Advertisement
১৯ জানুয়ারি ২০২৫
Murder

গায়ে আগুন লাগিয়ে বাবাকে ‘খুন’, ধৃত মেয়ে

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম বিশ্বনাথ আঢ্য (৫৬)। বাড়ি এন্টালির ক্রিস্টোফার রোডে।

বিশ্বনাথ আঢ্য। নিজস্ব চিত্র।

বিশ্বনাথ আঢ্য। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২১ ০৫:০৭
Share: Save:

গঙ্গার ঘাট সংলগ্ন একটি পার্কের ভিতরে এক প্রৌঢ়ের অগ্নিদগ্ধ দেহ উদ্ধার হয়েছিল। শনিবার রাতে, উত্তর বন্দর থানা এলাকার চাঁদপাল ঘাটের কাছে ওই ঘটনায় মৃতের মেয়ের বিরুদ্ধেই তার বাবাকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ উঠল। মৃতের ভাইয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবার পুলিশ অভিযুক্ত মেয়েকে গ্রেফতার করেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম বিশ্বনাথ আঢ্য (৫৬)। বাড়ি এন্টালির ক্রিস্টোফার রোডে। ধৃত পিয়ালি আঢ্যকে সোমবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

পুলিশ জানায়, রবিবার ভোরে চাঁদপাল জেটির কাছে একটি পার্কের মধ্যে অগ্নিদগ্ধ এক ব্যক্তির দেহ উদ্ধার হয়। দেহটি এমন ভাবে পুড়ে
গিয়েছিল যে শনাক্ত করা যাচ্ছিল না। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখলে সেখানে গায়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ছবি মেলে। কিন্তু পরিষ্কার করে বোঝা যাচ্ছিল না যে, কে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে।

পুলিশ জানায়, এর পরেই দগ্ধ দেহ তল্লাশি করে একটি ব্যাগ মেলে। তাতে একটি চিরকুট থেকে ঠিকানা পাওয়া যায়। সেই ঠিকানায় যোগাযোগ করলে মৃতের পরিচয় জানা যায়। এর পরে পুলিশ রবিবার দুপুরে বিশ্বনাথবাবুর ভাই এবং মেয়েকে উত্তর বন্দর থানায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে।

পুলিশ সূত্রের খবর, সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ঘটনার সময়ে এক জন মহিলা উপস্থিত আছেন বলে দেখা গিয়েছিল। এ ছাড়া ঘটনার দিন পিয়ালি নিজে এবং তার বাবা কোথায় ছিলেন, তা নিয়ে এক-এক রকম কথা বলেছিল সে। সেই সূত্রেই পিয়ালির সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা বলা শুরু করেন তদন্তকারীরা। পুলিশের দাবি, এর পরেই জেরায় ভেঙে পড়ে পিয়ালি দাবি করে, বাবাকে খুন করেছে সে-ই। পুলিশের অনুমান, পরিকল্পনা করে ওই খুন করা হয়েছে।

জেরায় ধৃত জানিয়েছে, শনিবার বিকেলে বাবাকে ঘুরিয়ে আনার অছিলায় গঙ্গার ঘাটে নিয়ে যায় সে। সেখানেই রাতের খাবার খাওয়ার কথা ছিল দু’জনের। পুলিশ জানায়, ওই রাতে বিশ্বনাথবাবু মত্ত অবস্থায় ছিলেন। সেই সুযোগে পার্কের মধ্যে বাবার শরীরে কেরোসিন ছিটিয়ে দেয় পিয়ালি। এর পরে নিজের ওড়নায় আগুন লাগিয়ে বাবার গায়ে ছুড়ে দেয়।

কিন্তু কী কারণে এই খুন, তা এখনও তদন্তকারীদের কাছে স্পষ্ট নয়। জেরার মুখে পিয়ালি দাবি করেছে, তার উপরে মানসিক অত্যাচার চালাতেন বিশ্বনাথবাবু, মারধরও করতেন। আর্থিক বিষয়েও দু’জনের মধ্যে মতবিরোধ ছিল। তবে পিয়ালির এই বক্তব্যের সত্যতা খতিয়ে
দেখছে পুলিশ।

এ দিন ক্রিস্টোফার রোডের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেটি প্রায় একশো বছরের পুরনো। বাড়ির এক দিকে থাকতেন বিশ্বনাথবাবু। তাঁর ভাই কার্তিকবাবুও সেখানেই থাকেন। অন্য দিকে থাকেন আত্মীয়স্বজনেরা। তবে জানা গিয়েছে, তাঁদের সঙ্গে তেমন সদ্ভাব নেই পিয়ালিদের।

এ দিন বিশ্বনাথবাবুর মৃত্যুর খবর পেয়ে ওই বাড়িতে আসেন তাঁর বোন দীপালি দত্ত। তিনি জানান, বিয়ের এক বছরের মাথায় পিয়ালি বাড়ি ফিরে এসেছিল। তবে পিয়ালি তাঁর সঙ্গে খুব একটা যোগাযোগ রাখত না বলেই জানান দীপালিদেবী। আঢ্য পরিবারের বাকিরাও জানান, তাঁদের সঙ্গেও বিশেষ যোগাযোগ রাখত না পিয়ালি। বিশ্বনাথবাবুর বেতনের টাকা পিয়ালি জোর করে নিয়ে নিত বলেও দাবি করেছেন আত্মীয়দের কেউ কেউ।

তবে আত্মীয়দের দাবি, রবিবার কার্তিকবাবুর কাছে নিজের বাবার খোঁজ করেছিল পিয়ালি। এক আত্মীয় জানান, বিশ্বনাথবাবুর খোঁজ নেই দেখে পিয়ালিকে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে সে জানায়, শনিবার রাত থেকে সে নিজে অসুস্থ ছিল। বমি এবং মাথা ঘোরার কারণে সে সারা রাত হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ছিল বলে দাবি করে।

পুলিশ জানিয়েছে, বাড়ির অন্য লোকেরা যাতে কিছু টের না পান, তাই শনিবার রাতে বাবাকে বাড়ির একটি অব্যবহৃত দরজা খুলে চুপিসারে গঙ্গার ঘাটে নিয়ে গিয়েছিল পিয়ালি। এর আগেও এক দিন সে বাবাকে নিয়ে গঙ্গার ধারে এসেছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। তবে পিয়ালি কেরোসিন কোথা থেকে জোগাড় করল, তা নিয়ে পুলিশ কিছু জানায়নি।

অন্য বিষয়গুলি:

Murder police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy