Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
COVID-19

অটোপসির জন্য কোভিডে মৃত স্বামীর দেহদান

মঙ্গলবার এসএসকেএম হাসপাতালে হবে সেই অটোপসি। রাজ্যের মধ্যে এটি অষ্টম হলেও এসএসকেএমে এই প্রথম।

প্রতীকী চিত্র।

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২১ ০৬:০৯
Share: Save:

‘দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে কি আপনি অঙ্গদান করতে ইচ্ছুক?’ ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদনপত্র পূরণের সময়ে বড় ছেলেকে সেখানে ‘হ্যাঁ’ লেখার পরামর্শ দিয়েছিলেন বাবা। ছেলেকে বলেছিলেন, “আমরা না-থাকলেও শরীরের অঙ্গগুলি অন্য কোনও মানুষের কাজে লাগবে।” স্বামীর সেই কথা ভোলেননি স্ত্রী। তাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে স্বামীর মৃত্যু হতেই তাঁর দেহ প্যাথলজিক্যাল অটোপসির জন্য তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

আজ, মঙ্গলবার এসএসকেএম হাসপাতালে হবে সেই অটোপসি। রাজ্যের মধ্যে এটি অষ্টম হলেও এসএসকেএমে এই প্রথম। সূত্রের খবর, ওই অটোপসির দায়িত্বে রয়েছেন হাসপাতালের শল্য বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্রকুমার সরকার, ফরেন্সিক মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান চিকিৎসক ইন্দ্রাণী দাস, প্যাথলজি বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক উত্তরা চট্টোপাধ্যায়। দীপ্তেন্দ্রবাবু বলেন, “বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যখন নবজাগরণ এসেছিল, সেই সময়েও অটোপসির মাধ্যমেই বিজ্ঞান এগিয়েছিল। সুতরাং আধুনিক যুগেও প্যাথলজিক্যাল অটোপসি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে। মানুষই এক সময়ে নবজাগরণ ঘটিয়েছিল। তাই আর এক বার তাঁরা, অর্থাৎ রাজ্যবাসী পাশে থাকলে বিজ্ঞানের অনেক রহস্যের উদ্ঘাটন সম্ভব হবে।” করোনার প্রভাবে কোন অঙ্গ কী অবস্থায় আছে, তা জানতেও এই অটোপসি গুরুত্বপূর্ণ, বলছেন দীপ্তেন্দ্রবাবু।

হলদিয়ায় একটি পেট্রোকেমিক্যালস সংস্থার কর্মী দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের (৫৭) গত ১২ মে কাশি ও অল্প জ্বরের উপসর্গ দেখা দেয়। পরের দিন, ১৩ মে রাতে তাঁর কোভিড রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। এমনকি, তাঁর স্ত্রী পাপিয়া ও ছোট ছেলেও করোনায় আক্রান্ত হন। পাপিয়া জানাচ্ছেন, ১৩ মে সকাল থেকেই তাঁর স্বামীর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে শুরু করে। তিনি বলেন, “ওঁর অফিসের পরামর্শ মতো ১৪ মে রাতেই ওঁকে হলদিয়া থেকে কলকাতায় এনে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করি।” নিজে কোভিডে সংক্রমিত হওয়ায় অবশ্য রাতেই ছোট ছেলেকে নিয়ে হলদিয়া ফিরে যান পাপিয়া। পড়াশোনার জন্য তাঁদের বড় ছেলে কলকাতাতেই থাকেন।

একমো-নির্ভর স্বামীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে শুনে রবিবার কলকাতায় চলে আসেন পাপিয়া। সোমবার ভোরে দেবাশিসবাবুর মৃত্যু হয়। পাপিয়ার আক্ষেপ, “১৭ মে রাতে ভিডিয়ো কলে শেষ কথা হয়। বার বার বলছিলেন অন্যত্র নিয়ে যেতে। বুকে খুব কষ্ট হচ্ছিল। পরের দিনই ওঁকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়।” কিন্তু তাতেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় শেষে একমো সাপোর্টে রাখা হয়। ৫ জুন তৈরি হয় মেডিক্যাল বোর্ডও। পাপিয়া বলেন, “হাসপাতালের তরফে রোগীর পরিজনদের সঙ্গে যোগাযোগে খামতি ছিল। সেটা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরে এক বার ভিডিয়ো কলে ওঁকে দেখেছিলাম। শরীরে যন্ত্রপাতি লাগানো, দেখে খুব কষ্ট হচ্ছিল।” এর পরে পাপিয়া চিকিৎসকদের থেকে জানতে পারেন, একমো দিয়েও দেবাশিসবাবুর অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না।

তবে স্বামীর আর বাঁচার আশা নেই শুনে ভেঙে পড়েননি পাপিয়া। মন শক্ত করে সিদ্ধান্ত নেন, অঙ্গদান করবেন। কিন্তু কোভিডে মৃত্যু হলে অঙ্গদান সম্ভব নয়। এই খবর জানার পরে স্বামীর দেহ করোনা গবেষণার উদ্দেশ্যে প্যাথ লজিক্যাল অটোপসির জন্য দিতে চান পাপিয়া। এর পরেই ‘গণদর্পণ’-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজেদের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে রাখেন পাপিয়া। এ দিন দেবাশিসবাবুর মৃত্যুর পরে তাঁর দেহের অটোপসির ব্যাপারে অনুমতি দেয় স্বাস্থ্য দফতর। ‘গণদর্পণ’-এর সম্পাদক শ্যামলবাবুর কথায়, “ওই প্রৌঢ়ের কোনও কোমর্বিডিটি ছিল না। তা সত্ত্বেও কোন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাঁর মৃত্যু হল, জানা যাবে এই অটোপসিতে। আশা করব, মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উন্মোচনে এক দিন আরও বহু মানুষ অটোপসির জন্য দেহদান করবেন।”

অন্য বিষয়গুলি:

Autopsy Covid Death COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy