Advertisement
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Ajit Prasad Mahato

অজিতের ভোলবদল, রাজ্যের কাছে দাবি নয় জাতিসত্তার

আজ শনিবার কুড়মিদের করম পরব। উৎসবের আবহে অজিতপ্রসাদদের এই সিদ্ধান্ত ইঙ্গিতপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

অজিতপ্রসাদ মাহাতো।

অজিতপ্রসাদ মাহাতো। —ফাইল চিত্র।

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:৩১
Share: Save:

এ বার মুখ্যমন্ত্রীর কথারই প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে কুড়মি সামাজিক সাংগঠনিক নেতাদের একাংশের মুখে। করব পরবের আগের দিনই অজিতপ্রসাদ মাহাতোর নেতৃত্বাধীন আদিবাসী কুড়মি সমাজ জানাল, জাতিসত্তার স্বীকৃতির বিষয়টি যেহেতু কেন্দ্রের এক্তিয়ারভুক্ত, তাই এ বার থেকে রাজ্যের কাছে তারা এই দাবি জানাবে না। এত দিন ঠিক এই কথাই বলতেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর কুড়মি নেতাদের বক্তব্য ছিল, জাতিসত্তার স্বীকৃতি কেন্দ্র-রাজ্য দু’পক্ষের জন্যই আটকে আছে। তাই তাদের আন্দোলন দুই সরকারের বিরুদ্ধে।

আজ শনিবার কুড়মিদের করম পরব। উৎসবের আবহে অজিতপ্রসাদদের এই সিদ্ধান্ত ইঙ্গিতপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। আগামী শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর রাজ্যজুড়ে ‘কুড়মিক উমকনি করম আঝাট’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে আদিবাসী কুড়মি সমাজ। যার অর্থ—‘কুড়মিদের দ্রুততার সঙ্গে করম আস্ফালনের মাধ্যমে দাবি সনদ পেশ’। ওই দিন জঙ্গলমহলের চার জেলা ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার জেলাশাসক, বনাধিকারিক, ভূমি দফতরের আধিকারিক ও জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে নির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়ে দাবি সনদ পেশ করা হবে। পুরনো অন্য সব দাবি এক থাকলেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবিতেই রাজ্য সরকারের উপর থেকে ‘চাপ’ সরিয়ে নিল আদিবাসী কুড়মি সমাজ।

অজিতপ্রসাদ বলছেন, ‘‘জনজাতি তালিকাভুক্তির বিষয়টি কেন্দ্র সরকারের এক্তিয়ারভুক্ত। তাই আপাতত রাজ্যের কাছে জাতিসত্তার দাবি করছি না। আমাদের আরও যে সব দাবি রয়েছে, যেগুলি রাজ্যের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব, ওই সব দাবিতে ২০ তারিখ চার জেলায় ব্যাপক জমায়েত করে প্রশাসনের কাছে দাবি সনদ দেওয়া হবে।’’ বিষয়টি যে কেন্দ্রের এক্তিয়ারভুক্ত তা কি এত দিন জানা ছিল না? এ বার অজিতের ব্যাখ্যা, ‘‘করম পরবে গত বছর থেকে রাজ্য সরকার পূর্ণদিবস ছুটি ঘোষণা করেছে। গত অগস্টে মুখ্যমন্ত্রী আমাদের জাতিসত্তার দাবি নিয়ে পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাই আপাতত আমরা রাজ্যের কাছে জনজাতি তালিকাভুক্তির দাবি করছি না।’’ সঙ্গে জুড়ছেন, ‘‘২০২৬ সালে বিধানসভা ভোট। তার আগে আমাদের দাবি নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্র পদক্ষেপ না করলে তখন অন্যরকম ভাবব।’’ তবে অজিত জানাচ্ছেন, হাতির সমস্যা নিয়ে সংগঠনগত ভাবে তাঁরা বিশেষ করে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এছাড়াও কুড়মালি ভাষার পঠনপাঠন, ভূমি দফতরে জমি সংক্রান্ত নানা সমস্যা নিয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে।

উল্লেখ্য, জাতিসত্তার দাবিকে সামনে রেখেই কুড়মিরা গত পঞ্চায়েত ভোট ও এ বারের লোকসভা ভোটেও নির্দল হিসেবে লড়েছিল। অজিতপ্রসাদ নিজে পুরুলিয়া লোকসভায় নির্দল হিসেবে লড়ে হেরেছেন। ভোটের পরে গত ১৩ অগস্ট নবান্নে অজিতপ্রসাদ-সহ সংগঠনের নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরে ২০ সেপ্টেম্বরের রেল অবরোধ থেকে সরে আসে আদিবাসী কুড়মি সমাজ। সূত্রের খবর, ওই দিন আলাদা করে অজিতপ্রসাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। উল্লেখ্য, নবান্নের ওই বৈঠকে অন্য কুড়মি সামাজিক সংগঠনগুলি ডাক পায়নি।

ইতিমধ্যে আদিবাসী নেগাচারী কুড়মি সমাজের নেতা অনুপ মাহাতো সপার্ষদ অজিতপ্রসাদের সংগঠনে যোগ দিয়েছেন। তবে অন্য কুড়মি সামাজিক সংগঠনগুলি অজিতপ্রসাদদের সঙ্গে সহমত নয়। কুড়মি সমাজ (পশ্চিমবঙ্গ)-এর সভাপতি রাজেশ মাহাতো বলছেন, ‘‘রাজ্যের সদিচ্ছা ছাড়া কোনও জাতিকেই জনজাতি তালিকাভুক্ত করা সম্ভব নয়।’’ আদিবাসী জনজাতি কুড়মি সমাজের রাজ্য সভাপতি শিবাজী মাহাতোরও বক্তব্য, ‘‘কুড়মিদের জনজাতি তালিকাভুক্তির মূল দাবি উহ্য রেখে কখনওই জাতিসত্তার আন্দোলন হতে পারে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kurmi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE