Advertisement
E-Paper

শব্দ-তাণ্ডবের ‘মুক্তাঞ্চল’ বিধাননগর, রাস্তায় অতিষ্ঠ পুরপ্রতিনিধি

কালীপুজোর রাতে কলকাতার মতো বিধাননগর পুর এলাকাতেও বাজির দাপটে অতিষ্ঠ হয়েছেন সাধারণ মানুষ। অসহায় পথকুকুরেরা ভয়ে রাস্তায় চিৎকার করেছে কিংবা নির্মীয়মাণ বাড়ির ভিতরে ঢুকে আশ্রয় নিয়েছে।

An image of Firecrackers

—প্রতীকী চিত্র।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:৫০
Share
Save

রবিবার রাত সাড়ে ১০টা। শব্দবাজির বিকট আওয়াজে কানে তালা ধরে গিয়েছিল বিধাননগর পুরসভার এক পুরপ্রতিনিধির বৃদ্ধ মা-বাবার। সেই প্রবীণ দম্পতি অবশ্য ওই পুরপ্রতিনিধির পাশের ওয়ার্ডের বাসিন্দা। যাঁরা বাজি ফাটাচ্ছিলেন, তাঁদের বিরত করতে একাধিক বার ওই পুরপ্রতিনিধি ফোনে তাঁদের কাছে বার্তা পাঠান। কিন্তু সেই অনুরোধ গ্রাহ্য না করায় শেষে পুরপ্রতিনিধি নিজেই লোকজন নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ধমক দিয়ে বাজি ফাটানো বন্ধ করেন।

কালীপুজোর রাতে কলকাতার মতো বিধাননগর পুর এলাকাতেও বাজির দাপটে অতিষ্ঠ হয়েছেন সাধারণ মানুষ। অসহায় পথকুকুরেরা ভয়ে রাস্তায় চিৎকার করেছে কিংবা নির্মীয়মাণ বাড়ির ভিতরে ঢুকে আশ্রয় নিয়েছে। রাজারহাট-নিউ টাউন এলাকার বাসিন্দা ওই পুরপ্রতিনিধির ঘটনাটি সারা দিনের দুর্ভোগেরই একটি খণ্ডচিত্র। তাঁর হাতে ক্ষমতা থাকায় তিনি বাজি ফাটানো বন্ধ করিয়েছেন। কিন্তু সিংহভাগ এলাকাতেই বাজির দাপটে কার্যত বিনিদ্র রাত কেটেছে সল্টলেক ও রাজারহাট এলাকার বাসিন্দাদের। বিধাননগর কমিশনারেট জানিয়েছে, ১৬৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৯০ কেজি বাজিও আটক করা হয়েছে।

ওই পুরপ্রতিনিধির কথায়, ‘‘আমি বাবা-মায়ের বাড়ির কাছে গিয়ে দেখি, সেখানে যথেচ্ছ ভাবে বাজি ফাটানো হচ্ছে। কুকুরগুলো ভয়ে এ দিক-সে দিক দৌড়চ্ছে। যাঁরা বাজি ফাটাচ্ছিলেন, তাঁরা আমার ফোন পেয়ে প্রথমে থেমে যান। পরে আবার একই ভাবে বাজি ফাটানো শুরু করেন। তার পরে আমি বাধ্য হয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ওঁদের ধমক দিই।’’ সরকারি ভাবে বাজি বিক্রির অনুমতি নেওয়ার জন্য উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। কিন্তু একটিও আবেদনপত্র জমা পড়েনি। যার জেরে বিধাননগরে বাজি কেনাবেচা নিষিদ্ধ করেছিল পুলিশ। প্রকাশ্যে বাজি বিক্রি বিশেষ চোখে পড়েনি। তা সত্ত্বেও শনিবার, ভূত চতুর্দশীর সকাল থেকেই বিভিন্ন পাড়ায় শব্দবাজি ফেটেছে। ফলে, কালীপুজোর রাত যে স্বস্তিতে কাটবে না, সেই আশঙ্কা ছিলই।

বিধাননগর কমিশনারেটের মুখপাত্র তথা গোয়েন্দা-প্রধান বিশ্বজিৎ ঘোষ বললেন, ‘‘পুলিশ শব্দবাজি ফাটার খবর পেলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। দেড়শোর বেশি অভিযুক্ত গ্রেফতার হয়েছেন। এখানে বাজি বিক্রি না হলেও বাইরে থেকে কিনে এনে ফাটানো হয়েছে। কোথায়, কোন ছাদে বাজি ফাটছে, সেই অভিযোগ না পেলে পুলিশ কোথায় কোথায় ছুটবে? এক জনের বাজি ফাটানোর আনন্দ যে অন্য জনের ক্ষতি করতে পারে, সেটা যদি মানুষ না বোঝেন, তা হলে সব চেষ্টাই ব্যর্থ হবে।’’ বাসিন্দাদের অনেকেরই অভিযোগ, চোরাপথে প্রচুর শব্দবাজি বিধাননগরে এনে বিক্রি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে চম্পাহাটি, বারাসত কিংবা নৈহাটির মতো জায়গা থেকে বাজি কিনে এনেও অনেকে ফাটিয়েছেন বলে খবর। রাত বাড়তেই চিনার পার্ক, বাগুইআটি, লেক টাউন, বাঙুর কিংবা সল্টলেকের একাধিক ব্লক থেকে শব্দবাজি ফাটার অভিযোগ আসতে থাকে।

ব্যতিক্রম ছিল না নিউ টাউনের মতো পরিকল্পিত ও অভিজাত এলাকাও। রাস্তায় প্রকাশ্যে লোকজনকে বাজি ফাটাতে দেখা গিয়েছে সেখানে। নিউ টাউনের আবাসিকদের একটি সংগঠনের সম্পাদক সমীর গুপ্তের অভিযোগ, ‘‘একাধিক ফোন পেয়েছি। বিশেষত, পোষ্যেরা বাজির শব্দে ভয় পেয়ে অসহায় হয়ে পড়ছে, এমন অভিযোগই বেশি। আমরা পুলিশকে জানিয়েছি।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Firecrackers Bidhannagar municipality Bidhannagar Kolkata Police Kali Puja 2023 Diwali 2023

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}