Advertisement
০৭ জানুয়ারি ২০২৫
প্রশ্ন কলকাতার সম্মেলনে
CPIM

মহিলা মুখ ও বিজেপি, জোড়া উদ্বেগে সিপিএম

খাস কলকাতা শহরে বামেদের সংগঠন যেখানে তলানিতে, সেখানেই বিজেপির বেড়ে চলা ভোটও সিপিএমের উদ্বেগ ও সঙ্কট বাড়াচ্ছে।

সিপিএমের কলকাতা জেলা সম্মেলন। প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে।

সিপিএমের কলকাতা জেলা সম্মেলন। প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে। —নিজস্ব চিত্র।

 সন্দীপন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫ ০৬:২২
Share: Save:

হুগলি, দক্ষিণ ২৪ পরগনার পরে এ বার কলকাতা। রাজধানী শহর সংলগ্ন একের পর এক জেলায় সিপিএমের সম্মেলনে উঠে আসছে পর্যাপ্ত মহিলা মুখের অভাবের প্রশ্ন। খাস কলকাতা শহরে বামেদের সংগঠন যেখানে তলানিতে, সেখানেই বিজেপির বেড়ে চলা ভোটও সিপিএমের উদ্বেগ ও সঙ্কট বাড়াচ্ছে।

প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে চলছে সিপিএমের ২৬তম জেলা সম্মেলন। দলীয় সূত্রের খবর, নানা কর্মসূচিতে এবং সংগঠনে মহিলাদের টেনে আনতে না-পারার কথা উঠে এসেছে সম্মেলনে। আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে মহিলারা যেখানে বড় সংখ্যায় পথে নেমেছিলেন, তার পাশাপাশি সিপিএমের ক্ষেত্রে মহিলাদের যোগদানে ভাটার টান স্বীকার করে নিচ্ছেন কলকাতার একাধিক এরিয়া কমিটির প্রতিনিধিরা। প্রায় ১০ বছর আগে সিপিএমের সাংগঠনিক প্লেনামে লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছিল, দলে মহিলা কর্মীর সংখ্যা অন্তত ২৫% করতে হবে। কলকাতার মতো শহর-কেন্দ্রিক জেলাতেও সেই অনুপাত ১৫% ছাড়ায়নি বলে জেলা সম্মেলনের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক প্রতিবেদনে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। এই অবস্থার কারণ কী, তার ব্যাখ্যায় অবশ্য নানা মত উঠে আসছে প্রতিনিধিদের বক্তব্যে। এর আগে হুগলি ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সম্মেলনেও এই ‘দুর্বলতা’র কথা এসেছিল। সিপিএম সূত্রের বক্তব্য, কম-বেশি সব জেলায় ছবিটা প্রায় একই রকম।

সাম্প্রতিক কালে দলের আন্দোলনের অন্যতম মুখ হিসেবে সিপিএম সামনে রেখেছে যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কে। কিন্তু তাতেও সংগঠনে সার্বিক ভাবে মহিলা অন্তর্ভুক্তির যে উন্নতি হয়নি, সম্মেলন-পর্বে তা স্পষ্ট। সম্মেলনে প্রতিনিধিদের একাংশের মতে, সংগঠন পরিচালনায় ‘পুরুষতান্ত্রিক’ মনোভাব এর একটা কারণ। আর এক অংশের মত, ‘লক্ষ্মীর ভান্ডারে’র মতো বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা দিয়ে বিপুল সংখ্যক মহিলাদের সমর্থন টেনে রেখেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার তথা শাসক দল। এই অবস্থায় যাঁরা প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন না, তাঁদের পরিষেবা পাওয়ার কাজে পাশে দাঁড়ালে বামেদের ‘গ্রহণযোগ্যতা’ বাড়তে পারে। আর জি কর-কাণ্ডে নাগরিক প্রতিবাদে শহর উত্তাল হলেও সিপিএমের দলীয় কর্মসূচি কেন সে ভাবে হল না এবং মহিলাদের পাশে পাওয়া গেল না, সেই প্রশ্নও উঠেছে কলকাতার সম্মেলনে।

সিপিএমের কলকাতা জেলা সম্মেলন। প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে।

সিপিএমের কলকাতা জেলা সম্মেলন। প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে। —নিজস্ব চিত্র।

সিপিএম সূত্রের খবর, বিভিন্ন এরিয়া কমিটির প্রতিনিধিরা মেনে নিচ্ছেন, শুধু মহিলা বলে নয়, স্থানীয় স্তরে আন্দোলন ও সংগঠনের কাজে তরুণ জনগোষ্ঠীর বড় অংশকেই পাওয়া যাচ্ছে না। সেই কারণে স্থানীয় স্তরে দলের ‘পারফরম্যান্সে’ ঘাটতি থাকছে। অথচ মেরকরণের রাজনীতির আবহে তৃণমূল স্তরে তেমন সাংগঠনিক অস্তিত্ব না-থাকলেও শহরে ভোট বাড়ছে বিজেপির। বস্তুত, কলকাতার সম্মেলন উদ্বোধন করতে গিয়ে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শমীক লাহিড়ীও বার্তা দিয়েছেন, রাস্তার লড়াইয়ে বামেদের ‘দৃশ্যমানতা’ না-থাকলে তৃণমূল-বিরোধী অংশের সমর্থন বিজেপির দিকে ঝুঁকবে। আবার বিজেপিকে নিয়ে যাঁরা আতঙ্কে আছেন, তাঁরা তৃণমূলকেই বেছে নেবেন। এই পরিস্থিতির বদল ঘটাতে আন্দোলনের ঝাঁজ বাড়ানোর কথা বারবার আসছে। তবে বাস্তবে তার যে তেমন প্রতিফলন নেই, সিপিএমের সম্মেলনের আলোচনাতেই তা স্পষ্ট।

আর জি কর-কাণ্ডে প্রতিবাদ চলাকালীন অবস্থানরত চিকিৎসকদের উপরে ‘হামলার ষড়যন্ত্রে’র অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন সিপিএমের যুব নেতা কলতান দাশগুপ্ত। তাঁর সঙ্গে অন্য এক বামপন্থী সংগঠনের নেতার ফোনে কথোপকথনের ‘অডিয়ো-ক্লিপ’ প্রকাশ্যে এনেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা কুণাল ঘোষ। দলীয় সূত্রের খবর, সিপিএম ওই ঘটনাকে ‘ষড়যন্ত্র’ বললেও গোটা বিষয়ে দলের অবস্থান কেন স্পষ্ট করা হল না, কলকাতার সম্মেলনে সেই প্রশ্ন উঠেছে। কারও কারও প্রশ্ন, কলতান জামিন পেয়েছেন। কিন্তু ‘ষড়যন্ত্রকারী’দের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেই কেন? ওই কাণ্ডে আরও যাঁদের নাম উঠেছিল, তাঁদের প্রসঙ্গেই বা দলের অবস্থান কী?

অন্য বিষয়গুলি:

CPIM Left
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy