Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Kumortuli

লকডাউন ঠেলে কী ভাবে যাবেন গণেশ 

ঘরে ঘরে পুজোর বাজেট কমানোর হিড়িকে গণেশের উচ্চতাতেও এ বার টান পড়েছে।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২০ ০১:৪৯
Share: Save:

সত্য থেকে ত্রেতা, বা ত্রেতা থেকে দ্বাপর-কলি যুগে পা রাখার পথে নাকি এমনটা ঘটেছিল।

অতীত যুগে মানুষের উচ্চতা কমেই চলেছে। এই দুঃসময়ে কুমোরটুলির ঠাকুরের ক্ষেত্রেও যেন তেমনই ঘটল। ঘরে ঘরে পুজোর বাজেট কমানোর হিড়িকে গণেশের উচ্চতাতেও এ বার টান পড়েছে। সেই সঙ্গে পুজোর ঠিক আগে নাগাড়ে দু’দিনের পূর্ণ লকডাউন ঠেলে গণেশ কী ভাবে মণ্ডপে পৌঁছবেন, সেই চিন্তাতেই আপাতত রাতের ঘুম মাথায় উঠেছে কুমোরটুলির পালমশাই তথা ভাস্করদের।

বৃহস্পতিবার কুমোরটুলির পোড়খাওয়া প্রতিমাশিল্পী বাবু পাল এটাই বলছিলেন। বেশ কয়েক দফা বৃষ্টি শেষে সদ্যধৌত কুমোরটুলির তখন পরিপাটি রূপ। বাবু বললেন, ‘‘কী হবে বলুন তো! এখন এমনিতেই বাজার ‘ডাউন’! তার উপরে পুজোর ঠিক আগে টানা দু’দিন লকডাউন। এত কাঁটা ঠেলে, কী ভাবে মণ্ডপে পৌঁছবে গণেশ!’’

মাসভর ছোটবড় নানা গোষ্ঠীর পালাপার্বণের ভিড়ে হিসেব কষে লকডাউনের দিনক্ষণ ঠিক করতেই এখন জেরবার রাজ্য সরকার। বার বার লকডাউনের তারিখ পাল্টানো নিয়ে নানা মহলে ঠাট্টাতামাশা চলছে। কুমোরটুলির শিল্পীদের এখন দাবি, ‘‘শুধু পুজোর দিনটা লকডাউনে ছাড় দিলাম! আগেপরে কিছু ভাবলাম না! তা হলে কী করে হবে?’’ আর এক অভিজ্ঞ প্রতিমাশিল্পী মিন্টু পালেরও এক সুর— ‘‘পুজোর ঠিক আগে দু’দিন লকডাউন হলে যাঁরা পুজো করবেন, তাঁরা প্রতিমা নিয়ে যাবেন কবে?’’

গত কয়েক বছরে কুমোরটুলিতে সব পুজোর মধ্যে অনেককে পিছনে ফেলে গণেশই দুদ্দাড় করে উঠে এসেছিলেন। সব পুজোর মধ্যে পালমশাইদের ঠাকুরপিছু আয় সবচেয়ে বেশি হয় সপরিবার মা দুগ্গার মূর্তি গড়ে। তবে খুচখাচ বারোয়ারি বা ছোটখাটো বাড়ির পুজোর সংখ্যায় অন্যেরা এগিয়ে। বাবুর দাবি, ‘‘কুমোরটুলিতে গণেশ এখন দুই কি তিন নম্বরে রয়েছে।’’ বিশ্বকর্মা তো কবেই গণেশের কাছে হেরে ভূত! বাঙালি গেরস্তর ঘরে ঘরে যা গণেশ পুজোর নেশা, তাতে এখন কালী তো বটেই, লক্ষ্মী-সরস্বতীর সঙ্গেও রীতিমতো টক্কর দিচ্ছেন গণেশ।

কুমোরটুলির মূর্তিশিল্পীদের হিসেব, গত বছরেও কম করে পাঁচ-সাত হাজার ছোট-বড় গণেশ মূর্তি কুমোরটুলি থেকে বেরিয়েছে। পুজোর ঠিক দিন পনেরো আগে সেই বায়নার হাল-হকিকত এ বছরে টেনেটুনে অর্ধেক। সব বারেই স্লগ ওভারে বা একেবারে শেষ মূহূর্তে কিছু বায়না হয়। এ বার তারও দফারফা। শিল্পী জয়ন্ত পাল, বিশু পালেরা বলাবলি করছেন, বাসন্তী-শীতলা-অন্নপূর্ণার পরে বাজারে হিট গণেশপুজোর ক্ষেত্রেও যে এমন দশা হবে, তা অভাবনীয়।

তবু কুমোরটুলির পালমশাইদের একটা আশা, কোভিড অতিমারি এখনও শহরের ঐতিহ্যশালী পটুয়াপাড়ায় থাবা বসাতে পারেনি। শিল্পী ও কারিগরেরা মাস্ক পরে কাজ সারছেন। তবু পাড়াগাঁর কারিগরেদের অনেকেই এখনও কুমোরটুলি ছাড়া। বায়নার সংখ্যা কম। অন্য বার এ সময়ে দূরে পাঠানোর দুর্গাপ্রতিমা গড়ার কাজও অনেকটা এগিয়ে যায়। একটু বড় ঠাকুর গড়ায় সড়গড় মহিলাশিল্পী কাঞ্চী পাল বলছিলেন, ‘‘অন্য বার ১৭-১৮ জন থাকেন।‌ এ বার তিন-চার জন মিলে কাজ করছি।’’ এখনও জানেন না, সল্টলেকের বড় পুজোয় ১৮ ফুটের ঠাকুরের বায়নাটা এ বারে আসবে কি না! সর্বত্র গণেশ ১০ থেকে ৭, বা ৫ থেকে দেড় ফুটে নেমে এসেছে। এর মধ্যে দু’দিনের লকডাউন-খাঁড়ায় ডেলিভারিটাও অনিশ্চিত। যদিও মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে বলছেন, ‘‘আমারও বাড়িতে গণেশপুজো। দু’দিন আগেই ঠাকুর এনে রাখব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Kumortuli Ganesh Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy