(বাঁ দিক থেকে) কুণাল ঘোষ, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সজল ঘোষ। —ফাইল চিত্র।
থামতে চাইছেন না কুণাল ঘোষ। উত্তর কলকাতার সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে রবিবার আবার ক্ষোভ উগরে দিলেন তিনি। টেনে আনলেন অধুনা বিজেপি নেতা সজল ঘোষের প্রসঙ্গও। সজল আগে তৃণমূলে ছিলেন। পরে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। কুণাল জানিয়েছেন, সজলের দলত্যাগের নেপথ্যেও রয়েছেন সুদীপ। এমনকি, সজলকে দলে রেখে দেওয়ার জন্য শেষ দিন পর্যন্ত চেষ্টা করেছিলেন বলে জানান কুণাল।
এ প্রসঙ্গে কুণাল বলেন, ‘‘সজলকে দলে রাখার জন্য আমি শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছিলাম। সুদীপদারা সেটা হতে দেননি।’’ এর পর সুদীপকে তাঁর সরাসরি আক্রমণ, ‘‘আপনি এত বড় নেতা, আপনি সজলকে দলে থাকতে দেবেন না। আবার সজল উল্টো দিকে দাঁড়ালে আপনি এবং আপনার স্ত্রী তাঁকে হারাতেও পারবেন না!’’ বিভিন্ন ওয়ার্ডে সুদীপরা বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করে রেখেছেন বলে দাবি করেন কুণাল।
কুণালের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপির সজলকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘কুণাল সকাল থেকে রাত অবধি মিথ্যা বলেন। তবে এই দু’টি কথা উনি সত্যি বলেছেন। উনিই আমাকে দলে রাখার জন্য শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছিলেন। সুদীপ কাউকে কোনও কাজ করতে দেন না। তবে তৃণমূল এখন আমার কাছে অতীত। আমি ওই দলকে ঘৃণা করি। যা হয় ভালর জন্যই হয়। আমি যে ওই দল থেকে বেরিয়ে এসেছি, তার জন্য সুদীপকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’’
বস্তুত, বৃহস্পতিবার রাত থেকে সমাজমাধ্যমে ইঙ্গিতবাহী পোস্ট করছিলেন কুণাল। দলের এক নেতাকে নাম না করে আক্রমণ করছিলেন তিনি। শুক্রবার সকালে দেখা যায়, এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলের বায়ো থেকে কুণাল তৃণমূলের মুখপাত্র এবং রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের পরিচয় মুছে ফেলেছেন। জল্পনা আরও জোরদার হতে কুণাল স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে বুঝিয়ে দেন, তাঁর ক্ষোভ কাকে নিয়ে। রোজ়ভ্যালিকাণ্ডের উল্লেখ করে সুদীপকে আক্রমণ করেন তিনি। একটি সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, সুদীপ আসলে ‘বিজেপির লোক’। এমনকি, শনিবারের একটি পোস্টে সুদীপের সঙ্গে কয়লা কেলেঙ্কারির যোগের ইঙ্গিতও দিয়েছেন কুণাল। জানিয়েছেন, যদি তা প্রমাণিত হয়, তবে সুদীপকে গ্রেফতার করা দরকার। কেন্দ্রীয় সংস্থা তা এড়িয়ে গেলে আদালতে যাবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কুণাল।
কুণাল এবং সুদীপের ‘মধুর’ সম্পর্কের কথা তৃণমূলের অন্দরে সকলেরই জানা। তবে লোকসভা ভোটের মুখে এই বিতর্ক দলকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ১০ মার্চ ব্রিগেডে তৃণমূলের সমাবেশের প্রস্তুতির বিষয়ে আলোচনার জন্য সুদীপ উত্তর কলকাতার নেতা-কর্মীদের নিয়ে একটি বৈঠক ডেকেছিলেন। সেখানে কুণাল ডাক পাননি। তার পর থেকেই ক্ষোভ উগরে দিতে শুরু করেছেন।
রবিবার কুণাল বলেন, ‘‘সুদীপদার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কোনও সমস্যা নেই। রেষারেষির কারণে উনি জেলার বৈঠকে আমাকে ডাকলেন না। তাতে আমার কোনও যায়-আসে না। কিন্তু সেই না-ডাকার নেপথ্যে যে কারণগুলো রয়েছে, সেগুলোই আমার অস্বস্তির কারণ। আমি এর মধ্যে আর থাকতে চাই না। এই শারীরিক, মানসিক অস্বস্তি আমি আর নেব না।’’
শনিবার কুণাল জানান, রাজ্য সাধারণ সম্পাদক এবং মুখপাত্রের পদ থেকে তিনি ইস্তফা দিয়েছেন। মুখপাত্রের পদে তাঁর ইস্তফাটি গৃহীতও হয়েছে। তবে দ্বিতীয় ইস্তফা এখনও দল গ্রহণ করেনি। দলকে তিনি অনুরোধ করেছেন, ‘‘সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকেও আমার ইস্তফাটি গ্রহণ করা হোক। আমি ওই পদে থাকব না। শুধু কর্মী হিসাবে থাকব।’’ শনিবার তৃণমূলের ব্রিগেডের প্রস্তুতি মিছিলেও হেঁটেছেন কুণাল।
সুদীপের বিরুদ্ধে অবশ্য কুণাল একা নন, তৃণমূলের আরও এক নেতা ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন। তিনি বরানগরের বিধায়ক তাপস রায়। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, সুদীপ দাঁড়ালে তিনি নির্বাচনে কাজ করবেন না। তাঁর বক্তব্য, ‘‘২০০৯ আর ২০১৪ সালে ওর (সুদীপের) ইলেকশনে ম্যানেজারি করেছি। ২০১৯-এ করিনি। ছেলেদের চাপে তিনটে মিটিং করেছিলাম। এ বার করব না।’’ কুণাল যদিও জানিয়েছিলেন, তিনি তাঁর ক্ষোভ জানাচ্ছেন। উত্তর কলকাতায় বিকল্প প্রার্থীর দাবি জানাচ্ছেন। এর পরেও যদি দল সুদীপকেই ওই কেন্দ্রে টিকিট দেন, তবে তিনি দলের ‘সৈনিক’ হিসাবে তাঁর হয়ে খাটবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy