নিহত ক্যাপ্টেন ব্রিজেশ থাপা। — নিজস্ব চিত্র।
জঙ্গিদের গুলিতে কয়েক ঘণ্টা আগেই পুত্রের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে সেই খবর এসে পৌঁছয় দাজিলিঙের থাপা পরিবারের কাছে। বাড়ির বাইরে ভিড় করেছেন প্রতিবেশীরা। সকলেই সমবেদনা জানাচ্ছেন। তবে পুত্রের মৃত্যুতে আক্ষেপ নেই মৃত ব্রিজেশ থাপার বাবা প্রাক্তন কর্নেল ভুবনেশের। তিনি জানান, কষ্ট হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু কোনও আক্ষেপ নেই।
গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সোমবার সন্ধ্যায় জম্মুর ডোডা জেলার দেশা জঙ্গল এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালিয়েছিল ভারতীয় সেনা। ওই জঙ্গলেই কয়েক জন জঙ্গির লুকিয়ে থাকার খবর ছিল। সেই অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন ব্রিজেশ। জঙ্গলে অভিযানের সময় অতর্কিতে সেনাবাহিনীর দিকে ধেয়ে আসে গোলাবারুদ। পাল্টা জবাব দেন জওয়ানেরাও। শুরু হয় দু’পক্ষের গুলির লড়াই। ২০ মিনিটের বেশি সময় ধরে চলা এই লড়াইয়ে গুরুতর যখম হন ব্রিজেশ-সহ আরও তিন জন সেনাকর্মী। আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁদের। কিন্তু বাঁচানো যায়নি।
মঙ্গলবার সকালে দার্জিলিংয়ের লেবংয়ের বড়াগিঙ্গের বাড়িতে ব্রিজেশের শহিদ হওয়ার খবর এসে পৌঁছেছে। বাড়িতে ছিলেন ভুবনেশ ছাড়াও ছিলেন ব্রিজেশের মা নীলিমা। পুত্রের মৃত্যুতে কাঁদছেন তিনি। তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন প্রতিবেশীরা। পাশেই থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন ভুবনেশ। বাড়ির বাইরে সাংবাদিকদের ভিড়ও ছিল। ব্রিজেশকে নিয়ে নানা প্রশ্ন করছেন তাঁরা। ছোটবেলায় ব্রিজেশ কেমন ছিলেন, কী ভালবাসতেন, ভুবনেশের স্মৃতিচারণায় উঠে এল সব কথাই।
ভুবনেশ বলেন, ‘‘ছোট থেকেই ব্রিজেশের সেনার প্রতি খুব টান ছিল। নিজেকে সেই ভাবেই তৈরি করেছিল। কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু আক্ষেপ নেই। আমার সন্তান দেশকে রক্ষা করতে গিয়ে শহিদ হয়েছে।’’ ব্রিজেশের জন্ম দার্জিলিংয়ের লেবংয়ে। সেখানেই প্রাথমিক পড়াশোনা করেন। কিন্তু ভুবনেশকে কর্মসূত্রে যেতে হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তাই তাঁর সঙ্গে সঙ্গে যেতে হয়েছে পরিবারকেও। ২০১৪ সালে সেনা থেকে অবসর নেন কর্নেল ভুবনেশ। তার পর তিনি দার্জিলিংয়ের লেবংয়েই এক্স সার্ভিসম্যান হেলথ্ সার্ভিস স্কিমে কাজ করেন। বাবা-মা ছাড়াও ব্রিজেশের এক দিদিও রয়েছেন। বর্তমানে সঙ্গীত নিয়ে পড়াশোনা করতে অস্ট্রেলিয়াকে রয়েছেন নিকিতা থাপা।
স্কুল জীবনের পড়াশোনা শেষ করে মুম্বইয়ের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন ব্রিজেশ। সেখান থেকে বি-টেক শেষ করে কম্বাইন্ড ডিফেন্স সার্ভিস পরীক্ষায় বসেন তিনি। ২০১৮ পরীক্ষায় পাশ করেন। সেনাবাহিনীতে যোগ দেন ২০১৯ সালে।
ব্রিজেশ দুর্বছর ১০ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের মোতায়েন ছিলেন । এর পর তাঁকে ভারতীয় সেনার বিশেষ বিভাগ ১৪৫ আর্মি এয়ার ডিফেন্সের অধীনে জম্মু ও কাশ্মীরের ডোডা সেনা ছাউনিতে বদলি করা হয়। সেখানে ব্রিজেশ এ- কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন। সোমবার নিজের ট্রুপ নিয়ে ডোডা থেকে প্রায় চার ঘণ্টা দুরে একটি জঙ্গলে অভিযান চালানোর সময়ই জঙ্গিদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যান ব্রিজেশ। বুধবার ব্রিজেশের দেহ বিশেষ বিমানে শিলিগুড়ির বাগডোগরা বিমানবন্দরে নিয়ে আসা হবে। এর পর তাঁকে বাগডোগরা সেনা ছাউনিতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা জানানো হবে। সেখান থেকে তাঁর দেহ সড়কপথে নিয়ে যাওয়া হবে লেবংয়ে তাঁর বাড়িতে। ব্রিজেশের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy