ডিএম অফিসে মিছিল করে ঢুকছেন তৃণমূল সমর্থিত কর্মচারি সংগঠন।
আন্দাজ করাই গিয়েছিল, সর্বস্তরে তৃণমূলের দখলে থাকা নদিয়ায় বামেদের ডাকা হরতাল তেমন অনুভূত হবে না। কিন্তু পড়শি জেলা মুর্শিদাবাদে নিচুতলায় বাম ও কংগ্রেসের কতটা প্রভাব রয়েছে, তা বুঝে নেওয়ার দিন ছিল সোমবার।
এবং যে ছবি উঠে এল, তাতে প্রায় স্পষ্ট যে কংগ্রেসের যত নেতা আনুগত্য বদলে শাসকদলে গিয়েছেন, সাধারণ কর্মী-সমর্থ়কেরা যে তত গা ভাসিয়ে দেননি। মুর্শিদাবাদে জেলা পরিষদ থেকে শুরু করে অধিকাংশ পঞ্চায়েত ও পুরসভায় সদস্যদের দল ভাঙিয়ে বোর্ড দখল করে নিয়েছে তৃণমূল। কিন্তু তাতে বামেদের ডাকা এবং কংগ্রেসের প্রচ্ছন্ন সমর্থন পাওয়া হরতাল যে ভাবে ‘ব্যর্থ’ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল, তা মোটেই হয়নি। বরং বেশ ভাল মতো অনুভূত হয়েছে।
মজার ব্যাপার, যাঁরা হরতাল ডেকেছিল, সেই বামেরা কিন্তু এ দিন পথে নামেনি। বাধা দিতে নামেনি বিজেপিও। পূর্বঘোষিত ‘আক্রোশ দিবস’ পালন করতে বরং রাস্তায় ছিল কংগ্রেস। পাশাপাশি, তৃণমূলও পালন করে ‘জনবিদ্রোহ দিবস’। বহরমপুরে টেক্সটাইল কলেজ মোড়ে শ’চারেক কর্মী নিয়ে সভা করে কংগ্রেস, কিন্তু মিছিল করেনি। স্কুল-কলেজ খোলা ছিল। ছাত্রছাত্রীরা পূর্ব নির্ধারিত সূচি মেনে পরীক্ষা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক ভবন থেকে শুরু করে মহকুমাশাসকের কার্যালয়, বিডিও-র কার্যালয়, রেজিষ্ট্রি অফিস, ভূমি দফতর, খাদ্য সরবরাহ কার্যালয় পর্যন্ত সবই খোলা ছিল। জেলা প্রশাসনের মতে, হাজিরা ছিল শতকরা ৯৯ ভাগ। নদিয়াতেও তা-ই।
বন্ধের সমর্থনে বামেদের মিছিল।
দুই জেলায় সকাল থেকেই চলেছে সরকারি বাস, ট্রাক, ট্রেকার, টুকটুক চলেছে। তবে মুর্শিদাবাদে বেসরকারি বাস খুব কম ছিল। করিমপুর থেকে বহরমপুরের রুটে বেসরকারি বাস ও দূরপাল্লার কোন বাস চলাচল করেনি। বাস মালিক সংগঠনের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক তপন অধিকারী বলেন, ‘‘নোট বাতিলে পরিবহণ ব্যবসা লাটে উঠেছে। তা ছাড়া বন্ধের দিন রাস্তায় বাস নামিয়ে অশান্তিতে পড়তে চান না পরিবহণ শ্রমিকেরা।’’
বহরমপুরে সব ক’টি সব্জি বাজার বসেছে, তবে নিত্যদিনের জায়গা থেকে খানিকটা দূরে। জামাকাপড়, মনোহারি, লোহা-লক্কড়, আসবাবের দোকান আংশিক বন্ধ ছিল। নদিয়ায় অবশ্য কৃষ্ণনগর-সহ প্রায় সর্বত্র জনজীবন স্বাভাবিক ছিল। নানা রুটে চলেছে বেসরকারি বাস। তবে অন্য দিনের তুলনায় যাত্রী কম ছিল। জেলা জুড়েই বেশির ভাগ দোকান-বাজার খোলা ছিল। দুই জেলাতেই বন্ধের জেরে কপাল খুলেছে ছোট গাড়ির। বেসরকারি কম দূরত্বের বাস বেশি না চলায় ছোট গাড়ি আর টোটো যাত্রী নিয়ে ছুটে বেরিয়েছে সারা দিন।
নদিয়ায় যে বামেরা কতটা ছন্নছাড়া তা এ দিন প্রকট হয়ে গিয়েছে। সকাল ৯টায় কৃষ্ণনগর পোস্ট অফিস মোড় থেকে বনধের সমর্থনে মিছিল বের হওয়ার কথা ছিল। সিপিএম এবং অন্য বাম দলগুলির জেলা নেতারা চলে এলেও দেখা মেলেনি সাধারণ কর্মীদের। শেষমেশ জনা কয়েক লোক নিয়ে ছোট মিছিল বের করেন তাঁরা। করিমপুরেও ছোট মিছিল হয়। রাস্তায় নামে তৃণমূলও। মোটরবাইক মিছিল করে করিমপুর ১ ব্লক টিএমসিপি।
বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়েনি রানাঘাট বা চাকদহেও। মদনপুর ও চাকদহে সব্জি হাটে ভোর থেকেই ভিড় ছিল। মদনপুরের হাটে এসে সব্জি বিক্রেতা নিরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, “ভেবেছিলাম অনেকে আসবে না। কিন্তু পরিচিত সবাই এসেছে দেখছি।” বেসরকারি বাস তেমন না থাকলেও রানাঘাট বাসস্ট্যান্ড থেকে উত্তরবঙ্গের বাস যথারীতি চলাচল করেছে। রানাঘাটে এটা সাপ্তাহিক বন্ধের দিন হওয়ায় অধিকাংশ দোকান অবশ্য বন্ধই ছিল।
হরতালের বিশেষ প্রভাব পড়েনি কান্দিতেও। বাজার পুরো খোলা ছিল। বড়ঞা, খড়গ্রাম, কান্দি , ভরতপুর ১ ও ২ নম্বর মোট পাঁচটি ব্লকের বাজারে একই ছবি। কান্দি শহরের বাসস্ট্যান্ড বাজার থেকে জেমো বাজার, লিচুতলা বাজার থেকে কাঁঠালতলা বাজার— সর্বত্রই ছিল ক্রেতাদের ভিড়। ব্যবসায়ী মহলের দাবি, কান্দি বাজারে দিনে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকার লেনদেন হয়। টাকা বাতিলের ধাক্কায় এখন তা অর্ধেকেরও কম হচ্ছে। এর উপরে হরতাল করে ক্ষতির বহর আর বাড়াতে চাননি তাঁরা। কান্দি বাজারে নবান্নের বাজার করতে এসে দেবলীনা দাস বলেন, “বাজারে আসতে ভয় পাচ্ছিলাম। কিন্তু ভাল ভাবেই বাজার করতে পেরেছি।” ছবিগুলি তুলেছেন সুদীপ ভট্টাচার্য ও কল্লোল প্রামাণিক
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy