ফাইল চিত্র।
কাগজে-কলমে ফুরিয়ে গিয়েছে ওঁদের চাকরির মেয়াদ। কিন্তু, এখনও হাতে আসেনি চুক্তিভিক্তিক চাকরির নবীকরণের নির্দেশিকা। অতিমারি পরিস্থিতিতে এ বার সে কারণেই দোলাচলে ভুগছেন রাজ্যের ‘করোনা যোদ্ধারা’।
অতিমারির প্রথম পর্ব থেকে কোভিড হাসপাতাল এবং সেফ হোমগুলিতে কাজ করছিলেন প্রায় ৭০০ জন ‘কোভিড ওয়ারিয়র্স’। প্রতি তিন মাস অন্তর তাঁদের চাকরি নবীকরণের নির্দেশিকা এসে পৌঁছত স্বাস্থ্য দফতর থেকে। এ বার ৩১ অগস্ট পর্যন্ত ছিল ওই চাকরির মেয়াদ। ওই করোনা যোদ্ধারাও মনে করেছিলেন, এ বারেও মেয়াদ শেষের আগেই এসে যাবে নবীকরণের নির্দেশিকা। কিন্তু বুধবার পর্যন্ত সেই সংক্রান্ত নির্দেশিকা আসেনি। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, “ওঁদের বেতন বিষয়ক ফাইল অর্থ দফতরে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে ছাড়পত্র না এলে চাকরির বিষয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়।”
মুর্শিদাবাদ থেকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে কাজ করতে আসা খুদু শেখের কথায়, “পুরনো যে কাজ করতাম, সেটাও তো আর ফিরে পাব না। তা হলে আমাদের চলবে কী করে? আশা করছি, মুখ্যমন্ত্রী হয়তো কোনও ব্যবস্থা নেবেন। মুর্শিদাবাদে নির্বাচনী প্রচারে উনিই বলেছিলেন, বিভিন্ন কাজে আমাদের লাগানো হবে।’’ করোনা যোদ্ধারা জানাচ্ছেন, তাঁদের অধিকাংশই পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। অতিমারির কারণে ভিন্ রাজ্যের কাজ ছেড়ে তাঁদের চলে আসতে হয়। রাজ্যে ফেরার পরে বেশ কয়েক জন কোভিডে আক্রান্ত হন। সুস্থ হয়ে ওঠার পরে সেই পরিযায়ী শ্রমিকদের একটা বড় অংশকে এবং অন্যান্যদের করোনা যোদ্ধা হিসেবে কলকাতা-সহ জেলার সরকারি কোভিড হাসপাতাল এবং সেফ হোমে কাজে লাগিয়ে ছিল রাজ্য সরকার।
গত বছরের ২৯ জুন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা অনুযায়ী কোভিড যোদ্ধাদের নিয়ে দল গড়েছিল রাজ্য। জানানো হয়েছিল, তাঁরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্তদের হার না-মানার পাঠ দেবেন। রোগীদের সঙ্গে কথা বলা, তাঁদের খাবার দেওয়া, পরিজনেদের সঙ্গে ফোনে কথা বলানো ছাড়াও চিকিৎসকদের বিভিন্ন কাজে সহায়তা করবেন। প্রাথমিক ভাবে মুর্শিদাবাদ থেকে এই পরিকল্পনার সূচনা হয়েছিল। দৈনিক পারিশ্রমিক ও আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে মাসে ধার্য হয়েছিল ১৫ হাজার টাকা। এক করোনা যোদ্ধার কথায়, “যেখানে মানুষ নিজের পরিজনের কাছেও যেতে ভয় পাচ্ছিলেন, সেই পরিস্থিতিতে আমরা কাজ করেছি। এক বার করোনা হলে দ্বিতীয় বার যে হবে না, তা তো নয়। সেখানে আগাম কিছু না জানিয়ে, আচমকাই আমাদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হল না!”
রাজ্যের ১৯টি জেলার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সরকারি কোভিড হাসপাতাল-সহ কলকাতার চারটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বেলেঘাটা আইডি ও এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিযুক্ত ছিলেন এই করোনা যোদ্ধারা। এখনও নতুন নির্দেশিকা না আসায় চিন্তায় পড়েছেন প্রায় সকলেই। চেন্নাইয়ে একটি সংস্থায় কাজ করতেন বাঁকুড়ার গৌরব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলছেন, “এখানে চাকরি পেয়ে আর চেন্নাইয়ে ফিরে যাইনি। এখন সেখানে গেলে আর তো নেবেও না। সংসার নিয়ে তো এ বার পথে বসতে হবে!” অতিমারির তৃতীয় ঢেউয়ের পরিস্থিতিতে তাঁদের জন্য রাজ্য সরকার কিছু ভাবে কি না, আপাতত সে দিকেই তাকিয়ে ওই করোনা যোদ্ধারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy