Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Sandeshkhali Incident Video

বৈঠকে ‘বরফ গলা’র পরেই সন্দেশখালি নিয়ে আসরে কুণাল, বিজেপিকে তোপ দেগে দাবি পুলিশি তদন্তের

সন্দেশখালির ‘স্টিং ভিডিয়ো’ নিয়ে সরব কুণাল ঘোষ। সম্প্রতি দলের সঙ্গে তাঁর মনোমালিন্যের খবর প্রকাশ্যে এসেছিল। দলের প্রতি অভিমান তিনি চেপেও রাখেননি। তবে শনিবারের বৈঠকে ‘বরফ গলেছে’ বলে খবর।

(বাঁ দিকে) কুণাল ঘোষ। —ফাইল চিত্র। সন্দেশখালির ‘স্টিং অপারেশন’ ভিডিয়োর দৃশ্য (ডান দিকে)। ছবি: ভিডিয়ো থেকে।

(বাঁ দিকে) কুণাল ঘোষ। —ফাইল চিত্র। সন্দেশখালির ‘স্টিং অপারেশন’ ভিডিয়োর দৃশ্য (ডান দিকে)। ছবি: ভিডিয়ো থেকে।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২৪ ১৩:০৬
Share: Save:

সন্দেশখালির ‘স্টিং ভিডিয়ো’ প্রসঙ্গে এ বার আসরে নামলেন কুণাল ঘোষ। দলের সঙ্গে গত কয়েক দিন ধরেই তাঁর ‘মনোমালিন্য’ চলছে। বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়ের সঙ্গে এক মঞ্চে হাজির থাকার পর তৃণমূল তাঁকে দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিল। তার পর প্রকাশ্যেই দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ এবং অভিমান উগরে দিয়েছিলেন কুণাল। কিন্তু শনিবার দক্ষিণ কলকাতায় ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং ব্রাত্য বসুর সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সূত্রের খবর, তাতে ‘বরফ গলেছে’। তার পরের দিনই তাই সন্দেশখালির ভিডিয়োকে হাতিয়ার করে সাংবাদিক বৈঠক করতে দেখা গেল তাঁকে। যদিও কুণাল জানিয়েছেন, তিনি ব্যক্তিগত ভাবে এই সাংবাদিক বৈঠক করেছেন।

কুণাল এই বৈঠকে সন্দেশখালির ঘটনায় অবিলম্বে রাজ্য পুলিশের তদন্ত দাবি করেছেন। পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করে তদন্ত শুরু করুক, চান কুণাল। জানিয়েছেন, ভাইরাল ওই ভিডিয়োতে যাঁদের দেখা গিয়েছে, তাঁদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। বিষয়টি যাতে শুধু রাজনৈতিক তরজায় আটকে না থাকে, তা-ও দেখতে বলেছেন তিনি।

কুণাল বলেন, ‘‘সন্দেশখালিতে জমি সংক্রান্ত কিছু সমস্যা ছিল। কিন্তু নারী নির্যাতন এবং ধর্ষণের অভিযোগ যে সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং সাজানো, তা প্রকাশ্যে এসেছে। স্থানীয় বিজেপি নেতাই সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। এ ভাবে বাংলার পাঁচ কোটি মহিলাকে অপমান করেছে বিজেপি। বাংলার ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে ওরা। ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসায় ওরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। আমি চাই, এই ভিডিয়ো যাতে শুধু রাজনৈতিক তরজায় সীমাবদ্ধ না থাকে। বিজেপির যে ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়েছে, তা তো রাষ্ট্রদ্রোহিতা। সরকার এবং সমাজবিরোধী চক্রান্ত। রাজ্যের সম্মান নিয়ে ছেলেখেলা করেছে ওরা। তাই এই ভিডিয়ো আইনের আওতায় আসা প্রয়োজন।’’

পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করার পাশাপাশি এ নিয়ে আইনের পথে আর কী বিকল্প পদক্ষেপ করা যায়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তা-ও দেখতে বলেছেন কুণাল। তিনি জানিয়েছেন, সন্দেশখালিতে ইচ্ছাকৃত ভাবে অশান্তি, গোলমালের বাতাবরণ তৈরি, জনতাকে উত্তেজিত করা এবং বেআইনি জমায়েত করার অভিযোগে বিজেপির বিরুদ্ধে এই ঘটনায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪১, ১৫৩ এবং ১৫৮ ধারায় মামলা রুজু করা উচিত। সেই সঙ্গে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ১৯৫এ, ২০১, ২০৩, ২১১ ধারাও প্রযুক্ত হওয়া উচিত। গোটা ঘটনার পুরোদস্তুর তদন্ত চেয়েছেন তিনি। কুণাল বলেন, ‘‘সন্দেশখালির মতো এত সংবেদনশীল একটি বিষয়, যা নিয়ে প্রথম থেকেই আমি সরব হয়েছিলাম, বলে আসছিলাম এই নারী নির্যাতনের অভিযোগগুলি অসত্য, তখন অনেকেই আমার সমালোচনা করেছিলেন, এখন তার প্রমাণ হাতে এসেছে। মানুষের কাছে সবটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।’’

সন্দেশখালির ঘটনাকে ভোটের বাজারে সাজানো হলেও সেই স্বার্থে আর এটিকে দেখছেন না বলে জানিয়েছেন কুণাল। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিজেপি বাঁচার জন্য এখন সিবিআইয়ের আশ্রয় খুঁজছে। নারদ মামলায় যাঁর নাম ছিল, এই ভিডিয়োতেও তাঁর নাম শোনা গিয়েছে। সিবিআই তো সেই মামলাতেও তাঁকে এখনও গ্রেফতার করেনি। ফলে এ ক্ষেত্রেও তারা বিজেপিকে আশ্রয় দেবে। তাই আগেই সিবিআই তদন্তের কথা বলছেন ওঁরা। ওঁদের যদি ভয় না থাকে, তবে পুলিশি তদন্তের মুখোমুখি হোন।’’

শুক্রবার পর্যন্তও তৃণমূলে কুণালের অবস্থান নিয়ে বিভ্রান্তি ছিল। পদ থেকে অপসারণের পর সংবাদমাধ্যমে দলের বিরুদ্ধে একাধিক কথা বলতে শোনা গিয়েছিল তাঁকে। যদিও প্রথম থেকেই তিনি বলে আসছিলেন, পদের তোয়াক্কা করেন না। তিনি তৃণমূলের সৈনিক ছিলেন, আছেন এবং থাকবেনও। সেই সৈনিক হিসাবেই সন্দেশখালি ইস্যুতে রবিবার দলের পাশে দাঁড়িয়ে বিজেপিকে আক্রমণ করলেন।

উল্লেখ্য, শনিবারই সন্দেশখালিতে ‘স্টিং অপারেশন’-এর ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে। ৩২ মিনিটের সেই ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে স্থানীয় বিজেপি নেতা গঙ্গাধর কয়ালকে। তিনি ঘরোয়া আড্ডায় স্বীকার করে নিয়েছেন, সন্দেশখালিতে মহিলাদের উপর অত্যাচার, নিগ্রহ এবং ধর্ষণের যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা সাজানো। বিজেপির লোকজনের কথায় অসত্য বয়ান দিয়েছেন মহিলারা। ভিডিয়োতে একাধিক বার শুভেন্দুর নামও শোনা গিয়েছে। বলা হয়েছে, শুভেন্দুর কথাতেই টাকার বিনিময়ে গোটা বিষয়টি সাজানো হয়েছে। এমনকি সন্দেশখালিতে ভোটের আগে অস্ত্র মজুত করার বিষয়েও কথা হয়েছে ওই ভিডিয়োতে। ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। বিজেপির তরফে দাবি, ভিডিয়ো বিকৃত করা হয়েছে। তবে তৃণমূল শনিবার থেকেই এই ভিডিয়ো নিয়ে আসরে নেমে পড়েছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলন করে শনিবারই তুলোধনা করেন বিজেপিকে। সেই সঙ্গে সন্দেশখালি প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমে যে ভাবে খবর প্রকাশিত হয়েছে এত দিন, তারও নিন্দা করেন তিনি। রবিবার দিল্লি থেকেও একটি সাংবাদিক সম্মেলন করবে তৃণমূল।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy