্রভাবশালীদের’ কাছে পৌঁছে দিয়েছেন শান্তনু। বাকি টাকা বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করেছেন। শুধুমাত্র প্রাথমিক শিক্ষক নয়, নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রেও শান্তনুর যোগসূত্র আছে বলে মনে করছে ইডি। গত জানুয়ারিতে শান্তনুর বাড়িতে তল্লাশি করে চাকরিপ্রার্থীদের তালিকা-সহ নিয়োগ সংক্রান্ত একাধিক নথি উদ্ধার করেছিলেন তদন্তকারীরা। সেগুলি যাচাই করার পরে নিয়োগ দুর্নীতিতে এই তৃণমূল নেতার যোগসাজশ নিয়ে তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন বলে তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy