রামলীলা ময়দান থেকে পার্ক সার্কাস পর্যন্ত বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের মহামিছিল। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
সাগরদিঘি উপনির্বাচনে সাফল্যের পরে আবার রাস্তা মিলে গেল বাম ও কংগ্রেসের। মুখ্যমন্ত্রী মমমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে দিন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রাজপথে ধর্নায় বসেছেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শহিদ মিনার ময়দানে সমাবেশ করছেন, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি শ্যামবাজারে পাল্টা ধর্না দিচ্ছে, সে দিনই শহরের অন্য দিকে একসঙ্গে পথে নামলেন বাম ও কংগ্রেসের রাজ্য নেতৃত্ব। গত ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরে দু’দলের কেন্দ্রীয় ভাবে যৌথ কর্মসূচি এই প্রথম। কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের পাওনা আদায়ের দাবি, বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির প্রতিবাদের পাশাপাশি যৌথ মঞ্চ থেকে উঠল রাহুল গান্ধীর সাংসদ-পদ খারিজের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধ স্বরও।
একশো দিনের কাজ-সহ বিভিন্ন ‘জনস্বার্থে’র প্রকল্পে কেন্দ্রের কাছে বকেয়া মেটানোর দাবি এবং নানা প্রকল্পে রাজ্য সরকার তথা শাসক দলের ‘লুট ও বেনিয়মে’র প্রতিবাদে বুধবার কেন্দ্রীয় মিছিলের ডাক দিয়েছিল বামফ্রন্ট। রাহুল সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ এবং আদানি-কাণ্ডের তদন্তের দাবিতে এ দিন আলাদা মিছিলের কর্মসূচি ছিল কংগ্রেসেরও। যে মিছিল শুরু হওয়ার কথা ছিল প্রদেশ কংগ্রেসের সদর দফতর বিধান ভবন থেকে। আর বামেদের মিছিলের আগে জমায়েত ছিল বিধান ভবনেরই কার্যত উল্টো দিকে রামলীলা পার্কে। সূত্রের খবর, বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু মঙ্গলবার ফোনে যোগাযোগ করেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্যের সঙ্গে। তাঁর অনুরোধ ছিল, কর্মসূচি যখন কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বঞ্চনা এবং রাজ্যে তৃণমূল সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে, সেখানে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এবং প্রদীপবাবুরা উপস্থিত থাকলে ভাল বার্তা যেতে পারে। প্রদেশ সভাপতির সঙ্গে কথা বলে প্রদীপবাবু জানিয়ে দেন, প্রস্তাবে তাঁরা রাজি। তবে দিল্লিতে সংসদে হাজির থাকার দলীয় নির্দেশ থাকায় অধীর বা প্রদীপবাবু কলকাতার কর্মসূচিতে থাকতে পারছেন না। এই আলোচনার ফলস্বরূপ এ দিন কংগ্রেস তাদের দলীয় মিছিলের যাবতীয় প্রস্তুতি যৌথ কর্মসূচির জন্যই কাজে লাগিয়েছে। যৌথ মিছিলে ভিড় হয়েছিল চোখে পড়ার মতোই।
এন্টালি থেকে শুরু হয়ে আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু রোড ধরে মল্লিকবাজার হয়ে পার্ক সার্কাস পেরিয়ে লেডি ব্র্যাবোর্ন কলেজের সামনে গিয়ে যে মিছিল শেষ হয়, তাতে একসঙ্গেই শামিল হয়েছিলেন বিমানবাবু, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র, কংগ্রেসের অসিত মিত্র, শুভঙ্কর সরকার, মহম্মদ মোক্তার, আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়েরা। বাম শরিক দলের স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, নরেন চট্টোপাধ্যায়, মনোজ ভট্টাচার্য, সুভাষ নস্করের পাশাপাশি পথে ছিলেন কংগ্রেসের কৌস্তভ বাগচী, সুমন পাল, শাদাব খান, তাপস মজুমদার, তুলসী মুখোপাধ্যায়, তপন আগরওয়াল প্রমুখ। মিছিল শেষে ম্যাটাডোর-মঞ্চে বিমানবাবু বলেন, ‘‘অনেকে বলছেন, পঞ্চায়েত ভোটের কথা ভেবেই কি যৌথ কর্মসূচি? আমরা বলছি, শুধু পঞ্চায়েত নয়, সব ধরনের জনপ্রতিনিধি নির্বাচনেই বিজেপি এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে আমরা সব শক্তিকে একসঙ্গে নিয়ে লড়তে চাই। এই কর্মসূচিও অভিন্ন লক্ষ্যে ছিল বলে কংগ্রেস যোগ দিয়েছে।’’ নিম্ন আদালতের নির্দেশের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাহুলের সাংসদ-পদ খারিজ এবং তাঁকে বাংলো ছাড়ার নোটিস পাঠানো ‘ভয়ঙ্কর ইঙ্গিত’ বলেও মন্তব্য করেছেন বিমানবাবু। কংগ্রেসের অসিতবাবু ওই মঞ্চ থেকেই বলেছেন, ‘‘বিধানসভার মধ্যে আমাদের এবং বামফ্রন্টের অস্তিত্ব প্রায় নেই ঠিকই। কিন্তু বাইরে স্বৈরাচার, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা একসঙ্গেই লড়ব।’’
রাজ্যে নিয়োগ-দুর্নীতি নিয়েও এ দিনের মিছিলে মুহুর্মুহু স্লোগান উঠেছে। সেলিম বলেছেন, ‘‘রান্নার গ্যাস থেকে ওষুধের দাম যেখানে গিয়েছে, মানুষের জীবন দুর্বিষহ। মোদী দেশকে এবং দিদি রাজ্যকে লুটছেন!’’ বিমানবাবুর কথায়, ‘‘আমি এত বছরের রাজনৈতিক জীবনে কখনও টাকার পাহাড় দেখিনি। এখন দেখছি টিভিতে এবং কাগজে!’’ রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ অবশ্য কটাক্ষ করেছেন, ‘‘কর্মসূচি যে কেউ নিতেই পারে। তবে কংগ্রেসের কাছে প্রশ্ন থাকল, ২১শে জুলাই, সাঁইবাড়ি হত্যা-সহ সিপিএম জমানার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জেলায় জেলায় তারা যে সব কর্মসূচি করত, সে সব কি এখন হিমঘরে পাঠানো থাকবে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy