শুক্রবার জখম হওয়ার পর মইদুল। —ফাইল চিত্র।
নবান্ন অভিযানে অংশ নেওয়া বাম সমর্থকের মৃত্যু হল কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। বাম শিবিরের অভিযোগ, পুলিশের লাঠি পেটায় জখম হয়েছিলেন বাঁকুড়ার কোতুলপুরের বাসিন্দা মইদুল ইসলাম মিদ্যা নামে ওই বাম কর্মী। সোমবার তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
বাম নেতাদের দাবি, গত ১২ ফেব্রুয়ারি বাম এবং কংগ্রেসের ছাত্র-যুব সংগঠনের ডাকা ‘নবান্ন অভিযান’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন মইদুল। সে সময় ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ে তাঁকে পুলিশ লাঠিপেটা করে বলে অভিযোগ। জখম অবস্থায় তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল মধ্য কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পুলিশের লাঠিপেটায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন মইদুল। রবিবার রাতে মইদুলের শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় তাঁকে অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সোমবার সকালে মারা যান তিনি। এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ করারও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।’’
এই ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তুলছেন বামনেতারা। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘‘মইদুল শহিদ হয়েছেন। তাঁকে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছে। ছাত্র-যুবরা যে পদক্ষেপ করবেন আমরা তাতেই পাশে থাকব।’’ সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ছাত্র-যুবদের বিরুদ্ধে সরকারের এমন আক্রমণ আগে কখনও ঘটেনি। গত ১২ ফেব্রুয়ারি চারদিক থেকে রাস্তা আটকে ছাত্র-যুবদের উপর আক্রমণ করা হয়েছে। আইনি ব্যবস্থা পরের কথা। এ তো জীবন্ত মানুষকে লাশ বানাচ্ছে সরকার।’’
কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘এই ঘটনায় আমরা শোকসন্তপ্ত। জনগণের দাবি নিয়ে সরকারের কাছে প্রতিকার চাইতে গিয়েছিলেন ছাত্র-যুবরা। কিন্তু মইদুলের মাথায় নির্মম ভাবে লাঠির আঘাত করেছিল পুলিশ। পুলিশি অত্যাচারের বলি হলেন মইদুল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী বলবেন? তিনিও তো গণ আন্দোলন করেছিলেন। এ ভাবে প্রতিবাদের ভাষা স্তব্ধ করা যাবে না।’’
কোতুলপুরের শিহর-গোপীনাথপুর অঞ্চলের চোরকলা এলাকার বাসিন্দা মইদুল। তিনি পেশায় অটোচালক। তাঁর বাড়িতে মা, স্ত্রী এবং দুই মেয়ে রয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরেই ডিওয়াইএফআই-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মইদুল। ‘নবান্ন অভিযান’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে গত ১১ ফেব্রুয়ারি কোতুলপুর থেকে কলকাতা পৌঁছন মইদুল। মইদুলের মৃত্যুকে সামনে রেখে রাজ্যজুড়ে আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা করছে সিপিএমের যুবসংগঠনটি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মইদুলের দেহের ময়নাতদন্ত করা হবে। তাঁর মৃত্যু কী কারণে হল তা খতিয়ে দেখতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গোটা ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়ার ভিডিয়োগ্রাফিও করা হবে বলে কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। এর আগে ২০১৩ সালে পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন মৃত্যু হয় এসএফআই নেতা সুদীপ্ত গুপ্তের। গড়িয়ার ওই ছাত্র নেতার মৃত্যুতে সে সময় শোরগোল পড়ে যায়। সেই ঘটনা এখনও বিচারাধীন।
মইদুলের মৃত্যুর প্রতিবাদে সোমবার এবং মঙ্গলবার রাজ্য জুড়ে থানা ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দিয়েছে ১০টি বাম ছাত্র যুব সংগঠন। সোমবার মহম্মদ আলি পার্কের কাছে পুলিশ মর্গে জমায়েত করেন বাম ছাত্র যুব সংগঠনের সদস্যরা। সেখানেই ময়নাতদন্ত হওয়ার কথা। বিক্ষোভ দেখান ছাত্র-যুবরা। আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা পুলিশি প্রক্রিয়ার উপর ভরসা করতে পারছি না। পরিবারের লোকজন এবং আইনি প্রতিনিধি উপস্থিত থাকা প্রয়োজন। প্রমাণ লোপাট করা হতে পারে। লাঠি চালানোর জন্য ৪ হাজার পুলিশ কর্মীকে সাসপেন্ড করা উচিত ছিল। মানবাধিকার কমিশনেরও উচিত ছিল পদক্ষেপ করা। কিন্তু এ রাজ্যে মানবাধিকার কমিশন উঠে গিয়েছে। নিরস্ত্রদের উপর কী ভাবে পুলিশ লাঠি চালাল, তা নিয়ে আমরা সার্বিক তদন্ত দাবি করছি।’’ মইদুলের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট খতিয়ে দেখার পর কলকাতা হাইকোর্টে মামলার চিন্তাভাবনাও করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy