বিমান বসু। ফাইল চিত্র।
সে দিন ছিল প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর জন্মদিন। নিউ টাউনে জ্যোতিবাবুর নামাঙ্কিত গবেষণা কেন্দ্রের জমিতে কাজের সূচনা করতে গিয়ে গাছের চারা বিলি করছিলেন বিমান বসু। শুধু মানুষের হাতে গাছের চারা তুলে দিয়েই ক্ষান্ত হননি। যাঁরা চারা নিচ্ছিলেন, তাঁদের নাম-নম্বর নিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন। যাতে তাঁদের সঙ্গে পরে যোগাযোগ করা যায়। তার পরে বালতি হাতে বেরিয়ে পড়েছিলেন চাঁদা তুলতে। দেখে নিয়েছিলেন, গণ-সংগ্রহে কারা শামিল হয়েছেন। সেই সন্ধ্যাতেই কলকাতার প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে জ্যোতিবাবু স্মারক বক্তৃতা করতে এসেছিলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। মঞ্চের পাশের ঘরে দলের জনাকয়েক নেতাকে ডেকে বিমানবাবুর তিরস্কার ছিল, এক জন ৮২ বছরের লোক চাঁদা তুলতে যাচ্ছে! অথচ অন্যদের তেমন উদ্যোগ নেই। তাঁদের লজ্জা হয় না?
মাসতিনেক আগে যা ছিল নিভৃতচারিতা, এ বার পুজোর মরসুমে সেই বার্তাই প্রকাশ্যে এনে দিলেন সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতা বিমানবাবু। দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, শুধু জনসভায় বক্তৃতা করলেই কি দায়িত্ব পালন করা হয়? আন্দোলন, সংগ্রাম ও সংগঠনের কাজে যুক্ত না থেকেও অনেক সদস্যের বছর বছর পুনর্নবীকরণ হয়ে যায় কী ভাবে? বিমানবাবুর মতে, এলাকা এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে গণ-সংগ্রহ, এলাকার ছোট ছোট সভা থেকে জনসংযোগ অনেক বাড়ানো যায়। বক্তৃতা করলে নেতাদের কথাই শোনানো হয়। কিন্তু মানুষের কাছে গিয়ে প্রচার বা অর্থ সংগ্রহ করলে মানুষ কী বলছেন, তা জানা যায় এবং তা থেকে শেখা যায়।
দলীয় প্রকাশনার একটি শারদ সংখ্যায় এ বার বিমানবাবু লিখেছেন, ‘জনগণের কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়া এবং এর পরে জনগণের মধ্যে ফিরে যাওয়াই হবে দৃষ্টিভঙ্গি। কেবল জনসভায় নেতারা বক্তৃতা করছেন এবং সেটিই জনগণের সঙ্গে একমাত্র আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক— এই ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সমস্ত স্তরের নেতৃত্ব, স্থানীয় ক্যাডারদের বাড়ি বাড়ি প্রচার গণ-অর্থসংগ্রহ, এলাকার সভা, পার্টি কমিটির সভায় অংশ নিতে হবে। তার মধ্যে দিয়ে দরদী ও কর্মীদের কথা শুনতে হবে। যে এলাকায় আন্দোলন চলছে, সেখানে থেকে পরামর্শ ও সহায়তা দিতে সময় দিতে হবে’।
দলের পলিটবুরোর প্রবীণ সদস্য ব্যাখ্যা করেছেন, নিচু তলার কর্মী-সমর্থক এবং সাধারণ মানুষের মত শোনা, যোগাযোগ স্থাপনের জন্য শাখা ও এরিয়া কমিটির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অথচ নীচের দিকের এই দুই স্তরের কাজই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অবহেলিত থেকে যায়। এরিয়া কমিটি ও শাখাকে সক্রিয় এবং সচল করার জন্য রাজ্য ও জেলা কমিটির তরফে বিশেষ অভিযানের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে বলেও বিমানবাবু পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর মতে, সব স্তরের দলীয় কমিটি সদস্যদের ‘আত্মসমীক্ষা করা একান্ত জরুরি কাজ’।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘বিমানদা এই বয়সেও নিজে রাস্তায় নেমে অর্থ সংগ্রহ করেন। এখন দলের কোনও কমিটি বা পদে না থাকলেও সব কর্মসূচিতে নিয়মিত যান। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তুলে এনে তিনি পরামর্শ দেন। তিনি যা বলছেন, সংগঠন করতে গেলে তার কোনও ‘শর্ট কাট’ নেই।’’ এ বার দলীয় মুখপত্রের শারদ সংখ্যায় দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও ডাক দিয়েছেন, ‘সর্বগ্রাসী আক্রমণ ও জটিলতর পরিস্থিতি’ মোকাবিলায় ‘সৃজনশীলতার সঙ্গে সঙ্ঘবদ্ধ হতে হবে, সংগঠিত করতে হবে’। তাঁর মতে, চেনা ছকের পাশাপাশি নতুন পথে এগোনোর কাজ কঠিন তবে অসম্ভব নয়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy