Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Kunal Ghosh Sudip Banerjee

সুদীপ বড় শেখ শাহজাহান, বিজেপির লোক, নির্বাচনে জোড়াফুলের আড়ালে পদ্ম নিয়ে লড়বেন, কুণাল-তোপ

কুণাল ঘোষের বক্তব্য, তাঁর মূল ক্ষোভের কারণ উত্তর কলকাতার রাজনীতি এবং তাতে দলীয় সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা। তাঁর কথায়, ‘‘উত্তর কলকাতায় যা হচ্ছে, তা দলের জন্য স্বাস্থ্যকর নয়।’’

(বাঁ দিকে) সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। কুণাল ঘোষ (ডান দিকে)

(বাঁ দিকে) সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। কুণাল ঘোষ (ডান দিকে) —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৪ ২০:০১
Share: Save:

এক্স হ্যান্ডলে ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। কিন্তু নাম করছিলেন না। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সেই পন্থা নেওয়ার পরে আরও একধাপ এগিয়ে গেলেন তৃণমূলের অধুনা ‘বিদ্রোহী’ নেতা কুণাল ঘোষ। সরাসরি উত্তর কলকাতার তৃণমূল সাংসদ তথা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করে তোপ দাগলেন কুণাল।

কুণাল সরাসরি সুদীপকে ‘বিজেপির লোক’ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘উত্তর কলকাতায় এবার পদ্মফুল বনাম পদ্মফুলের লড়াই হবে। সুদীপবাবু দাঁড়াবেন জোড়াফুলের হয়ে। কিন্তু আসলে তিনি পদ্মফুলের লোক।’’ কুণালের আরও বক্তব্য, সুদীপ তাঁর সচিবের পুত্রকে বিজেপিতে ‘রেখে দিয়েছেন’। বস্তুত, কুণালের ক্ষোভের মূল কারণই উত্তর কলকাতার দলীয় রাজনীতি এবং সেখানে সুদীপের ভূমিকা। তাঁর কথায়, ‘‘উত্তর কলকাতায় যা হচ্ছে, তা দলের জন্য স্বাস্থ্যকর নয়। একে তো কোনও জেলা দফতর নেই। ক্যালকাটা বয়েজ় স্কুলে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় একটি ঘর দখল করে অফিস চালাচ্ছেন। ওঁকে নাকি কোন মিশনারিজ় অনুমতি দিয়েছে। কী করে একটি স্কুলে রাজনীতির আখড়া চলতে পারে?’’

কুণালের ওই বক্তব্য নিয়ে সুদীপ প্রকাশ্যে অবশ্য মুখ খোলেননি। তিনি ফোন ধরেননি। তাঁর মোবাইলে পাঠানো বার্তারও জবাব আসেনি।

ব্রিগেডের সভা উপলক্ষে বৃহস্পতিবার উত্তর কলকাতা তৃণমূলের প্রস্তুতি সভা ছিল। সেই সভায় কুণালকে ডাকা হয়নি। তার পর রাতেই এক্স হ্যান্ডলে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন কুণাল। কেন তাঁকে ডাকা হয়নি, সেই প্রশ্নে শুক্রবার এবিপি আনন্দে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে সুদীপের বিরুদ্ধে আরও চাঁচাছোলা আক্রমণ শানান সদ্য দলের মুখপাত্রের দায়িত্ব ছাড়া কুণাল। তিনি বলেন, ‘‘আমায় দেখতে খারাপ, তাই ডাকেনি! ওঁকে (সুদীপকে) দেখতে ভাল। উনি বড়সড় শেখ শাহজাহান। গালে দাড়ি আছে।’’ কুণালের কথায়, ‘‘সন্দেশখালির শাহজাহানের বিষয়ে এত দিন কিছু জানা যায়নি বলে বলা হচ্ছিল। কিন্তু উত্তর কলকাতার শাহজাহান কী করছেন, তা দলের শীর্ষ নেতৃত্ব জানেন।’’ কুণালের আরও বক্তব্য, ‘‘দল জমিদারি হটানোর স্লোগান দিচ্ছে। আর কেউ কেউ পার্টিটাকে বাপের জমিদারি ভাবছে। পার্টির একটা কাঠামো রয়েছে। তা মেনেই সকলের চলা উচিত।’’

কুণাল দাবি করেছেন, এক বার দল ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে তাঁর হাত ধরেই সুদীপ তৃণমূলে ফিরেছিলেন। নয়াদিল্লিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাংদের ফ্ল্যাটে নৈশভোজের টেবিলে তৃণমূল নেত্রীর হাত ধরে সুদীপ বলেছিলেন, ‘‘আর হবে না মমতা।’’

উত্তর কলকাতার সংগঠনে সুদীপের ভূমিকা নিয়ে তৃণমূলে ক্ষোভ রয়েছে। এর আগে বরাহনগরের বিধায়ক তাপস রায় এ নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছিলেন সুদীপের। সুদীপকে ‘নন প্রোডাক্টিভ সাদা হাতি’ বলেও কটাক্ষ করেছিলেন তাপস। মাঝে সুদীপকে সরিয়ে তাপসকে উত্তর কলকাতার জেলা সভাপতি করেছিল তৃণমূল। তার পর আবার সুদীপকে সেই পদ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন মমতা। প্রকাশ্য কর্মসূচি থেকেই মমতা বলেছিলেন, ‘‘সুদীপদা চাইছেন জেলা সভাপতি হতে। তাই ওঁকে ওই পদটা ফিরিয়ে দেওয়া হল।’’ তার পরে তাপসকে দমদম-ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি করে তৃণমূল। তাপস উত্তর কলকাতার ‘ভূমিপুত্র’। সেখানে রাজনীতি করেই তাঁর উত্থান। ফলে তাঁরও ক্ষোভ ছিল। শুক্রবার পুরনো প্রসঙ্গ টেনেই সুদীপকে আক্রমণ করেন কুণাল। তিনি বলেন, ‘‘লজ্জা করে না! ৮০ বছর বয়সে রাত্রিবেলা কেঁদে-ককিয়ে নেত্রীকে এসএমএস করে জেলা সভাপতি পদ ফিরিয়ে দিতে বলেন! শুধুমাত্র তাপস রায়কে ছেঁটে ফেলার জন্য।’’ কুণালের আরও বক্তব্য, ‘‘ভোটের সময়ে মমতার ছবি, দলের প্রতীকে জিতে যান। তার পর নিজের মতো করে দল চালান।’’

বৃহস্পতিবার রাতে এক্স হ্যান্ডলেই কুণাল রাতে লিখেছিলেন, ‘‘নেতা অযোগ্য গ্রুপবাজ স্বার্থপর। সারা বছর ছ্যাঁচড়ামি করবে আর ভোটের মুখে দিদি, অভিষেক, তৃণমূল দলের প্রতি কর্মীদের আবেগের উপর ভর করে জিতে যাবে, ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি করবে, সেটা বার বার হতে পারে না।’’ তৃণমূলের অন্দরে যখন কুণালের এই পোস্ট নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে, তখন শুক্রবার সকালে হঠাৎ দেখা যায়, তিনি এক্স হ্যান্ডলের বায়ো থেকে তৃণমূল মুখপাত্র তথা রাজনীতিকের পরিচয়টাই মুছে ফেলেছেন। সেখানে এখন তাঁর পরিচয় শুধুই ‘সাংবাদিক আর সমাজকর্মী’। একইসঙ্গে শুক্রবার পূর্ব মেদিনীপুরে ব্রিগেডের প্রস্তুতি সভাতেও কুণালকে ডাকা হয়নি বলে তাঁর ক্ষোভ রয়েছে। সেখানে গিয়েছেন দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। দলীয় সমীকরণে কুণাল-বক্সী পরস্পরের বিরোধী বলেই তৃণমূলের অন্দরে সকলে জানেন। কুণালের বক্তব্য, ২০২১ সালের বিপর্যয়ের (নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারীর কাছে মমতার হার) পরে তাঁকে পূর্ব মেদিনীপুরের দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেই তাঁকেই সেই জেলার ব্রিগেডের প্রস্তুতর বৈঠকে রাখা হল না!

এ সবের মধ্যে কুণালের দলবদল নিয়ে জল্পনাও ভেসে উঠেছিল কোনও কোনও মহলে। তবে কুণাল স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি ‘তৃণমূলের সৈনিক’ হয়েই থাকবেন। কেবল ‘সিস্টেমে মিস্‌ফিট’ বলে সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্রের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চান। কুণালের এ-ও দাবি, তাঁর মধ্যে অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করছে। তবে তাঁর কথায়, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার নেত্রী। আর অভিষেক শুধু আমার নেতা নন, আই লাভ অভিষেক!’’ প্রসঙ্গত, মমতা এবং অভিষেককে মোবাইলে বার্তা পাঠিয়ে কুণাল তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক এবং মুখপাত্রের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তবে তিনি শুক্রবার স্পষ্টই জানিয়েছেন, অন্য কোনও দলে তিনি যাচ্ছেন না।

অন্য বিষয়গুলি:

Kunal Ghosh Sudip Banerjee TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy