বছরে ২০০ দিন কাজ, দৈনিক ৬০০ টাকা মজুরি, সমকাজে সমবেতন-সহ একাধিক দাবিতে সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের মিছিল ধর্মতলায়। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
নানা প্রকল্পে ‘চুরি’ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তার জন্য রাজ্যের মানুষকে শাস্তি দিচ্ছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার! এই অভিযোগ তুলে দুই সরকারের বিরুদ্ধেই লড়াইয়ের ডাক উঠে এল সিপিএমের ক্ষেতমুজর সমাবেশ থেকে। পাশাপাশিই, ১০০ দিনের কাজের দাবিতে রাজনৈতিক লড়াইয়ের সঙ্গে সঙ্গে আইনি লড়াইয়ের কথাও ঘোষণা করলেন ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের রাজ্য নেতৃত্ব।
কৃষক সভা থেকে আলাদা করে সিপিএম ক্ষেতমজুর ইউনিয়ন গড়েছে ৬ বছর আগে। ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির ডাকে সোমবার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সর্বভারতীয় নেতৃত্বও। বিভিন্ন জেলার গ্রাম থেকে চোখে পড়ার মতো মানুষ এসেছিলেন ওই সমাবেশে। গত সপ্তাহে কৃষক সমাবেশের পরে এ বার ক্ষেতমজুর সমাবেশে ভিড় উৎসাহ বাড়িয়েছে সিপিএম নেতৃত্বের। লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূল স্তরে সংগঠন শক্তিশালী করার দিকে নজর দিতে চাইছেন তাঁরা।
সমাবেশে এ দিন ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের সর্বভারতীয় সভাপতি তথা সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য এ বিজয়রাঘবন বলেছেন, ‘‘রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে দরিদ্রতম মানুষ এখানে এসেছেন। দিল্লিতে মোদী, এখানে দিদির রাজত্ব। দুই রাজত্বই গরিব বিরোধী।’’ কেন্দ্রীয় সরকার অন্যায় ভাবে ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে রেখেছে বলে অভিযোগ করেও বিজয়রাঘবনের প্রশ্ন, ‘‘দু’বছর ধরে রাজ্য সরকার কি ঘুমোচ্ছিল? রাজ্যে ১০ দিনের কাজ, আবাস যোজনার মতো প্রকল্পে দুর্নীতি চলতে দিয়েছে তৃণমূলের সরকার। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মোদী সরকার টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। এখন দিদি দিল্লি দেখিয়ে দিচ্ছেন!’’ সংগঠনের নেতা অমিয় পাত্রের কথায়, ‘‘তৃণমূল চুরি করল। শাস্তি পেল জব কার্ড থাকা কৃষিজীবী! ১০০ দিনের কাজের আইন তৈরিতে তৃণমূল-বিজেপি’র কোনও ভূমিকা নেই। এখন ১০০ দিনের টাকা আদায়ে ২ অক্টোবর দিল্লি যাবে তৃণমূলের বাহিনী। বিজেপি বকেয়া মেটাবে না। আমরা এখানে বকেয়ার দাবিতে এসেছি। এর পরে নবান্নে যাবো। হাই কোর্টেও যাব।’’
ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের রাজ্য সভাপতি তুষার ঘোষ সমাবেশ থেকে আহ্বান জানিয়েছেন, ‘‘নিয়ম মেনে ৪ ক ফর্ম ফিল আপ করো, কাজ চাও। সেই ফর্মের কপি ক্ষেতমজুর ইউনিয়নকে পাঠাও। কাজ না দিলে আমরা মামলা করবো। রাস্তার লড়াইয়ের পাশাপাশি আইনি লড়াইয়ে যাব।’’ বক্তা ছিলেন সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক নিরাপদ সর্দার, বন্যা টুডু প্রমুখও।
বকেয়া টাকা আটকে রাখা যে কেন্দ্রের অন্যায়, সিপিএম নেতৃত্বের এই বক্তব্য প্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্য নেতা তাপস রায় বলেছেন, ‘‘আমরা তো এ কথাই বলছি। কিন্তু সামনে নির্বাচন বলে সিপিএম মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। দুর্নীতির ধুয়ো তুলে গরিব মানুষের প্রাপ্য আটকাতে বিজেপিকে তারাও সাহায্য করেছে।’’ আর রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘গরিব মানুষের টাকা আটকে থাকুক, এটা কোনও সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষই চাইবেন না। সিপিএম জোট-ধর্ম পালন করে তৃণমূলের সঙ্গে দিল্লি যাক! তারা তো দীর্ঘ দিন ক্ষেতমজুরদের নিয়ে লড়াই করেছে। সিপিএম অন্তত গিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলুক। কেন্দ্রীয় সরকার তো ক্যাগের কাছে দায়বদ্ধ। দুর্নীতি হলে, হিসেব পাওয়া না গেলে টাকা আটকে যাবেই।’’
অন্য দিকে, সংযুক্ত কিসান মোর্চা এবং কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির রাজ্য শাখার যুক্ত বৈঠকে এ দিন ঠিক হয়েছে, সারা দেশের কৃষক ও শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলনের অঙ্গ হিসেবে আগামী ৩ অক্টোবর ‘কালা দিবসে’ রাজ্যের ব্লকে ব্লকে বিক্ষোভ হবে। শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকে মিছিল হবে ধর্মতলা থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত, থাকবেন কৃষক সংগঠনের নেতৃত্বও। এ রাজ্যে রাজভবন অভিযান হবে আগামী ২৬ নভেম্বর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy