থমকে পথ। মঙ্গলবার, ধর্মতলায়। নিজস্ব চিত্র
আজ এই দল তো কাল ওই দল। পরপর চার দিন। মঙ্গলবারও মিছিল-সমাবেশের জেরে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ল শহরের একাংশ। গত তিন দিনের মতো মঙ্গলবারও ফের মিছিলের ঠেলায় শহরের বিভিন্ন রাস্তায় যানজটে নাজেহাল হলেন সাধারণ মানুষ। লালবাজারের দাবি, আজ বুধবার শহরে কোনও সমাবেশ-মিছিল নেই। তবে বৃহস্পতিবার ফের একটি ট্রেড ইউনিয়নের মিছিল রয়েছে। ২০ ডিসেম্বর, শনিবার বিশ্ব হিন্দু পরিষদের জমায়েত রয়েছে ময়দানের শহিদ মিনারে। এর মধ্যে ফের কোনও রাজনৈতিক দল মিছিল-সমাবেশ ডেকে ফেললে আবার ভোগান্তির আশঙ্কা করছে লালবাজার।
মঙ্গলবার দুপুর দেড়টা। ধর্মতলার কাছে ট্যাক্সিতে বসে বছর চল্লিশের অরুণ দাস। প্রায় তিরিশ মিনিট এক জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে ট্যাক্সিটি। পার্ক স্ট্রিট মোড় থেকে ওখানে পৌঁছতে লেগেছে আধ ঘণ্টা।
একই অবস্থা ওই রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাতানুকূল বাসের যাত্রী অতনু মণ্ডলেরও। হাওড়া থেকে ট্রেন ধরার কথা ছিল তাঁর। বললেন, “অনেক আগে বেরিয়েও স্টেশনে পৌঁছতে পারলাম না।”
দুপুর ২টো। পার্ক স্ট্রিটে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে গাড়ি। এস এন ব্যানার্জি রোড এবং চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ দিয়ে জওহরলাল নেহরু রোড পেরিয়ে শহিদ মিনারে ঢুকছে মিছিল। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে গতি কার্যত স্তব্ধ।
দুপুর আড়াইটে। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ থেকে ধর্মতলাগামী সব বাস ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট দিয়ে। এক ঘণ্টারও বেশিক্ষণ যানজটে আটকে থাকায় বাস থেকে নেমে পড়েন অনেকে। সকলেরই প্রশ্ন, এই নিত্য ভোগান্তি আর কত দিন?
পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন শহিদ মিনারে উত্তর ২৪ পরগনা সিপিএমের সমাবেশ এবং নবান্ন অভিযান ছিল। সমাবেশে যোগ দিতে দুপুর সাড়ে বারোটা থেকে একের পর এক মিছিল আসতে থাকে ধর্মতলায়। সঙ্গে আসতে থাকে সমর্থকদের গাড়ি-বাস। যা মূলত রাখা হয়েছিল ময়দানের বিভিন্ন মাঠ এবং চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে। মাঠে গাড়ি রেখে সেখান থেকে মিছিল করে যাওয়ার জন্যও যানজট বাড়ে।
বিশাল পুলিশবাহিনী মাঠে নামিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা অবশ্য করা হয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবারও মধ্য, দক্ষিণ ও উত্তর কলকাতার একটা বড় অংশে ফের পুলিশ-প্রশাসনকে ঠুঁটো করে দেওয়ার চিত্রটাই ছিল বাস্তব। সমাবেশে যোগ দিতে আসা সমর্থক এবং গাড়ি দ্রুত সরিয়ে দিতে পুলিশ সচেষ্ট হলেও লোকসংখ্যার কারণে দুপুর থেকেই অবরুদ্ধ হয়ে পরে শহরের একাংশ। ধর্মতলা, এস এন ব্যানার্জি রোড, জওহরলাল নেহেরু রোড, মেয়ো রোড, ডাফরিন রোড, সি আর অ্যাভিনিউ-সহ শহরের প্রধান রাস্তাগুলো দিনভর অবরুদ্ধ থাকে। আটকে পড়ে স্ট্র্যান্ড রোড, পার্ক স্ট্রিট, ডি এল খান রোড, খিদিরপুর রোডও। এ পি সি রোড, বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট-সহ বিস্তীর্ণ রাস্তায় গাড়িগুলিকে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
পুলিশ জানায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে দুপুরের পরে মিছিল আসতে থাকে শহিদ মিনারে। মূল মিছিল আসে শিয়ালদহ থেকে। এক পুলিশকর্তা বলেন, দুপুরে ধর্মতলা ও আশপাশে যেটুকু গাড়ি চলছিল ওই মিছিল আসার সময় তা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
সমাবেশ শেষে সওয়া চারটে নাগাদ সিপিএমের কর্মীরা নবান্ন অভিযান শুরু করেন। ডাফরিন রোডে তখন পুলিশ ব্যারিকেড করে দাঁড়িয়ে। সিপিএমের কর্মীরা মেয়ো রোড পেরিয়ে ডাফরিন রোডে এগোতে গেলেই পুলিশের সঙ্গে তাঁদের প্রবল ধস্তাধস্তি হয়। অবস্থানে বসে পড়েন কর্মী-নেতারা। শান্তি বজায় রাখার নির্দেশ দিয়ে কয়েক জন শীর্ষ নেতা ডেপুটেশন দিতে যান। ফিরে এসে বক্তৃতা করে সকলকে ফিরে যেতে বলেন। এর পরে গাড়িগুলি ফেরার পথ ধরলে আবার রাস্তায় গাড়ির চাপ বেড়ে যায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে প্রায় সন্ধ্যা পেরিয়ে যায়।
লালবাজার সূত্রে খবর, সিপিএমের নবান্ন অভিযান নিয়ে সোমবার অনেক রাত পর্যন্ত পুলিশের বড় কর্তারা পরিকল্পনায় ব্যস্ত ছিলেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য সব কিছু সামাল দিতে পারায় হাসি ফুটেছে পুলিশকর্মীদের মুখে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy