অগ্নিগর্ভ অসম। সিএবি বিরোধিতায় পথে মানুষ। পিটিআই
ভূস্বর্গের পরে এ বার উত্তর-পূর্ব ভারতের পর্যটনের আকাশেও সিঁদুরে মেঘ!
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি)-এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার ত্রিপুরা আর বুধবার থেকে অসমের বিভিন্ন প্রান্তে আগুন জ্বলতে শুরু করেছে। একাধিক জায়গায় বাস, রেল স্টেশনে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোথাও গাড়ি লক্ষ্য করে ছোড়া হয়েছে বাঁশ, পাথর। টায়ার জ্বালিয়ে চলছে রাস্তা অবরোধ। যার জেরে বর্তমানে সেখানে বন্ধ মোবাইলের এসএমএস ও ইন্টারনেট পরিষেবা। পরিস্থিতি সামলাতে নেমেছে সেনা, জারি হয়েছে কার্ফু। বৃহস্পতিবারেও সেই ছবির বদল হয়নি।
উত্তর-পূর্ব ভারতের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতে পর্যটন ব্যবসায় ফের সিঁদুরে মেঘ দেখছে কলকাতার ভ্রমণ সংস্থাগুলি। শহরের এক ভ্রমণ সংস্থার কর্ণধার সৌমিত্র কুণ্ডু বলেন, ‘‘মানুষ বেড়াতে যান টেনশন কাটাতে। কিন্তু সেখানে গিয়েও ফের টেনশনে পড়তে কেউ কি চাইবেন? আমরা
জেনেশুনে কাউকে সেই আগুনে ঠেলে দিতে পারি না।’’
ভ্রমণপিপাসুদের কাছে উত্তর-পূর্ব ভারত প্রিয় গন্তব্য। সাধারণত অক্টোবর থেকে মে মাস পর্যন্ত সবুজে ঘেরা পাহাড়ি এলাকায় ভিড় জমান পর্যটকেরা। যেমন, গত ১০ ডিসেম্বর গুয়াহাটি-শিলং ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল উত্তর কলকাতার প্রায় ৫০ জনের একটি দলের। কিন্তু অসমের এই পরিস্থিতে সেই পরিকল্পনা বাতিল করেছেন তাঁরা। দলের এক সদস্য ঋক বসু বলেন,
‘‘ওখানে গিয়ে হয়তো গুয়াহাটির হোটেলেই কয়েক দিন বন্দি থাকতে হল। কিংবা গাড়িতে পাথর ছোড়া হল। আতঙ্ক নিয়ে তো আর বেড়ানো যায় না। তাই দলের কেউ কার্শিয়াং যাচ্ছেন। কেউ আবার আত্মীয়ের বিয়েতে বেঙ্গালুরু চলে যাচ্ছেন। কেউ আবার
কলকাতায় থেকেই খাবার ও সিনেমার স্বাদ নেবেন।’’ তবে যে অনলাইন সংস্থার মাধ্যমে তাঁরা শিলংয়ের হোটেল ঠিক করেছিলেন, সেই সংস্থা পুরো টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন দলের আর এক সদস্য প্রণব রায়।
উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে পাড়ি দেওয়ার মূল প্রবেশদ্বার যে গুয়াহাটি, সেখানেও চলছে কার্ফু। এমন ভাবে যদি অসম অশান্ত থাকে সে ক্ষেত্রে ডিসেম্বর ও মার্চের বুকিংগুলিও বাতিল হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে শহরের ভ্রমণ সংস্থাগুলি। এক সংস্থার কর্ণধার নীতিশ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘২০ ডিসেম্বর তিনটি দলের শিলং যাওয়ার বুকিং রয়েছে। তাঁরা সকলেই যোগাযোগ করছেন। পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, তা দেখতে দিন সাতেক সময় চেয়েছি।’’
অবিরাম গোলা-গুলি, প্রাণহানির কারণে কাশ্মীর পর্যটন ব্যবসায় বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে ভ্রমণ সংস্থাগুলি। আবার ‘সিএবি’-র কারণে উত্তর-পূর্ব ভারতের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি ফের সেই ক্ষতির আশঙ্কাই উস্কে দিচ্ছে বলে জানাচ্ছেন আর এক ভ্রমণ সংস্থার কর্ণধার রক্তিম রায়। ট্রাভেল এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের সভাপতি বাচ্চু চৌধুরীর কথায়, ‘‘একটা আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে ঠিকই। যদিও এত তাড়াতাড়ি সব কিছু স্পষ্ট করে বলা সম্ভব নয়।’’
বুধবার দিঘা বিজনেস কনক্লেভে রাজ্য সরকার দাবি করেছিল, প্রতি বছর ১৬ লক্ষ বিদেশি পর্যটক রাজ্যে আসেন। গত কয়েক বছরের তুলনায় তা প্রায় ১৩৫ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু অসম অশান্ত থাকলে কত জন পর্যটক শীতের মরসুমে আদৌ বঙ্গে পা দেবেন, তা নিয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। এক প্রশাসনিক কর্তার কথায়, ‘‘অনেক পর্যটকই পশ্চিমবঙ্গ হয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যান। ফলে সেখানে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল হলে তার প্রভাব রাজ্যের পর্যটনেও পড়তে পারে।’’ এখনও পর্যন্ত কত জন উত্তর-পূর্ব ভারতে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেছেন, তার পুরোপুরি হিসেব এখনও করে উঠতে পারেননি পর্যটন সংগঠনগুলি। এক ভ্রমণ সংস্থার কর্তা অর্পণ মিত্রের দাবি, ‘‘প্রাথমিক ও আনুমানিক ভাবে মনে হচ্ছে, এখনই অন্তত দেড়শো কোটি টাকার লোকসান হবে। পরে কী হবে বলা সম্ভব নয়।’’
ওই শিল্প সম্মেলনে এসে ইন্ডিয়ান টুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের তরফে দেবজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘এমন পরিস্থিতি যে, বেড়ানোর পরিকল্পনা বাতিল করলেও পর্যটকদের কাছে ক্যানসেলেশন ফি দাবি করা যাবে না। ফলে বিপুল ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy