সতর্কতা: ঘুমন্ত পুণ্যার্থীদেরও দেহের তাপমাত্রা মাপছেন অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের কর্মীরা। সোমবার, বাবুঘাটে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
প্রতিষেধকের দুটো ডোজ় নিয়েছেন? সার্টিফিকেট দেখাতে পারবেন?
সোমবার বাবুঘাটে প্রশ্নটা করতেই ঝাঁঝিয়ে উঠলেন নাগা সাধু। খোলা মুখে পুণ্যার্থীদের মাথায় চামর ঘুরিয়ে দক্ষিণা চাইছিলেন তিনি। নিজের হাতেই কারও কারও কপালে বিভূতির তিলক কেটে দিচ্ছিলেন গুজরাত থেকে আসা ধর্মবীর নামে ওই সাধু। বিরক্ত মুখে তাঁর উত্তর, ‘‘১৩ দিন আগে একটা ভ্যাকসিন নিয়েছি। আমরা সাধুসন্ত। প্রকৃতিতেই বসবাস। আমাদের করোনা হয় না। যাঁরা ঠান্ডা ঘরে থাকেন, করোনা তাঁদের ধরে।’’ গত এক মাস ধরে তিনি উট্রাম ঘাটের ওই সমাগমস্থলে রয়েছেন।
কিন্তু করোনা-বিধি না মানা সত্ত্বেও প্রশাসন তাঁকে ওই শিবিরে থাকতে দিচ্ছে কেন? কোভিড কি তবে বিশ্বাসেই নিয়ন্ত্রিত হবে? সমস্যার কথা স্বীকার করে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম এ দিন বলেন, ‘‘আমরা এমনও খবর পেয়েছি যে, অনেকে একটিও প্রতিষেধক না নিয়েই চলে এসেছেন। আমরা তিনটি শিবির রেখেছি প্রতিষেধকের। ঘোষণাও করছি, যাঁর প্রয়োজন, তিনি যেন এসে প্রতিষেধক নিয়ে নেন। এটা তো নিজেদের সচেতনতার ব্যাপার।’’
পুলিশ, তথ্য-সংস্কৃতি দফতর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসকের দফতর— সর্বত্রই জানতে চাওয়া হয়েছিল, পুণ্যার্থীরা প্রতিষেধকের দু’টি ডোজ় নিয়েছেন কি না, তা কোথায় পরীক্ষা করা হচ্ছে? কোনও দফতর থেকেই উত্তর মেলেনি। সাধুরা সকলে দু’টি করে ডোজ় নিয়েছেন কি না জানেন? তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের শিবিরে বসা এক ব্যক্তি করজোড়ে বললেন, ‘‘ও সব আমরা জানি না।’’ তবে এক সরকারি আধিকারিকের দাবি, ‘‘সমাগমস্থলের প্রবেশপথে থার্মাল গানে জ্বর ধরা পড়লেই পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রতিষেধকের সার্টিফিকেট সে ভাবে দেখা হচ্ছে না।’’
উত্তরপ্রদেশের মহারাজগঞ্জ থেকে সপরিবার এসেছেন চিলাহি স্বামী। তাঁর কথায়, ‘‘তিন-চার মাস আগে প্রথম ডোজ় নিয়েছি। সেই কাগজ বাড়িতে রাখা আছে।’’ দু’টি ডোজ় না নিয়েই এত দূরে চলে এলেন? উত্তর মেলেনি। কর্তব্যরত এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘এমনও অনেকে এসেছেন, যাঁদের একটি ডোজ়ও হয়নি। এ সব পরীক্ষা করার কাজ আমাদের নয়।’’
আউট্রাম ঘাটের ওই শিবিরে কোভিডের র্যাপিড পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে সোমবার ৩১ জনের কোভিড পরীক্ষা হয়েছে। ১০ জনের রিপোর্ট পজ়িটিভ। গঙ্গাসাগর মেলা উপলক্ষে উট্রাম ঘাট ছাড়াও ইডেন গার্ডেন্সের উল্টো দিকের বঙ্গবাসী ময়দান ও শিয়ালদহ মিলিয়ে এ দিন ৩৪০ জনের কোভিড পরীক্ষা হয়েছে। তার মধ্যে ৩৫ জন পজ়িটিভ। তাঁদের সেফ হোমে পাঠানো হচ্ছে।
সারা দেশের পাশাপাশি এ রাজ্যেও কোভিডের মোকাবিলায় প্রতিষেধকের দু’টি ডোজ় আবশ্যিক। তা সত্ত্বেও গঙ্গাসাগরের পুণ্যার্থী কিংবা সাধুসন্তেরা ছাড় পাবেন কেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে। এ দিন দুপুরে বঙ্গবাসী ময়দানে কোভিড পরীক্ষার শিবিরের সামনে দেখা গেল, অসুস্থ ব্রিজলাল পাণ্ডেকে অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেফ হোমে। অযোধ্যা থেকে এসেছেন তিনি। স্ত্রী শশিকলা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘‘চার বার স্নান করেন আমার স্বামী। তাই ঠান্ডা লেগে গিয়েছে।’’
সমাগমস্থলে ঘুরতে ঘুরতে কানে এল সরকারি ঘোষণা, ‘‘মাস্ক পরুন, ভিড় করবেন না।’’ কিন্তু সেই ঘোষণা আদৌ কেউ কানে তুললেন কি? একটি অস্থায়ী মেডিক্যাল ক্যাম্পের সামনে টোকেন নিতে তখন কাড়াকাড়ি চলছে পুণ্যার্থীদের। প্রগতিশীল কালকুব্জের শিবিরের সামনে দূরত্ব-বিধি শিকেয় তুলে চায়ের লাইন দিয়েছেন অনেকে। অবোধ সেবা সামাজের শিবিরের সামনে পাশাপাশি বসে মাস্ক খুলে চলছে খাওয়াদাওয়া। উদ্যোক্তাদের সাফাই, পুণ্যার্থীরা কথা শুনছেন না।
এ দিকে, পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, বিভিন্ন ক্যাম্পে থাকা পুণ্যার্থীদের অনেকেই সংক্রমিত। বাবুঘাটের বঙ্গবাসী ময়দানে দশ জন, উট্রাম ঘাটে ২০ জন ও শিয়ালদহ স্টেশনের ক্যাম্পে চার জন আক্রান্ত। এঁদের মধ্যে ১১ জনকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। কলকাতার কাছাকাছি অঞ্চলের বাসিন্দারা চলে গিয়েছেন গৃহ পর্যবেক্ষণে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy