নরেন্দ্র মোদীর কলকাতা সফরের দিন ধর্মতলা চত্বরে বাম ছাত্রছাত্রীদের প্রতিবাদ।—ফাইল চিত্র।
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার হোন বা চন্দ্রশেখর আজাদ। আসফাকউল্লা খান থেকে রাজেন লাহিড়ি বা রওশন সিংহ, গুরবক্স সিংহ ধিলোঁ, এমনকি খান আব্দুল গফ্ফর খানও। কে নেই!
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলনে শোনা যাচ্ছে এঁদের সকলের নাম। ভগৎ সিংহ, সূর্য সেন বা ক্ষুদিরাম বসু আগেই ছিলেন। বাম ছাত্র-যুবদের হাতে ধরা পোস্টারে, প্ল্যাকার্ডে বা পতাকায় এখন উঠে আসছে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের আরও অনেক সৈনিকের নাম, উদ্ধৃতি বা ছায়া-চিহ্ন। সচরাচর আন্তর্জাতিকতাবাদের আদর্শকে সামনে রেখে চলতে অভ্যস্ত বামেদের প্রতিবাদে এত বেশি দেশীয় নায়কদের ছবি অনেককে অবাক করছে বৈকি!
তরুণ প্রজন্মের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদে এ বার দেশের ইতিহাস থেকে অনেক চরিত্র প্রথমে উঠে এসেছে আবেগের সরণি বেয়েই। তরুণদের প্রবণতা ও মনোভাব বুঝে নিয়ে বাম নেতৃত্বও দ্রুত কৌশল বদলেছেন। তাঁরা বুঝেছেন, উগ্র জাতীয়তাবাদের ঝান্ডা হাতে আরএসএস এবং বিজেপি যত বেশি করে প্রতিবাদীদের গায়ে ‘দেশদ্রোহী’র তকমা দেবে, তত বেশি করে দেশজ নায়কদের পরম্পরা আঁকড়েই পাল্টা লড়াই দিতে হবে। সেই ভাবনাতেই এখন সেজে উঠছে আন্দোলনের পথ। জামিয়া মিলিয়া বা জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার প্রতিবাদে দিল্লির রাস্তা হোক, সিএএ-র প্রতিবাদে মুম্বইয়ের আজাদ ময়দান হোক বা প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময়ে ‘গো ব্যাক মোদী’ স্লোগান নিয়ে কলকাতার রাজপথে বিক্ষোভ— সর্বত্র এখন একই ছবি।
দেশীয় নায়কদের এমন পুনরাবিষ্কার কি আন্দোলনে বাড়তি জোর এনে দিচ্ছে? স্বাধীনতার পরে ‘আজ়াদি’ স্লোগানকে নতুন তাৎপর্যে দেশ জুড়ে ফিরিয়ে এনেছেন যিনি, সিপিআইয়ের সেই তরুণ নেতা কানহাইয়া কুমার বলছেন, ‘‘শুধু বামপন্থী নয়, সংবিধান বাঁচাতে এটা আম জনতার আন্দোলন। একটা সরকার দেশের মানুষকে নাগরিক বলে মানতে অস্বীকার করছে এবং মানুষও সেই সরকারের বশ্যতা স্বীকার করতে চাইছেন না। যাঁরা এখন দেশ চালাচ্ছেন এবং কথায় কথায় সকলকে দেশদ্রোহী বলে দাগিয়ে দিচ্ছেন, তাঁদের সঙ্গে স্বাধীনতার লড়াইয়ের কোনও সম্পর্কই ছিল না! এঁরা দেশপ্রেম শেখাতে এলে আমাদের স্বাধীনতার লড়াইয়ের নায়কেরাই তো সেরা হাতিয়ার!’’ এই যুক্তিতেই মার্ক্স, লেনিন বা চে-র চেয়ে বেশি এখন ভগৎ, ক্ষুদিরাম, প্রীতিলতাদের কদর।
‘ইয়ে আজ়াদি ঝুটা হ্যায়’ স্লোগানের জন্য এক কালে কাঠগড়ায় উঠতে হয়েছিল যে কমিউনিস্টদের, তাদেরই তোলা ‘আজ়াদি’র স্লোগান এখন সব প্রতিবাদীর মুখে মুখে! বামফ্রন্ট সরকার এই বাংলায় ক্ষমতায় আসার পরে জ্যোতি বসু স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় পতাকা তোলেননি দীর্ঘ দিন। বিতর্ক ও সমালোচনার মুখে ১৯৮৯ সালে মহাকরণের সামনে প্রথম বার বসুর তেরঙা উত্তোলন। ইতিহাসের মোচড় এমনই যে, এখন সংবিধান রক্ষায় বাম প্রতিবাদের সঙ্গী জাতীয় পতাকাই। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের মতে, ‘‘আপসের স্বাধীনতা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন, আপত্তি অবশ্যই ছিল। আমাদের সঙ্গে বহু বিষয়ে ভিন্ন মত থাকলেও দেশভাগের উপরে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতায় খুশি ছিলেন না গাঁধীজিও। কিন্তু আজকের প্রেক্ষাপটে সেই প্রসঙ্গ তোলা অর্থহীন। দলীয় সভার গণ্ডির বাইরে এখন সে কথা বলছি না, বলবও না।’’
নতুন প্রেক্ষাপটে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বলছেন, ‘‘নাথুরামের উত্তরসূরিদের সঙ্গে ক্ষুদিরামের পরবর্তী প্রজন্মের এটা সরাসরি লড়াই।’’ মতাদর্শ থেকে সংগঠনের ছাঁচ— সবই বিদেশ থেকে আমদানি করা বলে যাদের কটাক্ষ শুনতে হত, তাদের আঙ্গিকেএখন ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy