ফাইল ছবি
কোথাও শুনতে হচ্ছে, আসল না নকল? কোথাও প্রশ্ন আসছে, কত দিয়ে হল? কোথাও আবার জানতে চাওয়া হচ্ছে, ১০ লক্ষ দিলে স্কুলের চাকরিটা কনফার্ম হবে তো?
শিক্ষা ক্ষেত্রে নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে রাজ্যে যখন তোলপাড় চলছে, তখন শিক্ষকদেরই একাংশ জানাচ্ছেন, বৈধ ভাবে সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া মেনে চাকরি পাওয়া সত্ত্বেও পাড়া-প্রতিবেশী বা আত্মীয়স্বজনদের নানা ধরনের ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের শিকার হচ্ছেন তাঁরা। যার জেরে মাথা হেঁট হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। ওই শিক্ষকদের একাংশের প্রশ্ন,যাঁরা এত দিন ধরে সৎ ভাবে চাকরি করলেন, ছাত্রছাত্রীদের নিজের সন্তানের মতো করে পড়ালেন, তাঁদের এমন বিদ্রূপের শিকার হতে হবে কেন? এক শিক্ষক আবার বললেন, ‘‘প্রতিবেশী বা আত্মীয়েরাই শুধু নন, ছাত্রছাত্রীরাও কি আর আমাদের আগের মতো শ্রদ্ধা করবে?’’
সন্তোষপুর এলাকার একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা সুমিতা মুখোপাধ্যায় জানালেন, কী ভাবে এক বান্ধবীর বাড়িতে গিয়ে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছিলেন। বন্ধুদের সঙ্গে গল্পের সময়ে ওইবান্ধবীর এক আত্মীয়া হঠাৎ বলে ওঠেন, ‘‘রাজ্যের যা হালচাল, তাতে তো মনে হয়, আপনাদের শিক্ষকতার চাকরিটা শুধু টাকা দিয়েই হয়।’’ সুমিতা বলেন, ‘‘ওই কথাটা শুনে মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছিল। বহু বছর ধরে শিক্ষকতা করছি। এমন একটা পেশায় এ ভাবে কালির দাগ লাগবে, কখনও ভাবিনি।’’
এ শহরেরই আর একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক আনন্দ হন্ডা বললেন, ‘‘এত দিন শুনতে হচ্ছিল, করোনার জন্য স্কুলে না গিয়ে বাড়িতে বসে বসে দু’বছর মাইনে নিলেন শিক্ষকেরা। তা নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ কিছু কম শুনতে হয়নি। আর এখন বাইরে বেরোলে শুনতে হচ্ছে, দাদা, আপনাদের স্কুলের শিক্ষকেরা আসল না নকল?’’ আনন্দ জানালেন, এখন কোথাও গিয়ে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা শুনলেই সেখান থেকে কার্যত পালিয়ে যান তিনি।
আর এক শিক্ষক সৌগত বসুর মতে, শিক্ষকদের সম্মানহানি তো ঘটছেই, সেই সঙ্গে শিক্ষারও একটা সামগ্রিক অবমূল্যায়ন ঘটেছে। পড়ুয়াদের একাংশের চোখে তাঁরা হয়তো অনেকটাই নীচে নেমে গিয়েছেন। সৌগত বললেন, ‘‘শিক্ষা দফতরেই যদি দুর্নীতি ঘটে, তখন প্রশ্ন ওঠে, আমরা তা হলে পড়ুয়াদের কী শেখাব? ভয় হয়, উঁচু ক্লাসের ছাত্রেরা কোন দিন না বলে বসে, আপনারা আর আদর্শের কথা কোন মুখে বলছেন?’’
একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণাংশু মিশ্র বললেন, ‘‘যাঁরা বৈধ ভাবে শিক্ষকতার চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের যোগ্যতাও এখন প্রশ্নের মুখে। কৃষ্ণাংশু বলেন, ‘‘স্কুলে শিক্ষকদের পরস্পরের মধ্যে একটা সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। ২০১৩ সালের পরে চাকরিতে যোগ দেওয়া শিক্ষকদের নিয়োগ নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করছেন।’’
দক্ষিণ কলকাতার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিত সেন মজুমদারের মতে, ‘‘এই পরিস্থিতি থেকে বেরোনোর একমাত্র উপায় হল, স্বচ্ছ ভাবে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া যতটা দ্রুত সম্ভব শুরু করা।’’ শহরের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া নাগের মতে, ‘‘এই পরিস্থিতির মধ্যেও স্কুলের পঠনপাঠন ঠিক মতো চালিয়ে যেতে হবে। দীর্ঘ দু’বছর পরে স্কুল খুলেছে। পড়ুয়াদের মধ্যে এর কোনও প্রভাব যাতে না পড়ে, সেটা দেখাও আমাদের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy