Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Scam

দেড় ঘণ্টায় তৈরি তালিকায় নাম প্রধানের বহু আত্মীয়ের

রাজ্যে আমপান এসেছিল গত ২০ মে। যাঁদের বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাঁদের জন্যই ক্ষতিপূরণ বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার।

পাকা বাড়ির কোনও ক্ষতি হয়নি। তবুও আমপানের ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন আরান্ডির তপন ঘোষ (বাঁ দিকে)। ক্ষতিপূরণ মেলেনি। ভাঙা ঘরেই কোনও মতে দিন যাপন করেন আরান্ডির দীপা মাইতি। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

পাকা বাড়ির কোনও ক্ষতি হয়নি। তবুও আমপানের ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন আরান্ডির তপন ঘোষ (বাঁ দিকে)। ক্ষতিপূরণ মেলেনি। ভাঙা ঘরেই কোনও মতে দিন যাপন করেন আরান্ডির দীপা মাইতি। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

পীযূষ নন্দী
আরামবাগ শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২০ ০৫:১৯
Share: Save:

ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির জন্য তাঁর হাতে নাকি মাত্র দেড় ঘণ্টা সময় ছিল!

ওই সময়ের মধ্যে আরামবাগের তৃণমূল পরিচালিত আরান্ডি-১ পঞ্চায়েতের প্রধান সোহরাব হোসেন ৫৫ জনের তালিকা বানিয়েছেন। তাতে তাঁর বোন, ছেলের শ্বশুর-সহ বেশ কিছু আত্মীয়, প্রতিবেশী আর তৃণমূল নেতাদের নাম দেখে আপত্তি তুলেছেন গ্রামবাসী। পঞ্চায়েত সদস্যদের একাংশও ক্ষুব্ধ। তাঁদের দাবি, প্রধানের ওই সব ঘনিষ্ঠদের সকলেরই পাকা বাড়ি রয়েছে। ঝড়ে কারও কোনও ক্ষতি হয়নি। তালিকায় প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত মাত্র পাঁচ-ছ’জনের নাম রয়েছে।

সরব বিরোধীরাও। বিজেপির আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিমান ঘোষের প্রশ্ন, “দেড় ঘণ্টার মধ্যে যদি তালিকা চাওয়াও হয়, তা হলেও কেন প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের সন্ধান না নিয়ে আত্মীয়স্বজনের নামই দিতে হবে?’’ অভিযোগ মানেননি সোহরাব। তাঁর দাবি, ‘‘প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদেরই নাম পাঠানো হয়েছে ব্লকে। আমার আত্মীয় হলে কি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন না?’’

রাজ্যে আমপান এসেছিল গত ২০ মে। যাঁদের বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাঁদের জন্যই ক্ষতিপূরণ বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। আরামবাগ ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আরান্ডি-১ পঞ্চায়েতের ক্ষতিগ্রস্তদের প্রত্যেকের মাসিক আয় দেখানো হয়েছে এক হাজার টাকা করে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ক্ষয়ক্ষতির ঘরে লেখা, ‘দেওয়াল ভেঙেছে’। প্রধানের নিজের গ্রাম সাতমাসা থেকে তালিকায় ১৭ জনের নাম উঠেছে।

আরও পড়ুন: আমপানের ক্ষতিপূরণ তালিকায় ৮০% ভুয়ো নাম, চিঠি দিলেন পাঁচলার প্রধান

সোহরাবের দাবি, “তালিকা পাঠানোর জন্য হাতে দেড় ঘণ্টা ছিল। আমি সমস্ত সদস্যদের বলে দিয়েছিলাম। তাঁরা যে সব নাম পাঠিয়েছিলেন, সেই সব নামই পঞ্চায়েতকর্মীদের তালিকাভুক্ত করে ব্লক অফিসে পাঠিয়ে দিতে বলেছিলাম। ব্লক প্রশাসন তদন্ত না করেই আমার বোন, বেয়াই-সহ মোট ৬ আত্মীয়ের নাম বাদ দিয়েছে বলে শুনছি। এটা ঠিক নয়।” এক পঞ্চায়েত সদস্য দাবি করেছেন, ‘‘কাউকে না-জানিয়েই প্রধান তালিকা করে পাঠিয়েছেন।”

ওই তালিকা নিয়ে ব্লক প্রশাসনের তরফে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গুণধর খাঁড়া। তিনি বলেন, “যাঁরা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত, তাঁরাই টাকা পাবেন। বাকিরা ক্ষতিপূরণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

আরও পড়ুন: তাড়াহুড়োতেই কি ‘ফাঁক’ ক্ষতিপূরণে, চর্চা তৃণমূলে

শুধু আরান্ডি-১ পঞ্চায়েতেই নয়, ভুয়ো তালিকা নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ জারি রয়েছে প্রায় সর্বত্র। শুক্রবার দুপুরে হুগলিরই পান্ডুয়া ব্লকের সিমলাগড়-ভিটাসিন পঞ্চায়েতে তালা দিয়ে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। বিক্ষোভ হয় হরাল-দাসপুর পঞ্চায়েতেও। বৈঁচী থেকে গুড়াপ যাওয়ার রাস্তা ঘণ্টা দু’য়েক অবরোধ করা হয়। চণ্ডীতলা-১

ব্লকের গঙ্গাধরপুর পঞ্চায়েতেও বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়। ওই ব্লকের কুমিরমোড়া এবং চণ্ডীতলা-২ ব্লকের গরলগাছা পঞ্চায়েতে সিপিএম বিক্ষোভ দেখায়।

এ দিন সকালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের শানপুকুর পঞ্চায়েতের কাশীপুর গ্রামের ১২০ নম্বর বুথের সদস্য রেহেনা বিবির বাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখান সাধারণ মানুষ। অভিযোগ, রেহেনার স্বামী লালবাবু সর্দার বেছে বেছে ঘনিষ্ঠ লোকজনদের টাকা পাইয়ে দিয়েছেন। ফলে, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তেরা বঞ্চিত হয়েছেন। লালবাবু অভিযোগ মানেননি। তবে, পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়ার কথা মেনেছেন ওই পঞ্চায়েতের সুপারভাইজার বাবুরালি মোল্লা। তাঁর দাবি, ‘‘ঝড়ে পাঁচিল ভাঙে। তাই ক্ষতিপূরণের তালিকায় স্ত্রীর নাম দিয়েছি।’’

উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ার মধ্য হাড়িয়ার ক্ষতিগ্রস্তেরা বাসিন্দারা বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় তৃণমূল নেতাকর্মীদের বাড়িতে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। ওই এলাকার সক্রিয় তৃণমূল কর্মী তথা হাবড়া পুরসভার অস্থায়ী কর্মী বিশ্বজিৎ মণ্ডল ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছিলেন। তিনি টাকা ফেরত দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ। বিশ্বজিতের দাবি, ‘‘ষড়যন্ত্র করে আমার এবং পরিবারের লোকেদের নাম তালিকায় ঢোকানো হয়েছে।’’

(তথ্য সহায়তা: সুশান্ত সরকার, দীপঙ্কর দে, সামসুল হুদা এবং সীমান্ত মৈত্র)

অন্য বিষয়গুলি:

Scam Cyclone Amphan Cyclone TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy