E-Paper

পড়ার টানে মেয়েদের নমাজঘরে সবাইকে আহ্বান

এ দেশের ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় সত্যিই মিশেছে মাইনান। বছর কুড়ি আগে উচ্চ মাধ্যমিক আবাসিক স্কুল নবাবিয়া মিশনের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে বদলের ছোঁয়া মালুম হয়েছে আশপাশের সমাজজীবনে।

representational image

—প্রতীকী ছবি।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:৫০
Share
Save

ইতিহাসের এক রক্তাক্ত অধ্যায়ে মন্দিরে বসেও কোরানের বাণী শুনিয়েছেন তিনি। দেশের সঙ্কটকালে ‘ঈশ্বর আল্লা তেরো নাম’ মন্ত্রই আঁকড়ে ধরতে শিখিয়েছিলেন মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধী। বাংলার অখ্যাত গাঁয়ে মেয়েদের জন্য নির্দিষ্ট নমাজঘরে বসে স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী পড়ছিল অষ্টম শ্রেণির কাজী আইরোজা খাতুন। বড় হয়ে সাহসী আইপিএস অফিসার হতে চায় সে।

আইরোজা অবশ্য গান্ধীর প্রার্থনাসভার কথা এখনও শোনেনি। সে বলছে, “এখানে নানা রকমের বই রাখা! ইতিহাস, জিকে (সাধারণ জ্ঞান) যা ইচ্ছে, পড়ি…!” তবে আইরোজার স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা সাহানা আফরোজ সস্নেহ প্রশ্রয়ে বলেন, “এই নমাজঘরে কোরানশরিফ, নবিজি হজরত মহম্মদের জীবনীর মতোই রামায়ণ, মহাভারত, রবীন্দ্রনাথ, শেক্সপিয়র— সব ধরনের বই আছে! ইতিহাস, অর্থনীতি, সাহিত্য, বিজ্ঞানের বইও আছে! তবে আরও বই চাই...”

হুগলির আরামবাগের খানাকুলের মাইনান গ্রামে মাস দেড়েক হল মেয়েদের নমাজঘর বা প্রার্থনাকক্ষেই তিলে তিলে গ্রন্থাগারটি গড়ে উঠছে। এলাকাটি আদতে কেক-পাঁউরুটি তৈরিতে চৌকস বেকারি শ্রমিকদের জন্য প্রসিদ্ধ। বাংলা বা বাংলার বাইরেও তাঁদের নামডাক। মাইনানের শিক্ষানুরাগী ব্যবসায়ী সাহিদ আকবরের কয়েক পুরুষের বেকারি কারখানা আছে কলকাতার তালতলায়। মাইনানের অন্য পরিচয় মেলে ধরে তিনি বলছেন, “খানাকুলে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে রাজা রামমোহন রায় জন্মেছিলেন। আমাদের গ্রামের মাটিতে সেই সুগন্ধ মিশে। এ জলহাওয়ায় শিক্ষার প্রসারের পরম্পরাটি ভুললে চলবে না।”

এ দেশের ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় সত্যিই মিশেছে মাইনান। বছর কুড়ি আগে উচ্চ মাধ্যমিক আবাসিক স্কুল নবাবিয়া মিশনের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে বদলের ছোঁয়া মালুম হয়েছে আশপাশের সমাজজীবনে। সেখানে প্রায় হাজারখানেক ছেলেমেয়ে পড়তে আসে গোটা রাজ্য থেকেই। এখান থেকেই ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং, সরকারি চাকরির চৌকাঠ পেরিয়ে অনেকেই আজ প্রতিষ্ঠিত। কাঁথির শুক্রিয়া ইয়াসমিন বা কোচবিহারের সুমাইয়া আখতারেরা অনায়াসে কাচের দেওয়াল ভাঙার স্বপ্ন দেখেন।

স্কুলের কর্ণধার সাহিদ আকবররা উদ্যোগী হয়ে গ্রামের ওই বিশালকায় নমাজঘরটি ধর্ম নির্বিশেষে সব মেয়েদের জন্যই খুলে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “আমাদের স্কুলের মেয়েরা নমাজ পড়ার পরে এত বড় ঘরটা কি এমনি পড়ে থাকবে? গ্রামের সব মেয়েরই খুব পড়াশোনার ইচ্ছে! বই পড়তে সকলেই আসুন।”

অনেকে মনে করছেন, বিদেশের কিছু মসজিদের ধাঁচেই আরামবাগের নমাজঘরটি সবাইকে ডাক দিচ্ছে। মদিনাশরিফে মহানবি হজরত মহম্মদের সমাধিস্থলের পাশেই মসজিদ-এ-নবাবি। সেখানে পাশাপাশি জামাতে লক্ষ লক্ষ মেয়ে, পুরুষে প্রার্থনা করেন। জ্ঞান চর্চার বিপুল বইয়ের ভান্ডারও সেখানে রয়েছে।

কাজী নজরুল ইসলামের পরিবারের আত্মীয় বস্টনে কর্মরত সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার সোফিয়া কাজী আরামবাগের এই নমাজঘরের কথা শুনে বলছেন, “অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর নানা দেশেই মসজিদগুলি ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্র। ৯/১১-র পর থেকে ইসলাম বিদ্বেষ দূর করার মঞ্চ হিসেবেও মসজিদগুলি সবার জন্য দ্বার খুলে রাখছে!”

আরামবাগের স্কুলের শিক্ষিকা তনুশ্রী ভট্টাচার্যের কন্যা দশম শ্রেণির তৃষ্ণাও হস্টেলে থাকে। সে বা অন্য অমুসলিম ছাত্রীরাও নমাজঘরের গ্রন্থাগারে যায়। এ রাজ্যে ধর্মে ধর্মে সাংস্কৃতিক সমন্বয়ের মঞ্চ ‘নো ইয়র নেবর’ও আরামবাগের নমাজঘরটির পাশে দাঁড়িয়েছে। গ্রন্থাগারটির জন্য বই সংগ্রহে বৃহত্তর নাগরিক সমাজকে ডাক দিচ্ছে তারাও।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

library Hooghly

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।