রাঁচা-হাওড়া বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনে ফাঁকা প্রায় আসন.সোমবার সকালে পুরুলিয়া স্টেশনে তোলা। ছবি.ছবি-সুজিত মাহাতো।
শুরুটা হয়েছিল জাঁকজমকের সঙ্গে। সেমি হাইস্পিডের বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের সূচনা ঘিরে পুরুলিয়াবাসীর একাংশেও ভাল উদ্দীপনা চোখে পড়েছিল। তবে ট্রেন চালুর পরে দেখা যাচ্ছে, যাত্রীসংখ্যার নিরিখে পুরুলিয়া থেকে হাওড়াগামী অন্য ট্রেনের তুলনায় বেশ পিছিয়েই রয়েছে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। বেশি ভাড়া এবং সময়েও তেমন সাশ্রয়ী না হওয়ায় এখনও যাত্রীদের মনে ধরেনি বন্দে ভারতের পরিষেবা, মত সংশ্লিষ্ট মহলের।
ভোরে রাঁচী থেকে ছেড়ে সকাল ৭টার কিছু পরে পুরুলিয়া পৌঁছচ্ছে রাঁচী-হাওড়া বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। তার আগে থামছে কোটশিলা স্টেশনে। রেলের বাণিজ্যিক বিভাগের তথ্য বলছে, ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত কোটশিলা থেকে ওই ট্রেনের টিকিট কেটেছেন দু’জন যাত্রী। পুরুলিয়া স্টেশনে দৈনিক গড়ে বন্দে ভারতে সওয়ার হচ্ছেন ৪০-৪৫ জন যাত্রী। রেলের পরিভাষায় যা অনেকটাই কম।
কেন এই অবস্থা? পুরুলিয়া থেকে হাওড়া যাতায়াত করা যাত্রীদের বড় অংশ জানাচ্ছেন, বন্দে ভারতের ভাড়া অনেকটাই বেশি। এসি চেয়ারকারে পুরুলিয়া থেকে হাওড়ার ভাড়া ৯৫৫ টাকা। এগজিকিউটিভ ক্লাসে ১৭৯০ টাকা। সেখানে পুরুলিয়া-হাওড়া এক্সপ্রেসে পুরুলিয়া থেকে হাওড়া এসি চেয়ারকারের ভাড়া ৫২৫ টাকা। রাঁচী-হাওড়া ইন্টারসিটির ক্ষেত্রে তা ৫৩৫ টাকা। শুধু ভাড়ার বড় ফারাকই নয়। যাত্রীদের দাবি, হাইস্পিডের ট্রেন হিসাবে দাবি করা হলেও বাস্তবে বন্দে ভারতের গড় গতি ঘণ্টায় ৬৫ কিলোমিটার। পুরুলিয়া থেকে হাওড়ার ৩৩৭ কিলোমিটার পথ পেরোতে সময় লাগছে পাঁচ ঘণ্টারও বেশি।
পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা, ব্যবসায়ী পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, “কাজের জন্য মাসে আট-ন’বার কলকাতায় যাই। সময় ও ভাড়ার বিচারে পুরুলিয়া এক্সপ্রেসই পছন্দের। সময়ে হাওড়া পৌঁছে কাজ সেরে ফেরা যায়। বন্দে ভারতে সময় কম লাগলে হাজার টাকা ভাড়া গুনে যাতায়াত পোষায়। তা-ও তো হচ্ছে না।” বেসরকারি সংস্থার কর্মী রণজিৎ মিত্র আবার বন্দে ভারতের চেয়ে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বাসে কলকাতা যাওয়ার পক্ষপাতী। তাঁর কথায়, “ভোরে পুরুলিয়া থেকে বেরিয়ে বেলা সাড়ে ১২টায় ধর্মতলা পৌঁছে যাচ্ছি। এত ভাড়া দিয়ে বন্দে ভারতে চড়ব কেন!”
যাত্রীদের একাংশ আরও জানান, সপ্তাহে তিন দিন বন্দে ভারতের ঠিক দু’ঘণ্টা পরে একই রুট দিয়ে যাচ্ছে রাঁচী-হাওড়া ইন্টারসিটি। তার জন্য আশানুরূপ যাত্রী হচ্ছে না বন্দে ভারতে। অনেকে তাই দাবি তুলছেন, বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার বন্দে ভারতের রুট বদল করে পুরুলিয়া, আনাড়া, আদ্রা, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, মেদিনীপুর হয়ে চালানো হোক।
পাড়া ব্লকের বাসিন্দা, কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকা চিকিৎসক কাশীনাথ সেনগুপ্ত বলেন, “সকালের দিকে পুরুলিয়া এক্সপ্রেস ছাড়া হাওড়া যাওয়ার ট্রেন নেই। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন ওই রুট দিয়ে বন্দে ভারত চালালে মনে হয় যাত্রীসংখ্যা বাড়বে।” একই মত বাঁকুড়ার সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকারেরও। তিনিবলেন, “ইতিমধ্যে ওই প্রস্তাব রেলমন্ত্রককে দিয়েছি।”
শুরু থেকে বন্দে ভারত নিয়ে রাজনৈতিক তরজায় জড়িয়েছে তৃণমূল ও বিজেপি। ট্রেনে আশানুরূপ যাত্রী না হওয়া নিয়ে তৃণমূলের কটাক্ষ, বন্দে ভারত চালুর পেছনে নির্বাচনী চমক দেওয়া ছাড়া বিজেপির আর কোনও উদ্দেশ্য যে নেই, তা স্পষ্ট হচ্ছে। দলের জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, “প্যাসেঞ্জার ট্রেনের তকমা বদলে এক্সপ্রেস করে দ্বিগুণ ভাড়া করা হয়েছে। অথচ যাত্রী পরিষেবা তলানিতে ঠেকেছে। এ সব থেকে নজর ঘোরাতে বন্দে ভারত চালু করা হয়েছে।”
বিজেপির রাজ্য নেতা বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর পাল্টা দাবি, পুরুলিয়ার পর্যটন ও ব্যবসা বাড়ানোর লক্ষ্যে এবং অসুস্থ লোকজনেরা যাতে দ্রুত রাঁচী বা কলকাতায় পৌঁছতে পারেন, তার জন্য বন্দে ভারত চালু করেছে রেলমন্ত্রক।
তাঁর কথায়, “তৃণমূলের মতো সস্তার দান-খয়রাতির রাজনীতি করে না বিজেপি। দেশের বিকাশে নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে বন্দে ভারত শুরুকরা-সহ নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে কেন্দ্র সরকার।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy