ছবি: সংগৃহীত।
পাতালপথে ট্রেনের দরজায় হাত আটকে প্রাণ গিয়েছে সজলকুমার কাঞ্জিলালের। ভিড় সামলাতে মেট্রোর প্রযুক্তি বদলের প্রস্তাব রেল বোর্ডে এক বছর আটকে আছে কেন? বিশেষ স্বার্থে? চেন্নাইয়ের ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরিকে বরাত দেওয়া নিম্ন মানের ২৬টি রেকের ‘সদ্গতি’ করতেই কি কলকাতা মেট্রোর পাঠানো সিগন্যালিং ব্যবস্থার খোলনলচে বদলের প্রস্তাব আটকে রেখেছে রেল বোর্ড? মেট্রোর প্রাক্তন ও বর্তমান কর্তাদের একাংশের মতে, এমন সন্দেহ অমূলক নয়।
মেট্রোয় লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলা যাত্রী-সংখ্যার সঙ্গে তাল রাখতে ৪৬০ কোটি টাকায় সিগন্যালিং প্রযুক্তি বদলের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু বছর ঘুরে গেলেও সেই প্রস্তাব নিয়ে উচ্চবাচ্য করেনি রেল বোর্ড।
তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গনির্ভর ওই সিগন্যালিং ব্যবস্থায় খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে ট্রেন চালানো সম্ভব। তবে ওই প্রযুক্তি কাজে লাগানোর জন্য মেট্রোর রেকে বিশেষ যন্ত্র বসানোর ব্যবস্থা থাকা জরুরি। যা চেন্নাইয়ে তৈরি সস্তা দামের রেকে নেই।
কতটা ফারাক হতে পারে ওই প্রযুক্তি না-থাকলে? এক মেট্রোকর্তা জানান, কলকাতা মেট্রোয় আট কোচের নন-এসি রেকে সর্বাধিক ২৪০০ জন যাত্রী উঠতে পারেন। এসি রেকে ৩১০০ জন। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয় বিইএমএলের ছয় কোচের রেকে সর্বাধিক ২০৬৮ জন যাত্রী উঠতে পারবেন। শুধু তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গনির্ভর আধুনিক সিগন্যালিং ব্যবস্থা (কমিউনিকেশন বেসড ট্রেন কন্ট্রোল সিস্টেম বা সিবিটিসিএস) থাকায় একই সময়ে অনেক বেশি যাত্রী বহন করতে পারবে ইস্ট-ওয়েস্ট।
কী ভাবে? কলকাতার উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোয় দিনের ব্যস্ত সময়ে ন্যূনতম ছ’মিনিট অন্তর ট্রেন চলে। হাওড়া ময়দান থেকে সল্টলেকের সেক্টর-৫ পর্যন্ত ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো চালু হলে ওই পথে দেড় মিনিট অন্তর ট্রেন চলবে। যে-সময়ে কলকাতা মেট্রোর একটি রেক ৩১০০ যাত্রী বইবে, সেই সময়ে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর ৩-৪টি ট্রেন ৬-৮ হাজার যাত্রী বহন করবে।
গত দু’দশকে কলকাতা মেট্রোয় যাত্রী বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। কবি সুভাষ থেকে নোয়াপাড়া ২৭ কিলোমিটার পাতালপথে রোজ কমবেশি সাত লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করেন। বরাহনগর, দক্ষিণেশ্বর বা বিমানবন্দর পর্যন্ত মেট্রো সম্প্রসারিত হলে সংখ্যাটা আরও কয়েক লক্ষ বাড়তে পারে।
সে-ক্ষেত্রে সিগন্যালিং ব্যবস্থা পাল্টে রেকের ধারণক্ষমতা না-বাড়ালে ভিড় সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না বলে জানাচ্ছেন মেট্রোকর্তাদের একাংশ। কলকাতা মেট্রোয় এখন কাজের দিনে রেক-পিছু গড়ে ২৩০০ যাত্রী যাতায়াত করেন। শনি-রবিবার ট্রেন কম থাকায় ওই সংখ্যা হয় ২৬০০। কিন্তু কাজের দিনে সকাল ও সন্ধ্যার ব্যস্ত সময়ে যাত্রী-সংখ্যা ওই গড় হিসেবের চেয়ে অনেকটাই বেশি থাকে। প্রায়ই রেকের ধারণক্ষমতার চেয়ে যাত্রী বেশি হয়।
দমদম, চাঁদনি চক, এসপ্লানেড, রবীন্দ্র সদন, কালীঘাট, রবীন্দ্র সরোবর, টালিগঞ্জ, কবি নজরুল, কবি সুভাষের মতো স্টেশনে যে-ভাবে ভিড় আছড়ে পড়ে, তাতে একটি ট্রেন কোনও কারণে আটকে পড়লেই ত্রাহি ত্রাহি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তার প্রভাব পড়ে সার্বিক মেট্রো চলাচলের উপরে।
এই অবস্থায় আইসিএফের রেক ব্যবহার করতে কলকাতা মেট্রোকে বাধ্য করানোর পিছনে রেল বোর্ডের কর্তাদের একাংশের ‘বিশেষ স্বার্থ’ কাজ করছে বলে বর্তমান এবং প্রাক্তন মেট্রোকর্তাদের একাংশের অভিযোগ। এক প্রাক্তন মেট্রোকর্তা বলেন, ‘‘নিম্ন মানের রেক এবং পুরনো প্রযুক্তি ব্যবহারে বাধ্য করিয়ে আসলে কলকাতা মেট্রোকে পঙ্গু করে রাখার চেষ্টা চলছে।’’ তাঁর মতে, জরিমানা করে মেট্রোয় ওঠার সময় হুড়োহুড়ি করা যাত্রীদের একাংশকে হয়তো কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিন্তু প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের আছড়ে পড়া ভিড় দ্রুত সরাতে না-পারলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা নির্মূল করা যাবে না।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy