এই বাড়ি থেকেই ওই যুবকের দেহ উদ্ধার হয়। —নিজস্ব চিত্র।
ছেলে হোটেলে কাজে যাবেন। অথচ তিনি ঘুম থেকে না ওঠায় ঘরের দরজা খুলেছিলেন মা। খুলেই দেখলেন, দু’টি সাইকেল উধাও। সাইকেল নেই দেখে তিনি চিৎকার করে উঠলেও ছেলে সাড়া দেননি। ছেলের মুখ থেকে চাদর সরাতেই মা দেখেন, তাঁর মাথায় গভীর ক্ষত। মাথা থেকে রক্ত বেরিয়ে বিছানা ভিজিয়ে দিয়েছে। ওই দৃশ্য দেখএ মা চিৎকার করে উঠলে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। খবর যায় পুলিশে। পুলিশ এসে ওই যুবককে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, তপসিয়া থানা এলাকার বামনপাড়ায় ২৭ নম্বর বস্তির বাসিন্দা অভিজিৎ রজক (৩০) নামে ওই যুবককে খুনই করা হয়েছে। কে বা কারা ওই খুন করেছে তা মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত পরিষ্কার নয় পুলিশের কাছে। এ দিন ঘটনাস্থলে আসেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান মুরলীধর শর্মা, ডিসি দেবস্মিতা দাস-সহ লালবাজারের হোমিসাইড বিভাগের আধিকারিকেরা। ঘটনাস্থলে এসে ফরেন্সিক দল নমুনা সংগ্রহ করে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, তপসিয়ার বামনপাড়ায় একটি লম্বাটে আকারের বাড়িতে অভিজিৎ ও তাঁর চার কাকার পরিবার থাকে। বাড়িটির সামনের দিকে দরজা আছে। কিন্তু পিছনের দিকে জঙ্গল থাকায় ওই দিকে কোনও গেট নেই। পুলিশের অনুমান, দুষ্কৃতীরা পিছনের দিক দিয়ে বাড়িতে ঢুকেছিল।
অশোক ও ঊষা রজকের দুই ছেলে। বড় ছেলে অভিজিৎ একটি হোটেলে কাজ করেন। প্রতিদিন ভোর সাড়ে চারটেয় হোটেলে চলে যেতেন। মঙ্গলবার ওই সময়ে অভিজিৎ ঘুম থেকে না ওঠায় পাশের ঘর থেকে ‘বাবাই’, ‘বাবাই’ (অভিজিতের ডাকনাম) বলে চিৎকার করেন ঊষাদেবী। অভিজিৎ সাড়া না দেওয়ায় দরজা ঠেলে ঘরে ঢোকেন। ঢুকতেই দেখেন, দু’টি সাইকেল উধাও। এর পরে তিনি সাইকেল কোথায় বলে চিৎকার করলেও ছেলে সাড়া না দেওয়ায় ঊষাদেবী ছেলের মুখের উপর থেকে চাদর সরান। দেখা যায় অভিজিতের মাথায় একাধিক ক্ষতচিহ্ন। রক্তে বিছানা ভিজে গিয়েছে। ছেলের ওই অবস্থা দেখে চিৎকার করে কাঁদতে থাকেন ঊষাদেবী। পড়শিরা ছুটে আসেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশও।
পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, দুষ্কৃতীরা সংখ্যায় অন্তত তিন জন ছিল। তারা অভিজিৎদের পূর্ব পরিচিত। তারা চুরি করতে ঢোকার পরে অভিজিৎ ঘুম ভেঙে উঠে তাদের চিনে ফেলায় দুষ্কৃতীরা তাঁকে ভারী রড, অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে খুন করে বলে অনুমান পুলিশের। অভিজিৎ যে ঘরে ঘুমিয়েছিলেন সেই ঘরের পাশেই তার কাকিমা মঞ্জু রজক থাকেন।
এ দিন মঞ্জুদেবী বলেন, “সোমবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ শৌচাগারে যাওয়ার সময়ে অভিজিৎকে দেখেছিলাম। ও সেই সময়ে শৌচাগারে যাবে বলে ঘর থেকে বেরিয়েছিল।”
প্রসঙ্গত চুরি করতে এসে বাধা পেয়ে বছর তিনেক আগে নিউ আলিপুরে খুন হয়েছিলেন এক অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়র। আবার একই ভাবে গত বছরের জুলাই মাসে বেহালার এক বৃদ্ধা রংমিস্ত্রি ও কাঠের মিস্ত্রিদের হাতে খুন হয়েছিলেন। তদন্তকারীরা জানান, প্রতিটি খুনই লুটপাটের উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, “প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, তপসিয়ার ক্ষেত্রেও চুরি করতে এসে বাধা পাওয়ায় খুন করা হয়েছে যুবককে।” এ দিন তপসিয়া থানা ও হোমিসাইডের দল নিহত যুবকের মা ও বাবাকে থানায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
লালবাজারের এক কর্তা বলেন, “এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ-সহ ও অন্যান্য দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy