চারু মজুমদার। ফাইল চিত্র।
বসন্তের বজ্র নির্ঘোষের স্বপ্ন দেখিয়ে তিনি বিদায় নিয়েছেন, পাঁচ দশক হল। পঞ্চাশ বছর পরে এই শীতে তাঁর নামে সহসা চিঠি এসে হাজির! বিপ্লবের বার্তা নয়। দেশে লোকসভা ও সব বিধানসভার নির্বাচন একসঙ্গে করার প্রশ্নে মতামত চেয়ে জাতীয় আইন কমিশনের নেহাতই কেজো চিঠি। যে চিঠি পাঠানো হচ্ছে চারু মজুমদারের নাম লিখে!
দিল্লিতে সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের কেন্দ্রীয় দফতর চারু ভবনের ঠিকানায় আইন কমিশনের চেয়ারম্যান, প্রাক্তন বিচারপতি ঋতু রাজ অবস্থির সই করা যে চিঠি এসে পৌঁছেছে, সেখানে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নাম চারু মজুমদারের! যিনি প্রয়াত হয়েছেন ১৯৭২ সালের ২৮ জুলাই, তাঁর নামে চিঠি ছাড়া হয়েছে ২০২২ সালের ২৩ ডিসেম্বর! কলকাতায় পুলিশ হেফাজতে চারুবাবুর মৃত্যু ঘিরে বিতর্ক হয়েছিল বিস্তর, পঞ্চাশ বছর পরে তাঁর নামে চিঠিও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। একে তো চারুবাবু বেঁচে নেই, তার উপরে তাঁর প্রতিষ্ঠিত দল সিপিআই (এম-এল)। লিবারেশন নয়। একসঙ্গে নির্বাচনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করার পাশাপাশিই এ সব তথ্য সংশোধনের দাবি জানিয়ে কমিশনকে জবাবি চিঠি পাঠাতে চলেছেন লিবারেশন নেতৃত্ব। প্রসঙ্গত, চারুবাবুর রাজনীতির সঙ্গে নির্বাচনের যোগ ছিল দুস্তর।
চারুবাবুর ছেলে অভিজিৎ মজুমদার এখন বাংলায় লিবারেশনের রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্বে। চিঠির খবর পেয়ে তিনি বলছেন, ‘‘এটা ভুল তো বটেই। কিন্তু বোঝা যাচ্ছে, চারু মজুমদার নামটা এখনও রাষ্ট্রশক্তিকে তাড়া করে! এটা তারই প্রতিফলন! নরেন্দ্র মোদীরা যে ‘শহুরে নকশাল’ ইত্যাদি বলেন, বোঝা যায়, চারু মজুমদার যে আদর্শের প্রতীক ছিলেন, সেই দৃশ্যকল্প এখনও সামনে আছে। এই ভুল চিঠিও একটা মান্যতা!’’
মোদী সরকার গত নভেম্বরে কর্নাটক হাই কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি অবস্থিকে আইন কমিশনের নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ করেছে। তার পরেই একসঙ্গে নির্বাচনের ভাবনা নিয়ে ফের সক্রিয় হয়েছে কমিশন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শিক্ষাবিদ, বিশেষজ্ঞদের কাছে মত চাওয়া হচ্ছে। চারুবাবুকে চিঠির সঙ্গেও ৬ দফা প্রশ্ন পাঠানো হয়েছে। তবে লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের তির্যক মন্তব্য, ‘‘আইন কমিশন তো ঐতিহাসিক গবেষণা পরিষদের কাজ করছে!’’ দেশের শাসনভার যাদের হাতে, তারা কী ভাবে এমন কাণ্ড ঘটাল— না জেনে কিছু বলার নেই বলে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব অবশ্য সে প্রশ্ন এড়াচ্ছেন।
অভিজিতের স্মৃতিতে আছে, ১৯৭০ সালে অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত আইনে তাঁদের যাবতীয় জিনিস নিয়ে নিয়েছিল সরকার। অভিজিতের কথায়, ‘‘একটা লোহার সিন্দুকও ছিল। বাবার মৃত্যুর পরে সব ফেরত চেয়েছিলাম, বাবার গুরুত্বপূর্ণ জিনিস সিন্দুকে থাকবে ভেবেছিলাম। কিন্তু সরকার বলেছিল, উইয়ে খেয়েছে! লোহার সিন্দুক উইয়ে খাওয়ার মতো নানা ‘মিথ’ রাষ্ট্র প্রয়োজনমতো তৈরি করে, বাবাই তো বলেছিলেন।’’
পঞ্চাশ বছর পরের চিঠিও তেমনই আর এক ‘মিথ’— বলছেন চারু-পুত্র!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy