বামেদের সম্প্রীতি মিছিল। রবিবার। ছবি: কেদারনাথ ঘোষ।
বিভাজনের রাজনীতির প্রতিবাদে এবং সম্প্রীতির ডাক দিয়ে পথে নেমে একই সঙ্গে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসকে নিশানা করলেন বাম নেতৃত্ব। অশান্তির ঘটনা মোকাবিলায় সরকারের কাছে আরও দ্রুত ও কঠোর পদক্ষেপ মানুষ আশা করেন, এই কথাই উঠে এল তাঁদের বক্তব্যে। হুগলিতে রবিবার বাম দলগুলির পদযাত্রায় ভিড় হয়েছিল নজর টানার মতো। ভিড়ের চাপে কয়েক ঘণ্টা কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল জি টি রোডের স্বাভাবিক গতি। বাম নেতৃত্বের অনেকেরই মতে, সাম্প্রতিক কালে হুগলিতে বামেদের মিছিলে এত ভিড় চোখে পড়েনি।
হাওড়ার শিবপুর, হুগলির রিষড়া-সহ রাজ্যের কিছু এলাকায় রামনবমীর অনুষ্ঠানকে ঘিরে অশান্তির ঘটনার প্রেক্ষিতে শান্তি ও সম্প্রীতির ডাক দিয়ে পদযাত্রার কর্মসূচি নিয়েছে বাম দলগুলি। হুগলির পরে আজ, সোমবার পদযাত্রা হবে বালিখাল থেকে হাওড়ার শিবপুর ট্রাম ডিপো পর্যন্ত। কোন্নগরের বাগখাল থেকে এ দিন পদযাত্রা শুরুর কর্মসূচি থাকলেও রিষড়া সংলগ্ন হওয়ায় সেখান থেকে এগিয়ে এসে বাটার মোড় থেকে মিছিল শুরু করেন বাম নেতৃত্ব, শেষ হয় উত্তরপাড়ায়। বামফ্রন্টের শরিক সিপিএম, ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি, সিপিআই ছাড়াও সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন, এসইউসি-র মতো দলও পদযাত্রার শরিক ছিল। পথের দু’ধারে ভিড় করেছিলেন অনেকে। মিছিলে ছিলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, শ্রীদাপ ভট্টাচার্য, ফ ব-র সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, এসইউসি-র অমিতাভ চট্টোপাধ্যায়, লিবারেশনের কার্তিক পাল প্রমুখ। রোদ ও প্রবল গরমে অশীতিপর বিমানবাবু অবশ্য পুরো পথ হাঁটেননি, মাঝে তিনি একটি হুডখোলা জিপে উঠে যান। পরে বিমানবাবুর মন্তব্য, ‘‘পুরো মিছিলটা হাঁটিনি। আমি ঘড়ি দেখেছি, ৩৪ মিনিট পরে রিটায়ার করেছি! পিছনে একটা গাড়িতে উঠেছিলাম।’’ তবে সেই সঙ্গেই তাঁর সংযোজন, ‘‘হুগলির মিছিল দেখে আমি অভিভূত! এই জেলায় এই রকম মিছিল আগে দেখিনি।’’
উত্তরপাড়ায় সমাবেশে বিমানবাবু স্মরণ করিয়ে দেন, রাজ্যে দ্বিতীয় যুক্তফ্রন্ট সরকারের সময়ে হুগলির তেলিনীপাড়ায় অশান্তির খবর পেয়ে মাঝরাতে সেখানে পৌঁছেছিলেন তৎকালীন উপ-মুখ্যমন্ত্রী ও পুলিশমন্ত্রী জ্যোতি বসু। অশান্তি করেত আসা লোকজনকে দেখলেই গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন পুলিশ সুপারকে। বিমানবাবুর কথায়, ‘‘অশান্তি সৃষ্টিকারীদের কোনও ধর্ম হয় না। তাদের কড়া হাতেই মোকাবিলা করা উচিত।’’ তাঁর প্রশ্ন, বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, অশান্তি তৈরির পরিকল্পনা ছিল, তিনি জানতেন। তা হলে অশান্তি রুখতে আগেই কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হল না কেন? রাজ্যে কর্মসংস্থানের দুরবস্থার অভিযোগ তুলে সেলিম বলেন, ‘‘গোটা বাংলা চোর-জোচ্চোরদের বিরুদ্ধে লড়তে চায়। তাই বর্তমান প্রজন্মের হাতে অস্ত্র ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। রাজ্য ও কেন্দ্রের শাসক দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে, কে কত বড় রামভক্ত, হনুমানভক্ত!’’
তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ অবশ্য কটাক্ষ করেছেন, ‘‘সিপিএম শান্ত শহরে শান্তি মিছিল করে আর ফিরে গিয়ে বাড়ির বুথে বিজেপিকে ভোট দেয়। তৃণমূল বিভাজনের রাজনীতি করে না। বামেরা ভোট দিয়ে বিজেপিকে শক্তিশালী করছে। আগে নিজেদের ভোটটা ফেরাক, তার পরে বড় বড় কথা বলবে!’’ আর রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘সিপিএম সমর্থকেরা এখনও ভাবেন, দল তৃণমূল-বিরোধী তাই তাদের মিছিলে ভিড় হয়। অর্থনৈতিক নীতি, কৃষক-ক্ষেতমজুর সমাজের কথা, শ্রমিক আন্দোলন ছেড়ে সিপিএম এখন ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy