মহাষ্টমীতে বেলুড়মঠে কুমারী পুজো। ছবি: রণজিৎ নন্দী (খবর: পৃঃ ৩)
অতিমারি পর্বে দু’বছরের নিষেধাজ্ঞার পরে মহোৎসবে এ বার দুর্গাষষ্ঠীর দিন থেকেই বেলুড় মঠ ফিরেছে নিজের ছন্দে। সোমবার মহাষ্টমীর সকালেও ফিরে আসে কুমারী পুজো দর্শনের জন্য ভিড়ের পুরনো ছবি। আকাশের মুখভার। তবু বেলুড় মঠ চত্বরে হাজির হন অসংখ্য ভক্ত-দর্শনার্থী। বেলুড় মঠের ১২২তম বর্ষের দুর্গোৎসবে কুমারী পুজো হল অত্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গেই।
সকালে ঘড়ির কাঁটা ৯টার ঘর ছুঁতেই মূল মন্দিরের পাশের অস্থায়ী মণ্ডপের বেদিতে দুর্গাপ্রতিমার সামনে নিয়ে আসা হয় পাঁচ বছর এক মাস উনিশ দিন বয়সের কন্যাকে। দুর্গাপ্রতিমার সামনেই কুমারীকে সিংহাসনে বসানো হয়। এ বার কুমারী হিসেবে পুজো করা হয় কোন্নগরের অরবিন্দ রোডের বাসিন্দা কল্যাণ রায় ও বাসন্তী রায়ের কন্যা আরাত্রিকা রায়কে। তন্ত্রসারে বলা আছে, এক থেকে ষোলো বছর পর্যন্ত বালিকাদের কুমারী পুজোর জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে। এক-এক বয়সের কুমারীর জন্য এক-এক রকম দুর্গানামের উল্লেখ রয়েছে। সেই অনুযায়ী এ দিন বেলুড় মঠে কুমারীকে পুজো করা হয় ‘উমা’ রূপে।প্রবীণ সন্ন্যাসীরা জানান, কুমারীকে ভগবতীর অংশ বলেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণদেব। শুধু কুমারী নন, তাঁর দৃষ্টিতে সব রমণীই সাক্ষাৎ ভগবতীর অংশ। তিনি বলতেন, ‘মাতৃভাব বড় শুদ্ধ ভাব’।
কুমারীর মধ্যে দৈবী ভাবের প্রকাশ দেখা বা তাকে জননীরূপে পুজো করা সেই শুদ্ধসত্ত্ব ভাবেরই এক সার্থক প্রকাশ। বেলুড় মঠের দুর্গাপুজোয় কুমারী পুজোর অনুষ্ঠান তারই শাস্ত্রীয় ও বাস্তবায়িত রূপ। স্বামী বিবেকানন্দ এই ভাবেরই সঞ্চার চেয়েছিলেন সকলের মধ্যে। এ দিন কুমারীকে বেনারসি শাড়ি, গয়নায় সাজিয়ে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় শ্রীরামকৃষ্ণদেবের মন্দিরে। দর্শনের পরে সন্ন্যাসী এবং মঠের একনিষ্ঠ স্বেচ্ছাসেবকদের কোলে বসিয়ে কুমারীকে দুর্গামণ্ডপে আনা হয়। সমস্ত রীতি ও আচার মেনে চলে পুজো।
এ দিন কুমারী পুজো দর্শন করতে মণ্ডপে উপস্থিত ছিলেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রেসিডেন্ট স্বামী স্মরণানন্দ। ছিলেন মঠের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ এবং অন্য প্রবীণ সন্ন্যাসীরা। ১৯০১ সালে বেলুড় মঠে প্রথম দুর্গাপুজোর সূচনা করেন স্বামী বিবেকানন্দ। তাঁর ঐকান্তিক ইচ্ছাতেই মা সারদা সেই পুজোয় উপস্থিত ছিলেন। পুজোর সঙ্কল্প করা হয়েছিল শ্রীশ্রীমায়ের নামেই। সেই প্রথা আজও চলছে বেলুড় মঠের ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজোয়। এখনও মঠের দুর্গাপুজোর সঙ্কল্প করা হয় মা সারদার নামেই।
প্রবীণ সন্ন্যাসীরা জানাচ্ছেন, সন্ন্যাসীরা সঙ্কল্প করে কোনও পুজো বা বৈদিক ক্রিয়াকাণ্ড করার অধিকারী নন। তাই আদর্শ গৃহস্থাশ্রমী শ্রীশ্রীমায়ের নামেই বেলুড় মঠে দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয় আজও। মা সারদার নির্দেশেই বেলুড় মঠের পুজোয় জীববলি বন্ধ। স্বামী বিবেকানন্দের অনুরোধে প্রথম বছরের দুর্গাপুজোতেই কুমারী পুজোর ব্যবস্থা করেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণদেবের শিষ্যা গৌরী মা। পাদ্য-অর্ঘ্য-শঙ্খবলয়-বস্ত্রাদি সহযোগে স্বামী বিবেকানন্দ স্বয়ং ন’জন অল্পবয়স্কা কুমারীকে পুজো করেন।
সমস্ত জীবন্ত প্রতিমার চরণে অঞ্জলি ও হাতে মিষ্টান্ন, দক্ষিণা প্রদান করে ভূমিষ্ঠ হয়ে তাদের প্রণাম করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। এ দিন পুজোর পরে কুমারীকে কাঠের চেয়ারে বসিয়ে দুর্গামণ্ডপ থেকে নিয়ে যাওয়া হয় মঠের পুরনো মূল মন্দিরে। সেখানে শ্রীরামকৃষ্ণদেবকে দর্শনের পরে তাকে দোতলার বারান্দায় বসানো হয়। যাতে নীচে অপেক্ষমাণ ভক্ত-দর্শনার্থীরা দেখতে পান। তার পরে কেজি শ্রেণির পড়ুয়া আরাত্রিকা এবং তার স্বজনদের মঠের গাড়িতে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়। এ দিন কুমারী পুজো দেখার পাশাপাশি কয়েক হাজার মানুষ প্রসাদও গ্রহণ করেছেন বেলুড় মঠে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy