নতুন: আগুন নেভাতে সাহায্য করতে এই ড্রোন। নিজস্ব চিত্র
আকাশ থেকে বৃষ্টি ঝরিয়ে প্রকৃতির তাপ জুড়োয় মেঘ। এ বার আকাশ থেকে জল ঝরিয়ে বহুতলের আগুন নেভাবে ড্রোন। বহুতলের উপরের দিকে আগুন লাগলে হোসপাইপ নিয়ে উড়ে তার কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারবে সে। হোসপাইপ দিয়ে সেখানে জেট-গতিতে জল ঢাললে তাড়াতাড়ি নিভে যাবে আগুন। তলায় বসে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে ওই ড্রোনকে। শুধু অগ্নিনির্বাপণ নয়, ড্রোন-ক্যামেরা যে সব ছবি পাঠাবে, তার থেকে খুঁজে বার করা যাবে আগুনের উৎসও।
এম-টেক উত্তীর্ণ, ২৫ বছরের বেবেতো আলির মাথা থেকে বেরিয়েছে এই ড্রোন। তিন বছরের গষেণার ফল। নিজের হাতে এই ধরনের একটি ছোট ড্রোন বানিয়েছেন তিনি। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি রাজ্যের দমকল বিভাগের কর্তাদের কাছে সেই ড্রোন উড়িয়ে তার কর্মদক্ষতা প্রদর্শন করে এসেছেন বেবেতো।
বেবেতো জানান, তাঁর তৈরি ড্রোনটির বহনক্ষমতা ৩০ কিলোগ্রাম। মাটি থেকে হোসপাইপ নিয়ে সেটি ৭০-১০০ মিটার পর্যন্ত উঁচুতে উড়তে পারবে। দমকলের বক্তব্য, ১০০ কিলোগ্রাম ওজন বহনে সক্ষম ড্রোনও বানাতে পারবেন তিনি। জল ভরা হোসপাইপ নিয়ে সেই ড্রোন প্রায় ২৫০ মিটার পর্যন্ত উঁচুতে উড়তে পারবে। প্রয়োজনে তার চেয়েও বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন ড্রোন বানানো সম্ভব।
‘‘২০১৭ সালে এক দিন এ জে সি বসু রোড দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময়ে দেখতে পাই, এলআইসি ভবনে আগুন লেগেছে। বহুতলের উপরের দিকের সেই আগুন নেভাতে গিয়ে দমকলকর্মীদের হিমশিম অবস্থা নিজে দেখেছিলাম। দমকল বিভাগের সিঁড়ি আছে। কিন্তু সেটা পর্যাপ্ত বলে মনে হয়নি আমার। তখনই এই ড্রোন বানানোর কথা মাথায় আসে,’’ ড্রোন তৈরির ইতিবৃত্ত ব্যাখ্যা করলেন বেবেতো। তিনি জানান, তার পরেও শহরের সব চেয়ে উঁচু বাড়ি, এ জে সি বসু রোডের সেই বহুতলে আগুন লাগে। মহানগরে আরও বহুতল তৈরি হচ্ছে। সেখানে আগুন লাগলে এই ড্রোন কাজে লাগবে। একসঙ্গে তিন-চারটি ড্রোন বহুতলের বিভিন্ন দিক দিয়ে উড়িয়ে আগুনের উৎসমুখ পর্যন্ত পাঠিয়ে দেওয়া যাবে। উৎসমুখের একেবারে কাছ থেকে জেট-গতিতে জল ঢাললে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা যাবে দ্রুত।
‘‘মানুষের প্রাণ বাঁচানোই আমার উদ্দেশ্য। তাড়াতাড়ি আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে সেখানে আটকে পড়া মানুকে নামিয়ে আনার জন্য কিছুটা সময় তো পাওয়া যাবে। পার্ক স্ট্রিটের স্টিফেন কোর্টের অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহ স্মৃতি ফিরে আসবে না শহরবাসীর মনে,’’ বলেন বেবেতো। নিজের তৈরি ড্রোনের পেটেন্টের জন্য ইতিমধ্যেই আবেদন করেছেন ওই যুবক। শুধু বাংলায় সীমাবদ্ধ থাকতে চান না তিনি। বেবেতোজানান, তিনি তাঁর আবিষ্কার নিয়ে অন্য রাজ্যেও ঘুরবেন। এ দেশে সব চেয়ে বেশি বহুতল মুম্বইয়ে। সেখানকার দমকলের কর্তাদের সঙ্গেও দেখা করতে চান তিনি।
নতুন এই প্রযুক্তি প্রসঙ্গে রাজ্যের দমকল বিভাগের ডিরেক্টর অভিজিৎ পাণ্ডে বলছেন, ‘‘ভাবনাটা ভাল। তবে যে যন্ত্র আমাদের দেখিয়েছেন, সেটির আরও পরিমার্জন দরকার। সে কথা ওঁকে বলেছি। তা করতে পারলে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy