Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

আলোয়, আনন্দে শহরে বড়দিন উদ্‌যাপন

বড়দিনে সব থেকে বেশি কার ফটো লেন্সবন্দি হল তার হিসেব নিলে বোধ হয় বলিউডের কোনও তারকাকেও অনেক পিছনে ফেলে দেবে বিশাল। কে বিশাল? বিশাল কোনও উঠতি নায়ক নয়, কলকাতা চিড়িয়াখানার সাদা বাঘ। চিড়িয়াখানার হিসেব বলছে, বড়দিনে ৭২ হাজার ১৮৬ জন দর্শক এসেছেন। সকলেই ‘বিশাল দর্শন’ করেছেন। জনতার চিত্‌কারে বিশাল একটু বিরক্ত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু প্রতিবাদ করেনি। তার ছবি উঠেছে দেদার।

ছুটির বেলা... বড়দিনের উল্লাস। বৃহস্পতিবার, নিউ টাউনের ইকো পার্কে।  ছবি: শৌভিক দে।

ছুটির বেলা... বড়দিনের উল্লাস। বৃহস্পতিবার, নিউ টাউনের ইকো পার্কে। ছবি: শৌভিক দে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০১
Share: Save:

বড়দিনে সব থেকে বেশি কার ফটো লেন্সবন্দি হল তার হিসেব নিলে বোধ হয় বলিউডের কোনও তারকাকেও অনেক পিছনে ফেলে দেবে বিশাল।

কে বিশাল? বিশাল কোনও উঠতি নায়ক নয়, কলকাতা চিড়িয়াখানার সাদা বাঘ। চিড়িয়াখানার হিসেব বলছে, বড়দিনে ৭২ হাজার ১৮৬ জন দর্শক এসেছেন। সকলেই ‘বিশাল দর্শন’ করেছেন। জনতার চিত্‌কারে বিশাল একটু বিরক্ত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু প্রতিবাদ করেনি। তার ছবি উঠেছে দেদার।

শুধুই কি চিড়িয়াখানার সাদা বাঘ বিশাল? ময়দানে ভিক্টোরিয়ার সামনে ঘোড়ার গাড়ির সহিস শঙ্কর রাও এ দিন শহরের যে কোনও ব্যস্ত মানুষকে হার মানাবেন। ঘোড়ার গাড়িতে যাত্রী নিয়ে চরকির মতো তিনি ঘুরেছেন সারাদিন। জানালেন, ভিক্টোরিয়ার সামনে থেকে রেস কোর্স আর ফোর্ট উইলিয়াম হয়ে ফের ভিক্টোরিয়া গেট। পাঁচশো টাকা। বেলুন দিয়ে সাজানো শঙ্করের ঘোড়ার গাড়িতে সারাদিন ঘুরেছেন সব বয়সী মানুষ। শঙ্কর বলেন, “এই তো কটা দিন। অন্যান্য দিন ময়দানে হাওয়া খেয়েই সময় কেটে যায়। আজ হাওয়া অন্য দিকে বইছে।”

বড়দিনের পার্ক স্ট্রিটে রাতের হাওয়ায় মানুষের মাথায় আলোর শিং বেরোয় কি না সে প্রশ্ন কেউ তুলতেই পারেন। মেরি ক্রিসমাস লেখা আলোর গেট দিয়ে ঢোকার পরে যতদূর মানুষের মাথা দেখা গেল, সেই মাথার মধ্যে অনেক মানুষের মাথাতেই আলোর শিং। জানা গেল এক-একটা শিং বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। এত শিং দেখে কেউ কেউ আবার প্রশ্ন তুলেছেন শিং বিক্রি হলে লেজ বিক্রি কেন হবে না? যেমন খুশি তেমন সাজো এই বোধহয় ছিল পার্ক স্ট্রিটের ‘ক্যাচ লাইন।’

বড় দিনে কোথায় বেশি ভিড়? চিড়িয়াখানা, ময়দান, ভিক্টোরিয়া না পার্ক স্ট্রিট? বড়দিনের উত্‌সবে যারা পথে নেমেছিলেন তাঁরা জানাচ্ছেন এই ভাবে ভিড়ের তুলনা করা বোধহয় ঠিক নয়। অনেকেই ছুঁয়ে গিয়েছেন প্রতিটি জায়গা। ব্যারাকপুর থেকে আসা এক দম্পতি চিড়িয়াখানায় মাঠে ব্যাডমিন্টন খেলছিলেন। তাঁরা জানালেন, সাদা বাঘ, শিম্পাজি বাবু আর সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্বোধন করা ‘রেপটাইল্‌স হোম’ দেখা শেষ। এখন ব্যাডমিন্টন খেলে দুপুরের লাঞ্চ প্যাকেটে করে আনা বিরিয়ানি খাবেন। তার পর সোজা ময়দান। সেখানে ময়দানে ঘোড়ার গাড়িতে একটা সফর করে সোজা পার্ক স্ট্রিট। সেখানে সান্তার টুপি কিনতে হবে তো? চিড়িয়াখানার অধিকর্তা কানাইলাল ঘোষ জানালেন, চিড়িয়াখানায় খাবার নিয়ে ঢোকায় কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই বলেই মানুষ চিড়িয়াখানাকে পিকনিক স্পট করে ফেলেছে।

সারাদিন ময়দানেও পিকনিকের আমেজ। সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে তখনও একটা বাঁশের উপর ট্রাপিজের খেলা দেখিয়ে যাচ্ছে যাযাবররা। মাদল বাজাচ্ছেন বাবা আর পাঁচ বছরের মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে সরু বাঁশের উপর। পাশেই আবার চলছে বাঁদর নাচ। হাততালি পড়ছে খেলা শেষ হলে। কচিকাঁচাদের ভিড় মেরি গো রাউন্ড ঘিরে। কোনও কোনও মায়েদের এক হাতে ঝালমুড়ি অন্য হাতে ফিডিং বোতল।

সন্ধ্যা নামতে ময়দানের পুলিশ এসে বলে এ বার উঠে পড়ুন। একদল যুবক যুবতী তখন নিজস্বী তুলছিলেন।

তাঁরা প্রতিবাদ করেন। তাঁদের দাবি, ময়দানে ওঠার কোনও নির্দিষ্ট সময় নেই। পুলিশ বলে, আছে। শীতকালে সাড়ে পাঁচটা। এক অষ্টাদশী হেসে পুলিশকে বলেন, দাদা ঘড়ি হারিয়ে ফেলেছি।

তাই বুঝতে পারছি না কটা বাজে। আরেকটু বসতে দিন।

ওই দলটাই ময়দান থেকে হেঁটে পৌঁছে যায় পার্ক স্ট্রিটে। সন্ধ্যা সাতটা। পার্ক স্ট্রিটে তখন শুধু মানুষের ঢল। আলোয় ভাসছে রাস্তা। নানা রঙের আলো মেখে শৃঙ্খলাবদ্ধ জনতা হেঁটে যাচ্ছে অ্যালেন পার্কের দিকে। তার মাঝেই দেখা যায় তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এক বৃদ্ধ দম্পতিও নিজস্বী তুলছেন। আলোয় মাখা ওই জনসমুদ্রে অবশ্য কারও বয়সই অবশ্য ঠিক বোঝা যায় না।

তবে শুধু পার্ক স্ট্রিট, বা ভিক্টোরিয়াই নয় মানুষের ঢল নেমেছিল এ বার শহরের অন্য প্রান্ত নিউ টাউন আর সল্টলেকেও। নিকো পার্কে সকাল থেকেই নেমেছে মানুষের ঢল। আর ইকো পার্কে মানুষের ভিড় দেখে কেউ কেউ প্রশ্ন করেছেন এ কোথায় এলাম? ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডের জনসভায়?

অন্য বিষয়গুলি:

christmas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy