Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

বিচারপতির নজরে জুতো, ভরা এজলাসে পাদুকাপুরাণ

ভরা এজলাস। গম্ভীর মুখে বিচারপতি, আইনজীবী, বাদী-বিবাদী হাজির সকলেই। সঙ্গে হাজির দু’জোড়া জুতো। তারাই মামলার প্রধান সাক্ষী! তাদের নিয়েই জোরদার সওয়াল। আর সেই জুতো তুলে বারবারই দেখানো হল খোদ বিচারপতিকে। তাঁকে দেখতেও হল। মামলা যে জুতো নিয়েই।

অঙ্কণ: সুমিত্র বসাক।

অঙ্কণ: সুমিত্র বসাক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৪ ০২:০২
Share: Save:

ভরা এজলাস। গম্ভীর মুখে বিচারপতি, আইনজীবী, বাদী-বিবাদী হাজির সকলেই। সঙ্গে হাজির দু’জোড়া জুতো। তারাই মামলার প্রধান সাক্ষী! তাদের নিয়েই জোরদার সওয়াল। আর সেই জুতো তুলে বারবারই দেখানো হল খোদ বিচারপতিকে। তাঁকে দেখতেও হল। মামলা যে জুতো নিয়েই।

কমেডি ছবির দৃশ্য নয়। ঘোর বাস্তব। বৃহস্পতিবার তা-ই চাক্ষুষ দেখল কলকাতা হাইকোর্ট।

মামলা শুরুর আগে থেকে বিচারপতির টেবিলের নীচের টেবিলে, যেখানে দাঁড়িয়ে আইনজীবীরা সওয়াল করেন, সেখানেই রাখা ছিল কলকাতা পুলিশের দু’জোড়া জুতো। দু’পক্ষের আইনজীবী বারবার বিচারপতিকে নিজের পক্ষের জুতো জোড়া তুলে দেখাচ্ছিলেন। শেষে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত বললেন, “জুতো দেখে আমি কী বুঝব? আমি তো এ বিষয়ে অভিজ্ঞ নই!” আইনজীবীরাও নাছোড়। দু’পক্ষই প্রমাণ করতে চাইছেন, তাঁদের জুতোই সঠিক।

আজিজুল হক সিদ্দিকী নামে এক জুতো প্রস্তুতকারী সংস্থার মালিক সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে জানান, তিনি টেন্ডার পেয়ে ১৩৫০ জোড়া জুতো তৈরি করে কলকাতা পুলিশকে সরবরাহ করেছেন। কিন্তু কলকাতা পুলিশ সেই জুতো সঠিক নয় বলে নিতে চাইছে না।

এ দিকে, কলকাতা পুলিশের বক্তব্য, নমুনা হিসেবে দেওয়া জুতোর সঙ্গে সরবরাহ করা জুতোর মিল নেই। এই জুতো পুলিশ ব্যবহার করতে পারবে না।

জুতো কেনার সময়ে কলকাতা পুলিশ তা তৈরির বরাত দেয় মঞ্জুষাকে। মঞ্জুষা টেন্ডার ডাকলে নানা সংস্থা দরপত্র জমা দেয়। এ বছর সব থেকে কম দর দিয়েছিল আজিজুল হক সিদ্দিকীর সংস্থা। যথাসময়ে পুলিশকে জুতো তৈরি করে সরবরাহও করে দেয় সংস্থাটি। কিন্তু এ দিন কলকাতা পুলিশের ব্যবহৃত একটি জুতো দেখিয়ে সরকারি আইনজীবী বারবার বোঝাতে চান, নমুনা হিসেবে দেওয়া জুতোটির নীচে ‘কেপি’ (কলকাতা পুলিশ) লেখা ছিল। সরবরাহ করা জুতোয় তা নেই। বিচারপতির দিকে জুতো তুলে তিনি দেখাতে চান, পুলিশের জুতোয় কী ভাবে কেপি লেখা থাকে। আরও অভিযোগ, পুলিশ যে জুতো ব্যবহার করছে, তা নরম। কিন্তু এ জুতো নরম নয়। তাই সেটিকে প্রয়োজনীয় মানের জুতো মনে করছে না পুলিশ।

পাল্টা সওয়াল করে সিদ্দিকীর সংস্থার পক্ষে আইনজীবী সুবীর সান্যাল নতুন তৈরি জুতো তুলে দেখিয়ে বলেন, নমুনা হিসেবে যে জুতো দেওয়া হয়েছিল, তার সঙ্গে তৈরি জুতোর কোনও তফাত্‌ নেই। সংস্থা টেন্ডার পেয়ে জুতো তৈরি করেছে। মঞ্জুষা সেই জুতো নিয়েছে। তারা আপত্তি জানায়নি। অথচ কলকাতা পুলিশ এখন জুতো নিতে আপত্তি করছে। এর ফলে সংস্থার বিরাট ক্ষতি হবে।

মঞ্জুষার পক্ষে আইনজীবী অঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, কলকাতা পুলিশ তাদের যে নমুনা দিয়েছিল, তারা সেই নমুনাই সংস্থাকে দিয়েছে। সংস্থা নমুনা অনুযায়ী জুতো তৈরি করেছে। তাই মঞ্জুষার এ ক্ষেত্রে কিছু করণীয় নেই।

তিন পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারপতি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, জুতোর মান বা ঠিক-বেঠিক নিয়ে তিনি কী বলবেন! তিনি তো জুতো বিশেষজ্ঞ নন। জুতো তৈরি নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা নেই। তিনি কলকাতা পুলিশকে হলফনামা দিয়ে এই জুতো নিয়ে তাঁদের অসুবিধা, অভিযোগ, তাঁরা কী চান জানাতে বলেন। আগামী মাসে মামলাটির ফের বিচার হবে।

প্রসঙ্গত হাইকোর্ট সূত্রের খবর, বহু দিন আগে এক জুতো নির্মাতার বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে জয়লাভ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

আদালতে পাদুকাপুরাণ!

অন্য বিষয়গুলি:

shoe case calcutta highcourt
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy