আবার কলকাতায় উদ্ধার কোটি কোটি টাকা! গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
গার্ডেনরিচ এলাকার ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে উদ্ধার-হওয়া টাকার পাহাড়ের সঙ্গেও কি কোনও ‘প্রভাবশালী’র যোগ রয়েছে? পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার-করা টাকার সূত্রেই আবার এই জল্পনা শুরু হয়েছে।
গার্ডেনরিচের ওই বাড়ি থেকে বিকেল পর্যন্ত আট কোটি টাকা উদ্ধার হওয়ার খবর মিলেছে। ওই পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলেই তল্লাশিকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) সূত্রে খবর। গার্ডেনরিচের পরিবহণ ব্যবসায়ী নিসার আহমেদ খান এবং আমির খানের বাড়িতে বিকেল ৪টে পর্যন্ত ঢুকেছে আট নম্বর টাকা গোনার যন্ত্র। পৌঁছে গিয়েছেন স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার আধিকারিকরাও। কলকাতা শহর এবং রাজ্যের বাসিন্দারা এখন কৌতূহলী এটা জানতে যে, ওই বিপুল পরিমাণ অর্থের আসল মালিক কে, তার উৎস কী এবং সবচেয়ে মহার্ঘ প্রশ্ন— এর সঙ্গেও কি কোনও প্রভাবশালীর যোগ রয়েছে?
একই সঙ্গে আরও একটি বিষয় নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে। তা হল— ওই ব্যবসায়ীর বাড়ির দোতলায় খাটের নীচে যে টাকার বান্ডিল রাখা আছে, সেই ‘খবর’ অত সুনির্দিষ্ট ভাবে তদন্তকারী সংস্থার কাছে গেল কী করে! এক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার প্রাক্তন আধিকারিকের কথায়, ‘‘নির্দিষ্ট তথ্য এবং খবর না-পেলে এত নিখুঁত ভাবে কোথাও হানা দেওয়া বা তল্লাশি করা সম্ভব নয়। নির্দিষ্ট টিপ অফের ভিত্তিতেই এই অভিযান হচ্ছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবীর বাড়িতেই হোক বা এই গার্ডেনরিচের ব্যবসায়ীর বাড়িতে— কোথাও কিন্তু টাকার সন্ধান পেতে দেওয়াল ভাঙতে হয়নি বা কোনও অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়নি! যা থেকে এটা অনুমান করা যেতেই পারে যে, পাকা খবর ছিল।’’ সেই সূত্রেই প্রশ্ন, কে বা কারা ইডির কাছে ওই সুনির্দিষ্ট তথ্য পৌঁছে দিচ্ছে এবং দিচ্ছে।
ওই প্রাক্তন আধিকারিকের আরও অভিমত, ‘‘দেখে বোঝা যাচ্ছে যে, ওই টাকা খুব সম্প্রতিই এনে রাখা হয়েছিল। হতে পারে, শুক্রবার রাতে ওই টাকা এনে খাটের তলায় রাখা হয়েছিল। অথবা বৃহস্পতিবার। টাকা সরানোর আগেই খবর চলে গিয়েছে। কারণ, এত টাকা দীর্ঘ দিন ধরে কেউ নিজের বাড়িতে ফেলে রাখে না। সেটা খুব স্বাভাবিক নয়। ফলে ধরে নিতে হবে, ওই টাকা খুব বেশি দিন ধরে ওই বাড়িতে রাখা নেই। সে ক্ষেত্রে দ্রুত তদন্তকারী সংস্থার কাছে খবর গিয়েছে।’’
শনিবার কলকাতার মোট ছ’টি জায়গায় তল্লাশি অভিযান শুরু করে ইডি। তার পরেই গার্ডেনরিচ এলাকার ব্যবসায়ীর বাড়ির খাটের তলায় প্লাস্টিকে মোড়া ৫০০ এবং ২০০০ টাকার নোটের বান্ডিল উদ্ধারের কথা জানাজানি হয়। ইডি সূত্রের দাবি, কোটি কোটি টাকা কোথা থেকে পেয়েছেন, কী ভাবে তাঁর খাটের তলায় এলো ওই বান্ডিল, তার কোনও সদুত্তর আমির খান নামে ওই ব্যবসায়ী দিতে পারেননি। প্রত্যাশিত ভাবেই ওই বিপুল টাকা উদ্ধারের ঘটনায় রাজনীতির রং লেগেছে। রাজ্যের শাসকদলকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে বিরোধীরা। অন্য দিকে, শাসক তৃণমূলের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে বাংলার নেতা-মন্ত্রী তো বটেই, এখন ব্যবসায়ীদেরও ‘টার্গেট’ করেছে বিজেপি। সেই তর্কবিতর্ক, আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সমানতালে চলছে টাকা গোনা।
সাম্প্রতিক অতীতে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে নগদ টাকা উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে। প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থের ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতার একাধিক ফ্ল্যাট থেকে সব মিলিয়ে প্রায় ৫২ কোটি টাকা এবং প্রভূত পরিমাণ সোনার গয়না উদ্ধারের ছবি দেখা গিয়েছে। এর পর ঝাড়খণ্ডের তিন বিধায়কের গাড়িতে তল্লাশি চালিয়েও লক্ষ লক্ষ নগদ টাকা উদ্ধার করেছিল রাজ্যের পুলিশ। আবার হালিশহরের পুরপ্রধান রাজু সাহানির বাড়ি থেকে প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা মিলেছে।
ঘটনাচক্রে, এত দিন যাঁদের বাড়িতে বা হেফাজত থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধার হয়েছে, হয় তাঁরা নিজেরা সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। অথবা নেতা তথা মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ। কিন্তু গার্ডেনরিচের পরিবহণ ব্যবসায়ীর সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক যোগের কথা উঠে আসেনি। অন্তত শনিবার বিকেল পর্যন্ত।
ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি মোবাইল অ্যাপ সংক্রান্ত প্রতারণার মামলার তদন্ত করতে গিয়েই আমিরের বাড়িতে হানা দেওয়া হয়। তার পর গার্ডেনরিচের শাহি আস্তাবল গলির দোতলা বাড়ি থেকে মিলছে রাশি রাশি টাকা। এক জন মাঝারি ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে এত টাকা কী ভাবে থাকে, সেই প্রশ্ন তুলছেন বিরোধী রাজনীতিকরা। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর কটাক্ষ, ‘‘কালো টাকার রাজত্ব গড়ে উঠেছে দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানীতে।’’ প্রত্যাশিত ভাবেই তিনি আঙুল তুলেছেন তৃণমূল সরকারের দিকে। নাম করেছেন পরিবহণ দফতরের। পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীর পাল্টা মন্তব্য, ‘‘আইন আইনের পথে চলবে। টাকা উদ্ধারের ঘটনায় পরিবহণ ব্যবসায়ী বা কোন ব্যবসায়ী, তিনি তৃণমূল নাকি সিপিএম করেন, এ সব নির্ধারণ করা ঠিক নয়।’’
রাজ্যের আর এক মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম (গার্ডেনরিচ যাঁরা নির্বাচনী এলাকার মধ্যে পড়ে) আবার ওই ঘটনায় বিজেপিকে একহাত নিয়েছেন। তাঁর দাবি, এ ভাবে বাংলার ব্যবসায়ীদের ভয় দেখানোর কৌশল নিয়েছে কেন্দ্রের সরকার। যেন তেন প্রকারেণ বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা টালমাটাল করাই তাদের লক্ষ্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy