Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Crime

মারধরে ছেলের হাতে মৃত্যু মায়ের

পুলিশ জানিয়েছে, রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকার বাবুপাড়ার পূর্ব পুঁটিয়ারিতে ছেলে রাকেশের সঙ্গে থাকতেন নমিতা দত্ত (৫০)।

মৃতদেহ বার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার, রিজেন্ট পার্কে। (ডান দিকে) ধৃত রাকেশ দত্ত। নিজস্ব চিত্র

মৃতদেহ বার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার, রিজেন্ট পার্কে। (ডান দিকে) ধৃত রাকেশ দত্ত। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:৪৮
Share: Save:

পড়শিরা প্রায়ই দেখতেন, মাকে মারধর করছে ছেলে। কখনও দেখা যেত, মারের চোটে প্রৌঢ়ার চোখ ফুলে গিয়েছে বা ঠোঁট কেটে গিয়েছে। কিন্তু পড়শিরা পুলিশে অভিযোগ করতে চাইলে মা-ই তাঁদের বাধা দিতেন।

মঙ্গলবার সেই ছেলের মারধরেই প্রৌঢ়া মায়ের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠল রিজেন্ট পার্কে। আরও অভিযোগ, হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মা মারা গিয়েছেন বলে প্রথমে দাবি করেছিল ছেলে। কিন্তু প্রতিবেশীদের সন্দেহ হওয়ায় তাঁরা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে গ্রেফতার করে ছেলে রাকেশ দত্তকে।

পুলিশ জানিয়েছে, রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকার বাবুপাড়ার পূর্ব পুঁটিয়ারিতে ছেলে রাকেশের সঙ্গে থাকতেন নমিতা দত্ত (৫০)। এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে গিয়ে রাকেশ বলে, তাঁর মা অজ্ঞান হয়ে গিয়েছেন। ওই চিকিৎসক এসে নমিতাদেবীকে ডাকতে গিয়ে দেখেন, দেহে সাড় নেই। কিন্তু শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এর পরে তিনিই বেরিয়ে প্রতিবেশীদের বলেন পুলিশে খবর দিতে। পুলিশ এসে নমিতাদেবীকে উদ্ধার করে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যায়।

স্থানীয় এক বাসিন্দা ইন্দ্রনীল সাহা জানিয়েছেন, রাকেশ প্রতিদিনই বিনা কারণে মাকে মারধর করত। এ দিনও তাঁরা নমিতাদেবীকে মারধর করার আওয়াজ পেয়েছিলেন বলে তাঁদের দাবি। আরও অভিযোগ, নমিতাদেবীকে মারধর করার সময়ে রাকেশকে প্ররোচনা দিতেন তার এক মামা। পুলিশ তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছে। পড়শিদের দাবি, ছেলের হাতে মার খেলেও নমিতাদেবী কোনও দিন প্রতিবাদ করেননি। উল্টে বলতেন, ‘‘আমাকে ঘরে মারছে, তোমাদের কী?’’ এমনকি পাড়ার যুবকেরা বহু বার ঘটনাটি নিয়ে পুলিশে যেতে গেলেও বাধা দিতেন প্রৌঢ়া। স্থানীয় একটি ক্লাবের সদস্য বিক্রমজিৎ দত্ত জানান, মাঝেমধ্যে তাঁরা দেখতেন পাড়ার কল থেকে জল আনতে গিয়ে টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যাচ্ছেন নমিতাদেবী। বিক্রমজিতের কথায়, ‘‘মার খেতে খেতে প্রায় আধমরা হয়ে গিয়েছিলেন ওই প্রৌঢ়া।’’

কিন্তু মারধর কিসের জন্য? তা অবশ্য অজানা স্থানীয়দের কাছে। তবে পড়শিরা জানিয়েছেন, রাকেশ কোনও কাজ না করলেও দামি মোবাইল, দামি পোশাকের শখ ছিল তার। অভিযোগ, তার জন্য মাকে চাপ দিয়ে টাকা আদায় করত সে। অথচ, নমিতাদেবী সামান্য পরিচারিকার কাজ করতেন। সংসার চালিয়ে ছেলের শখ মেটানো বিলাসিতা হলেও তিনি যথাসাধ্য করতেন। কিন্তু ছেলের তাতে কোনও হেলদোল ছিল না বলেই অভিযোগ। যদিও রাকেশের এই স্বভাবকে মানসিক বিকার বা অসুখ বলতে নারাজ মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব। তাঁর কথায়, ‘‘এমন আচরণ স্বাভাবিক নয় ঠিকই। কিন্তু এটা যে অসুখ, সে কথাও বলা যায় না। কারণ এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ছেলেকে বাঁচানোর চেষ্টা করতেন মা। একাধিক বার মার খেয়েও তিনি কিছু না বলায় প্রশ্রয় পেয়ে গিয়েছিল ছেলে।’’

পুলিশ জেনেছে, সকালে মাকে মারধর করার পরে পাড়ার দোকানে চা খেতে গিয়েছিল রাকেশ। সেখানে তার সঙ্গে দেখা হয় মেসো বিশ্বজিৎ সরকারের। বিশ্বজিৎবাবু পরে বলেন, ‘‘চা খেতে এসেও কিছু বলেনি। কিছু ক্ষণ পরে দিদির বাড়ির সামনে দিয়ে যেতে গিয়ে দেখি, ও বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছে। তখন বলে, মা মারা গিয়েছে।’’

বিশ্বজিৎবাবু আর পড়শিদের থেকে খবর পেয়েই পুলিশ এসে নমিতাদেবীর দেহ উদ্ধার করে।

অন্য বিষয়গুলি:

Crime youth Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy