Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
international women's day

স্টিয়ারিং হাতে প্রতিদিন মানসীরাই ‘নারী দি-বস’

অনুযোগের সুরে তিন জনই অবশ্য জানালেন, প্রতিদিনের যাতায়াতের পথে হাওড়া পুলিশ কমিশনারেট সে ভাবে তাঁদের সাহায্য করে না।

ত্রয়ী: অ্যাপ ক্যাবের সঙ্গে মানসী মৃধা,   নিজস্ব চিত্র

ত্রয়ী: অ্যাপ ক্যাবের সঙ্গে মানসী মৃধা, নিজস্ব চিত্র

ফিরোজ ইসলাম 
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২১ ০৬:৫৮
Share: Save:

অর্ধেক আকাশ হওয়ার গালভরা বিশেষণে আস্থা নেই মানসী মৃধা, সুষমা মিদ্দে কিংবা শিউলি মুখোপাধ্যায়ের। বরং নিজেদের আকাশ নিজেরাই সাজিয়ে তুলেছেন অ্যাপ-ক্যাবের এই মহিলা চালকেরা।

গোলাপি অ্যাপ-ক্যাবের চালক হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও পথটা মোটেও ততটা রঙিন ছিল না ওঁদের।

মহিলা চালক দেখে অন্য গাড়ির চেপে দেওয়ার চেষ্টা থেকে পার্কিং খোঁজার জন্য যুদ্ধ— সবই তাঁদের সামলাতে হয়। এমনকি নির্দিষ্ট ট্রিপ শেষ করে ইনসেন্টিভ পেতে কখনও সখনও দুপুর থেকে মাঝরাত গড়িয়ে যায়। তবু বেহাল সংসারের কথাই মনে আসে ঘুরেফিরে। তাই মাথা সোজা রেখে আরও শক্ত করে স্টিয়ারিং আঁকড়ে ধরেন ওঁরা।

শিউলি মুখোপাধ্যায়

শিউলি মুখোপাধ্যায়

“বাড়ির লোকের মতোই সতর্ক থেকে নিয়ে যাই যাত্রীদের।” বলছিলেন রাজারহাট সংলগ্ন নারায়ণপুরের বাসিন্দা শিউলি মুখোপাধ্যায়। বাবা, মা আর ছোট দুই ভাইয়ের অনেকটা দায়িত্ব তাঁর কাঁধে। বেলুড়ের সুষমা মিদ্দে এখন কলকাতার নামী অ্যাপ-ক্যাব সংস্থার চালক। স্বামী বিশেষভাবে সক্ষম। ছেলের পড়াশোনা আর সংসার সবটা টানতে হয় তাই সুষমাকে। সন্তোষপুর সার্ভে পার্ক এলাকার বাসিন্দা মানসী মৃধার স্বামী ছোট দুই সন্তানকে রেখে মারা যান। জীবিকার সন্ধানে বেরোনো মানসীকে গাড়ি চালানো শিখতে পরামর্শ দেন তাঁর এক পরিচিত। কিছু দিনের মধ্যেই দক্ষ চালক হয়ে ওঠেন। এমনকি প্রশিক্ষক হিসেবে কাজও করেন। পরে, রাজ্য সরকারের গতিধারা প্রকল্পের সাহায্য নিয়ে ক্যাব চালানোর শুরু।

সুষমা মিদ্দে।

সুষমা মিদ্দে।

রাতে-বিরেতে অ্যাপে অবস্থান দেখে অলিগলি সামলে গন্তব্যে পৌঁছতে এখন আর তেমন বেগ পেতে হয়না সুষমা, শিউলিদের। তবে যাত্রী সামলে নিত্য নতুন অভিজ্ঞতা ঝুলিতে ভরে। সুষমা জানাচ্ছেন, এক বার রাতের দিকে কমবয়সি তিন পড়ুয়া মত্ত অবস্থায় তাঁর গাড়িতে উঠেছিলেন। তাঁদের এক জন ক্যাবের স্টিয়ারিংয়ে মহিলা দেখে ঘাবড়ে যান। নিজেদের অবস্থায় লজ্জিত হয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন তাঁরা। গন্তব্যে পৌঁছে ঠিক মতো ভাড়া দিয়ে ওঁরা ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন চালককে। সেই থেকে শহরের রাতপথে ভরসা হারান না সুষমা।

শিউলিকে অবশ্য এক বার কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল। মাঝপথে গাড়ি থামিয়ে এক যাত্রী পান কিনে সামনের আসনে বসেন। এর পরেই শুরু আপত্তিকর কথাবার্তা। বাধ্য হয়ে হাজরার কাছে কলকাতা পুলিশের সাহায্য নেন তিনি। ওই যাত্রীকে আটক করা হয়েছিল। অন্য অভিজ্ঞতা হয়েছিল মানসীর। লকডাউন তখন সবে আলগা হচ্ছে। এক মহিলা যাত্রী পুরস্কার হিসেবে তাঁকে দু’হাজার টাকা দিয়ে দেন !

অনুযোগের সুরে তিন জনই অবশ্য জানালেন, প্রতিদিনের যাতায়াতের পথে হাওড়া পুলিশ কমিশনারেট সে ভাবে তাঁদের সাহায্য করে না। তবে ওঁরা এক বাক্যে মানছেন কলকাতা পুলিশের সহযোগিতার কথা। এমনকি দু’-এক বার একমুখী রাস্তা চিনতে ভুল হলেও পুলিশ যেচে এগিয়ে গিয়ে সাহায্য করে তাঁদের।

ওঁদের জীবনযুদ্ধের প্রতিদিনের চালকও ওঁরাই। তাই আলাদা করে কোনও বিশেষ দিনের প্রভাব পড়ে না। লাল সিগন্যাল থেকে সবুজ হওয়ার অপেক্ষায় থাকা মানসী, সুষমা, শিউলিদের সামনে শুধুই গন্তব্যের হাতছানি।

অন্য বিষয়গুলি:

international women's day Woman cab driver
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy