মইদুল ইসলাম মিদ্যার বাড়িতে ডিওয়াইএফআই নেতা সায়ানদীপ মিত্র, মীনাক্ষী মুখার্জী, অভয় মুখার্জী প্রমুখ। নিজস্ব চিত্র।
নবান্ন অভিযানে পুলিশের ‘মারে’ আহত যুব কর্মী মইদুল ইসলাম মিদ্যার মৃত্যুর ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি ও সরকারি ক্ষতিপূরণের দাবিতে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিল বাম যুব ও ছাত্র সংগঠনগুলি। আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি প্রতিবাদ জানাতে থানা ঘেরাও এবং রেল অবরোধের কর্মসূচিও নিল তারা।
বিধানসভা ভোটের আগে নবান্ন অভিযান এবং মইদুলের মৃত্যুকে হাতিয়ার করে যখন লড়াইয়ের ময়দানে কোমর বাঁধছে বাম ও কংগ্রেস, সেই সময়েই অন্য বিতর্ক উস্কে দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর দাবি, ‘সূক্ষ্ণ রাজনীতি’র অঙ্ক কষেই তৃণমূলের সরকার সিপিএম-কংগ্রেসকে দিয়ে আন্দোলন ‘করাচ্ছে’ এবং তার পরে মৃতের পরিবারকে সাহায্যের কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ওই দাবি উড়িয়ে দিয়ে বিজেপিকেই পাল্টা আক্রমণে গিয়েছে তৃণমূল ও সিপিএম।
মৃত মইদুলের দেহ নিয়ে সোমবার রাতে বাঁকুড়ার কোতুলপুর গিয়েছিলেন বাম যুব সংগঠনের নেতা সায়নদীপ মিত্র, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়েরা। তাঁদের পাশাপাশিই মঙ্গলবার মইদুলের বাড়িতে যান মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, প্রতীক-উর রহমানেরা। কলকাতায় ফিরে এ দিন সন্ধ্যায় তাঁরা ঘোষণা করেছেন কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করার কথা। ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সায়নদীপ বলেন, ‘‘কাজের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের নির্মম আক্রমণে মইদুলকে যে ভাবে প্রাণ হারাতে হল, তা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা শেষ দেখে ছাড়ব! বহু পুলিশকর্মীই আমাদের আন্দোলন, দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল। কিছু পুলিশ আধিকারিক সরকারের চোখে ভাল থাকার জন্য এমন কাণ্ড করছেন!’’ মইদুলের পরিবারের পাশে থাকার জন্য রাজ্য জুড়ে অর্থ সংগ্রহেরও ডাক দিয়েছে বাম যুব ও ছাত্রেরা।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবু এ দিনই মন্তব্য করেছেন, ‘‘ডিওয়াইএফআই কর্মীর মৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক। রাজনীতিতে আন্দোলন, লাঠি নতুন কিছু নয়। আমাদেরও ১৩৫ জন মারা গিয়েছে। তাঁদের খুন করা হয়েছে। কিন্তু তখন কেউ চাকরির কথা বলেননি! আমাদের কর্মীদের দায়িত্ব আমরা নিয়েছি। এখন সিপিএম-কংগ্রেসকে দিয়ে আন্দোলন করানো হচ্ছে। তার লাভ তোলা হচ্ছে। চাকরি দেওয়া হচ্ছে। এর পিছনে একটা সূক্ষ্ম রাজনীতি আছে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘আমি জানি না, তৃণমূলের যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের পরিবারকে চাকরি দেওয়া হয়েছে কি না। এটা স্যালাইন দেওয়ার রাজনীতি! এত দিন শয়ে শয়ে নেতা মারা গেছেন। মুখ্যমন্ত্রীকে কোনও দিন দুঃখপ্রকাশ করতে দেখিনি। এ ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর দুঃখ উথলে উঠল কেন?’’
দিলীপবাবুর এই মন্তব্যের জবাবে যুব সিপিএমের নেতা সায়নদীপ বলেছেন, ‘‘দু’টো দল বা গোষ্ঠীর সংঘর্ষে মৃত্যু আর প্রশাসনিক শক্তির হাতে মৃত্যু কোনও ভাবেই এক নয়। বিজেপির তালিকা নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। কিন্তু তৃণমূলের লোক নিয়ে যাদের টিম চলছে, তাদের মুখে কি এই কথা মানায়? আর গড়াপেটা বলতে গেলে তৃণমূলের নেতাদের বিরুদ্ধে সারদা, নারদ তদন্তের কী হল, তার জবাব বিজেপিকে দিতে হবে!’’ তৃণমূল নেতা ও মন্ত্রী তাপস রায়ের বক্তব্য, ‘‘দিলীপবাবু যত এই ধরনের কথা বলবেন ততই ওঁর দলের রাজনৈতিক মনোভাব স্পষ্ট হবে। কোথায়, কী বলতে হয়, তা জানেন না। অন্ধ মমতা- বিরোধিতা যেমন কংগ্রেস ও বামেদের কানাগলিতে পৌঁছে দিয়েছে ঠিক তেমন শিক্ষা পাবে বিজেপিও।’’
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র পরিষদের সরস্বতী পুজো আয়োজনে গিয়ে এ দিন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্রয় ছাড়া পুলিশ এটা করতে পারে না। হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে মইদুলের সহযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে! আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে বলছি, ইয়োর ডেজ় আর নাম্বার্ড!’’ প্রসঙ্গত, নবান্ন অভিযান ও সোমবারের ঘটনার জেরে বেশ কিছু কঠোর ধারায় মামলা রুজু হয়েছে বাম যুব ও ছাত্র নেতাদের বিরুদ্ধে।
অশোকনাথ বসু, রঞ্জুগোপাল মুখোপাধ্যায়, অলোক বন্দ্যোপাধ্যায়, সিদ্ধার্থ দত্ত, রজত বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বহু প্রাক্তন উপাচার্য ও অধ্যাপক এ দিন বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘এই কলঙ্কজনক ঘটনায় আমরা স্তম্ভিত। রাজ্য প্রশাসনের এই চরম অসহিষ্ণুতা নজিরবিহীন। সমস্ত রকমের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে প্রতিহত করতে তাঁরা যে দমনপীড়নের রাস্তা বেছে নিয়েছেন, তাতে আমরা ক্ষুব্ধ’। ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। বাম যুব ও ছাত্র সংগঠনগুলি জানিয়েছে, থানা ঘেরাও ও বিক্ষোভ চলবে আজ, বুধবারও। কৃষকদের পাশাপাশি কাল, বৃহস্পতিবার তারাও রাজ্যে রেল অবরোধের ডাক দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy