অনেক বদল চেনা ছবিতে। ধর্মঘটের দিনেও ভিড়ে ঠাসা হাওড়া স্টেশন। শুক্রবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
তৃণমূল আমলে ধর্মঘটের দিন যানবাহনের আয়োজনে ত্রুটি রাখে না সরকার। সঙ্গে থাকে দোকানপাট খোলা রাখলে, পথে গাড়ি নামালে পুলিশি নিরাপত্তা এবং প্রয়োজনে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস। তা সত্ত্বেও শাস্তির ভয়ে সরকারি কর্মচারীরা ছাড়া বিশেষ কেউ অফিসের দিকে পা বাড়াতেন না এত দিন। শুক্রবারের ধর্মঘট কিছুটা হলেও অন্য ছবি দেখাল।
সপ্তাহান্তের ছুটির ঠিক আগের দিন ধর্মঘট। টানা তিন দিন ছুটি পেয়ে দিঘা-মন্দারমণি বা ঝাড়গ্রাম বেড়িয়ে আসার চমৎকার সুযোগ। যেমনটা এর আগে বহু বার হয়েছে। বলাই হতো, শুক্র বা সোমবার ধর্মঘট ডাকলে সফল করাতে তেমন গা ঘামানোর দরকার নেই। কিন্তু এ দিন দেখা গেল, পড়ে পাওয়া সেই ছুটি উপভোগের সংস্কৃতি থেকে নিজেদের সরিয়ে রেখেছেন অনেকেই। শুধু সরকারি নয়, বেসরকারি সংস্থার বহু কর্মীও এ দিন কাজ করেছেন যথারীতি।
ভয় কেটেছে বাবা-মায়েদেরও। সাধারণত ধর্মঘটের দিনে ঝঞ্ঝাট এড়াতে বহু বেসরকারি স্কুল ছুটি ঘোষণা করে দেয় আগেভাগে। সরকারি স্কুলেও পড়ুয়াদের উপস্থিতি থাকে নগণ্য। কিন্তু এ দিন অনেক বেসরকারি স্কুলই ছুটি ঘোষণা করেনি। সেখানে ছাত্রছাত্রীরা দল বেঁধে হাজির হয়েছে স্কুলবাসে চেপেই। পড়াশোনা এমনকী পরীক্ষাও হয়েছে পুরোদস্তুর।
বন্ধ থেকে বাঙালি খানিকটা বিরূপ হয়েছে ঠিকই, তবে পুরোপুরি নয়। আর পাঁচটা কাজের দিনে যে ছন্দে থাকে গোটা রাজ্য, এ দিন তেমনটা ছিল না। সরকারি-বেসরকারি বাস ও মিনিবাস, ট্রাম, জলপথে ভেসেল আর পাঁচটা দিনের চেয়ে বেশি সংখ্যায় রাস্তায় নেমেছে। কিন্তু তাতে আগের ধর্মঘটের তুলনায় বেশি যাত্রী থাকলেও স্বাভাবিক ভিড় ছিল না। বরং বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোনও কোনও এলাকায় প্রায় খালিই যাতায়াত করেছে বাস-ট্রাম।
এমনিতে হরতাল-ধর্মঘটে ছোট-মাঝারি দোকান কিছু খুললেও ক্ষতি হতে পারে ভেবে বড় বড় দোকানের ঝাঁপ ফেলাই থাকে। তাদের সাহস জোগাতে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েছে সরকার। ভাঙচুর যারা করবে, তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করার জন্য নতুন আইন তৈরির কথাও ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই আশ্বাসে ভর করে শুক্রবার কলকাতায় কিছু বড় দোকান খুলেছিল। কিন্তু হাঁটতে হবে আরও অনেক পথ।
যদিও শুক্রবার আশা জুগিয়েছে ব্যাঙ্ক, জীবন বিমা নিগম। বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়নগুলোর ধর্মঘটে সাধারণত এই সব ক্ষেত্র স্তব্ধই থাকে। অথচ এ দিন কলকাতায় সদর দফতর-সহ রাজ্যে জীবন বিমা নিগমের প্রায় সব অফিসেই কাজ হয়েছে স্বাভাবিক ছন্দে। তেমনই রাজ্যে বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলো তো বটেই, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলোর মধ্যে স্টেট ব্যাঙ্ক খোলা ছিল পুরোদস্তুর। অন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলোর অধিকাংশই অবশ্য বন্ধ ছিল। ধর্মঘটে সামিল হয়েছিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কর্মীরাও। অন্য দিকে, জিপিও-তে এ দিন ৬১ শতাংশ কর্মী হাজির ছিলেন বলে খবর। একই ভাবে স্বাভাবিক ছিল সল্টলেকের অফিসপাড়া। সেক্টর ফাইভে তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রেরও তাল কাটেনি।
রোম যাওয়ার পথে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন দুবাই বিমানবন্দরে নেমে ধর্মঘট ব্যর্থ করার জন্য পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মানুষ বন্ধকেই বন্ধ করে দিয়েছেন।’’ তিনি জানান, সব ক’টি জেলা থেকে আসা রিপোর্ট অনুযায়ী, এ দিন সরকারি দফতরে উপস্থিতির হার ছিল ৯৮ শতাংশ। আর নবান্নে উপস্থিতির হার ছিল ৯৮ থেকে ৯৯ শতাংশ।
তবে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের মন্তব্য, ‘‘যে ধর্মঘট নাকি হয়ইনি, তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে দুবাই থেকেও বিবৃতি দিতে হচ্ছে। এতেই তো বোঝা যাচ্ছে, ধর্মঘটের প্রভাব কেমন!’’
বামেদের ধর্মঘটের ডাক উপেক্ষা করে দফতরে হাজির হওয়ার জন্য রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের এ দিন হাতে গরম উপহারও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর ঘোষণা, যে সব সরকারি কর্মী এ দিন কাজে যোগ দিয়েছেন, তাঁরা দুর্গাপুজোর সময়ে এক দিন অতিরিক্ত ছুটি পাবেন। কিন্তু লক্ষ্য যদি হয় কর্মসংস্কৃতি, তা হলে এমন ঘোষণা না হলেই বোধহয় ভাল হতো— বলছেন অনেকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy