গত ৯ জানুয়ারি আদালত চত্বরে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন আইনজীবীদের একাংশ। ফাইল চিত্র।
বিচারপতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারী আইনজীবীদের নামের তালিকা ফিরিয়ে দিল কলকাতা হাই কোর্ট। বৃহত্তর বেঞ্চের বিচারপতিরা বললেন, ‘‘ভেবেছিলাম রাজ্যের বার অ্যাসোসিয়েশন এ ব্যাপারে সাহায্য করবে। কিন্তু তা হল না। এখন বুঝছি, সবার অবস্থাই পিতামহ ভীষ্মের মতো। অন্যায়- অবিচার দেখেও কিছু বলতে পারছেন না।’’
সোমবার আদালতে বিক্ষোভকারী আইনজীবীদের তালিকা জমা দিয়েছিলেন রাজ্যের বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ। সেই তালিকায় ছিল মোট ৮৬ জন আইনজীবীর নাম। তালিকাটি দেখামাত্রই অসন্তোষ প্রকাশ করেন বৃহত্তর বেঞ্চের বিচারপতিরা। প্রথমেই বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাশ প্রশ্ন করেন, ‘‘আদালতকে কি ভয় পান না? না কি সম্মান করেন না? এত জনের নাম কী ভাবে দিলেন?’’ গত ৯ জানুয়ারি আদালত চত্বরে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন আইনজীবীদের একাংশ। সেই প্রসঙ্গ টেনে এনেই বিচারপতি দাশ বলেন, ‘‘আমরা দেখেছি, এজলাসের বাইরে ওই বিক্ষোভ। বড় জোর সেখানে ১০-১২ জন যুক্ত ছিলেন। তালিকায় এত জনের নাম কী ভাবে? আমরা কিন্তু চাইলেই কড়া পদক্ষেপ করতে পারি।’’
বিচারপতির প্রশ্নের মুখে পড়ে অরুণাভ বলেন, ‘‘আমার পক্ষে সবাইকে শনাক্ত করা সম্ভব নয়। আমি জুনিয়রদের সাহায্য নিয়ে এই তালিকা তৈরি করেছি।’’ কিন্তু তাঁর সেই উত্তরের পাল্টা এ বার বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম বলেন, ৮৬ জন আইনজীবী কখনই অন্য আইনজীবীদের ঢুকতে বাধা দিচ্ছিলেন না। যা হয়েছে তা আমরা সবাই জানি। আমরা আশা করেছিলাম আপনারা সাহায্য করবেন। কিন্তু এই তালিকা দেখে সন্তুষ্ট হতে পারছি না।’’
বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ও অরুণাভকে বলেন, দোষীরা ক্ষমাপ্রার্থনা করলে আমরা এই সমস্যার সম্মানজনক সমাধান করতে পারি। তাই প্রথমে আমরা মুখবন্ধ খামেই নাম জমা দিতে বলেছিলাম। তাতে কারও পরিচয় প্রকাশ্যে আসত না। কিন্তু এই তালিকা অন্য ইঙ্গিত করছে। এর পরেই পিতামহ ভীষ্মের সঙ্গে তুলনা টেনে আনেন বিচারপতি দাশ। ১০-১২ জনের নামের বদলে বার অ্যাসোসিয়েশনের ৮৬ জনের নামের তালিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সবারই অবস্থা এখন পিতামহ ভীষ্মের মতো। অনেক অবিচার দেখেও কিছু করতে পারছেন না।’’
সোমবার বার অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া বিচারপতি মান্থার বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারী আইনজীবীদের নামের তালিকা আর গ্রহণ করেনি আদালত। বদলে বিচারপতিদের বেঞ্চ বলে, ‘‘রাজ্যের বার কাউন্সিল সাহায্য করতে না পারলে আমরা জাতীয় বার কাউন্সিলের সাহায্য নেব। তারা এই ঘটনায় প্রাথমিক অনুসন্ধান করেছে। আবার তাদের বলতে পারি।’’ বেঞ্চ বলে, রাজ্য বার কাউন্সিলকে এ বার বিক্ষোভকারীদের শনাক্ত করতে সাহায্য করবে কেন্দ্রীয় বার কাউন্সিল। এ বিষয়ে দুই বার কাউন্সিলের মধ্যে তথ্য আদানপ্রদান করার পর। তাদের আলাদা ভাবে রিপোর্ট জমা দিতে হবে।
তবে এর পাশাপাশিই বিচারপতি মান্থার বিরুদ্ধে পোস্টার সাঁটানোর ঘটনাতেও অভিযুক্তদের হাজির থাকতে বলেছে বৃহত্তর বেঞ্চ। বেঞ্চ বলেছে, ‘‘পোস্টার লাগানোর ঘটনায় ৬ জন সন্দেহভাজন আদালতে হাজির হয়েছিলেন। তাঁরা নিজেদের বক্তব্যের হলফনামা জমা দেবেন। পরবর্তী শুনানিতেও তাঁদের উপস্থিত থাকতে হবে।’’
সোমবার বৃহত্তর বেঞ্চ এই নির্দেশ দেওয়ার পর বিচারপতি দাশ বলেন, ‘‘আমরা চাই এই প্রতিষ্ঠানের সম্মান রক্ষা করতে। কিন্তু তার আগে সত্যিটা সামনে আসার প্রয়োজন রয়েছে। এর পর আমরা চাইলে আদালত অবমাননার রুল জারি করতে পারি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy