পার্থ-সহ বাকি ৭ জনকে চোদ্দো দিনের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ। ফাইল চিত্র ।
সিবিআই লুকোচুরি খেলছে! সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে এমনই মন্তব্য করলেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবী সেলিম রহমান। তাঁর মক্কেলকে হেফাজতে রাখা হলেও কোনও কাগজপত্র দেওয়া হচ্ছে না বলে আদালতে দাবি করেন তিনি। আদালতে তিনি এ-ও জানান, এত দিন ধরে তদন্তের কথা বলা হলেও কোনও তথ্যপ্রমাণ পেশ করছে না সিবিআই। পাশাপাশি, তিনি পাক জঙ্গি তথা মুম্বই হামলার অন্যতম হামলাকারী আজমল কসাবের মামলার প্রসঙ্গও তোলেন। তোলেন সেই বিচার প্রক্রিয়ার কথাও।
পার্থ এবং এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য-সহ নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত ৭ জনকে বৃহস্পতিবার সিবিআই আদালতে হাজির করানো হয়। তাঁদের প্রত্যেককে আবারও চোদ্দো দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। আদালতে পার্থের হয়ে সওয়াল করতে গিয়ে সেলিম বলেন, ‘‘আমাদের কোনও তথ্য দেওয়া হচ্ছে না। কোনও প্রমাণ দেওয়া হচ্ছে না। শুধু হেফাজতে রাখা হচ্ছে। এর প্রকৃত বিচার চাই।’’ অভিযুক্ত ষোলো জনের মধ্যে কেবল ৪ জনকেই কেন গ্রেফতার করা হল, সেই প্রশ্নও তিনি তোলেন।
সিবিআই তদন্তের জন্য মামলায় গড়িমসি হওয়ার দাবি করে সেলিম মুম্বই হামলার প্রসঙ্গও তোলেন। সেলিম বলেন, ‘‘আমাদের মামলায় বার বার ষড়যন্ত্রের কথা বলা হলেও কোনও তথ্যপ্রমাণ আদালতে পেশ করা হচ্ছে না। আজমলকেও বিচারে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। তার জন্য তাড়াতাড়ি তদন্তও করা হয়।’’
পার্থকে কেন শুধু শুধু গ্রেফতার করে রাখা হয়েছে, সে প্রশ্নও তোলেন সেলিম। তিনি বলেন, ‘‘এই রকম নজিরবিহীন তদন্ত দেখিনি। এই রকম মামলাও দেখিনি। দয়া করে মামলার গতি বাড়ুক।’’
অন্য দিকে, সিবিআইয়ের আইনজীবীর দাবি, যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলেও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা কোনও পদ দেখে তদন্ত করে না। সেই প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার করা কয়েকটি সফল তদন্তের কথাও তুলে ধরেন তিনি। বলেন, ‘‘সিবিআইয়ের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। কিন্তু সিবিআইয়ের তদন্ত করা ওমপ্রকাশ চৌটালা, লালুপ্রসাদ যাদবের মামলার ভবিষ্যৎ কী হয়েছিল তা গোটা দেশ দেখেছে। আমরা প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রী দেখি না। অপরাধীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করি। এবং সময় মতো আদালতে জানাই। মামলার গুরুত্ব বিচার করে অভিযুক্তদের হেফাজতে রাখা প্রয়োজন। প্রত্যেকেই খুব প্রভাবশালী। তদন্তে কী উঠে আসছে সেটা কেস ডায়েরিতে রয়েছে। রোজ নতুন নতুন তথ্য উঠে আসবে না এটাই স্বাভাবিক। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খুব গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।’’ অভিযুক্তদের পদ এবং সমাজে জায়গা দেখেই হেফাজতে রাখা দরকার বলে তিনি জানান। সিবিআইয়ের আইনজীবী আদালতে আগে এ-ও দাবি করেন, পার্থই নিয়োগ দুর্নীতির ‘মূল চক্রী’।
বৃহস্পতিবার এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশের আইনজীবী তমালকান্তি মুখোপাধ্যায়ও জামিনের আবেদন জানান। কিন্তু সিবিআইয়ের তরফে সুবীরেশকে আরও তদন্তের জন্য আবার জেল হেফাজতে পাঠানোর আবেদন জানানো হয়েছে। সিবিআইয়ের দাবি, সুবীরেশকে আরও জেরার প্রয়োজন। তা হলে তাঁর কাছ থেকে আরও অনেক তথ্য জানা যেতে পারে।
এর আগে ১২ ডিসেম্বর পার্থ, সুবীরেশ-সহ ৭ অভিযুক্তকে আলিপুরে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। ওই দিন বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে সরব হতে দেখা গিয়েছিল রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থকে। আলিপুরে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে বিচারকের উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন ছিল, “মন্ত্রী হওয়া কি অপরাধ?” রোজ তাঁর চরিত্রহনন করা হচ্ছে বলেও তিনি দাবি করেছিলেন।
তবে পার্থকে বৃহস্পতিবার আদালতে ঢুকতে দেখা গিয়েছিল খোশমেজাজে। তিনি বেরোনও খোশমেজাজেই। বেরোনোর সময় তাঁর উপর আস্থা রাখার কথাও বলেন পার্থ। তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা আমার উপর আস্থা রেখেছিলেন তাঁরা আস্থা রাখুন। এক দিন সত্যের জয় হবেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy