শহরের রাস্তায় হলুদ ট্যাক্সি। ফাইল চিত্র
নিউ ইয়র্কের ইয়েলো ক্যাব বা লন্ডনের ব্ল্যাক ক্যাবের মতোই কলকাতার ইতিহাসের সাক্ষী কালো হলুদ কিংবা হলুদ ট্যাক্সিও। শহর ঘোরার অন্যতম যান হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন বড় শহরের ট্যাক্সির মতোই এটিরও নাম রয়েছে। কিন্তু সাদা ওলা-উব্রের যুগে এখন তা যেন কিছুটা মলিন। ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার গর্ভে থাকলেও কলকাতার ঐতিহ্যের অন্যতম অঙ্গ সেই হলুদ ট্যাক্সিকে এ বার পর্যটনের হাতিয়ার করতে চায় রাজ্য। শহরের ‘হেরিটেজ’ স্থাপত্য চাক্ষুষ করার মতোই সেই ট্যাক্সি চেপে শহর ঘোরার নতুন স্বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে পর্যটন দফতর।
প্রকৃতির পাশাপাশি, শহরের ঐতিহ্যও পর্যটক টানার অন্যতম মাপকাঠি। দেশ-বিদেশের সরকার ও পর্যটন শিল্প, উভয়েই সেই সব ঐতিহ্যকে মোড়কজাত করে পর্যটকদের সামনে তুলে ধরে। হেঁটে সেই সব ঐতিহ্য দেখা বা স্থানীয় খাবারের ইতিহাসকে এক সুতোয় বেঁধে বিদেশের মতো কলকাতা-সহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে পর্যটক টানার পরিকল্পনা করছে পর্যটন সংস্থাগুলি।
সেই সূত্রেই আগামী দিনে ট্যাক্সিতে চেপে কলকাতা ঘোরার স্বাদ দিতে চায় রাজ্য। পর্যটন দফতরে প্রধান সচিব অত্রি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কলকাতার আধুনিক ইতিহাসের অঙ্গ এই ট্যাক্সি। তাতে চেপে পর্যটকেরা যাতে এই ঐতিহ্যশালী শহর ঘোরার সম্পূর্ণ একটি অভিজ্ঞতার স্বাদ পান, তার জন্য ভাবনাচিন্তা চলছে।’’ এ নিয়ে সম্প্রতি ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন টুর অপারেটর্সের এ রাজ্যের
প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রাথমিক বৈঠক করেছেন পর্যটন দফতরের কর্তারা। ওই সংগঠনের রাজ্যের প্রেসিডেন্ট দেবজিৎ দত্ত ও সদস্য নীলাঞ্জন বসুর মতে, ঠিক ভাবে পরিকল্পনা করতে পারলে পর্যটক টানতে পারে হলুদ ট্যাক্সিও। দেবজিতবাবু জানান, এ নিয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি হবে। পরিকল্পনাটির মডেল কী হবে, সফরের রুট, গাড়িগুলির পার্কিং ব্যবস্থা কোথায় হবে, কী ধরনের আর্থিক সুবিধার প্রয়োজন হবে, সে সব গুরুত্ব পাবে ওই রিপোর্টে। তবে তাঁদের দাবি, আধুনিক চাহিদার সঙ্গে ট্যাক্সির ভিতরের স্বাচ্ছন্দ্য বাড়াতে তার সজ্জা বদলালেও বাইরের চেহারা একই রাখতে হবে। না হলে কলকাতার ঐতিহ্যের ছাপ হারিয়ে যাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, শহরে এখন প্রায় ২১ হাজার হলুদ ট্যাক্সি রয়েছে। অনেকগুলিই আবার ১৫ বছরের পুরানো। এই পরিকল্পনা কার্যকর হলে কতগুলি ট্যাক্সি সেই সুযোগ পাবে, গোটা বিষয়টাই প্রাথমিক পর্যায়ে থাকায় সে সব এখনও স্পষ্ট নয়।
তবে দেশের প্রথম গাড়ি কারখানা উত্তরপাড়ায় হিন্দুস্তান মোটরসের এই গাড়ি কারখানার ঝাঁপ এখন বন্ধ। সেখানে নতুন ট্যাক্সি আর তৈরি না হওয়ায় কত দিন পুরানো গাড়িগুলিকে পর্যটনের কাজে ব্যবহার করা সম্ভব, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে। তা ছাড়া মেরামতির জন্য সেগুলির যন্ত্রাংশই বা কতদিন মিলবে, তাও ভাবনার বিষয় বলে মনে করছেন অনেকে।
এ প্রসঙ্গে অবশ্য উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়া গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের প্রচলিত নিয়মের উপরেই ভরসা রাখছেন পর্যটন দফতরের কর্তারা। প্রচলিত নিয়মে কোনও গাড়ি তৈরি বন্ধ হওয়ার পরেও চালু গাড়ির যাতে সমস্যা না হয়, সে জন্য দীর্ঘ দিন বাজারে তার যন্ত্রাংশের জোগান দেয় গাড়ি সংস্থাই। বস্তুত, কারখানা বন্ধ হলেও এখন চালু অ্যাম্বাসাডরগুলির যন্ত্রাংশের জোগান রয়েছে। অত্রিবাবুর দাবি, পুরনো অনেক ‘ভিন্টেজ কার’ এখনও চলে। তিনি বলেন, ‘‘আগে এই পরিকল্পনাটা চালু হোক। রাঁধতে হলে তার মশলা বাটার ব্যবস্থাও হবে।’’
কলকাতার সফরের সেই রান্না কতটা সুস্বাদু হয়, সেটাই এখন দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy