Advertisement
২১ ডিসেম্বর ২০২৪
R G Kar Hospital Incident

আরজি করে কারা তাণ্ডব চালাল মেয়েদের কর্মসূচির রাতেই? ‘পৌরুষ’ কাদের? তৃণমূল, বাম না বিজেপি?

বুধবার রাত ১২টা নাগাদ আরজি করের সামনে রাত দখলের কর্মসূচি শুরু। ঠিক তার পরেই এক দল ব্যক্তি আচমকাই পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে হাসপাতালে ভিতরে ঢুকে ভাঙচুর চালাতে থাকেন।

উত্তপ্ত আরজি কর হাসপাতাল।

উত্তপ্ত আরজি কর হাসপাতাল। —ফাইল চিত্র।

সারমিন বেগম
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২৪ ০৫:১৬
Share: Save:

মধ্যরাতে কলকাতা শহরে মেয়েদের রাত দখলের কর্মসূচির মধ্যেই কারা হামলা চালালেন আরজি কর হাসপাতালে? এখন এই প্রশ্নই সর্বত্র ঘুরপাক খাচ্ছে। চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় বুধবার রাজ্য জুড়ে যখন প্রতিবাদ কর্মসূচি চলছে, সেই সময় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে আচমকা আক্রমণ কি পরিকল্পনা করেই করা হল? এ প্রশ্নের জবাব এখনও অধরা। কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের কাছে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আর্জি, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের খুঁজে বার করতে হবে। বিরোধীরা অবশ্য এই ঘটনায় তৃণমূলের হাত রয়েছে বলেই দাবি করেছে।

বুধবার রাত ১২টা নাগাদ আরজি করের সামনে রাত দখলের কর্মসূচি শুরু। ঠিক তার পর পরই একদল উন্মত্ত ব্যক্তি আচমকাই পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে ভাঙচুর চালাতে থাকেন। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে হাসপাতাল চত্বরে তাণ্ডব চালায় রড ও লেঠেল বাহিনী। পরে ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। কয়েক জন পুলিশকর্মী জখমও হয়েছেন হামলাকারীদের ছোড়া ইটে। কিন্তু যাঁরা হামলা চালালেন, তাঁরা কারা? বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত তা স্পষ্ট নয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, হামলাকারীদের অনেকেই রাতের মিছিলে ছিলেন। সেখান থেকেই তাঁরা হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে পড়েছিলেন। আরজি করের ঘটনায় ‘বিচার চাই’ বলেও স্লোগান দিতে শোনা গিয়েছিল তাঁদের। হামলাকারীদের অনেকের গায়ে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ লেখা টিশার্টও ছিল। কিন্তু প্রশ্ন হল, ‘বিচার চাই’ বলে স্লোগান তুলে তাঁরা হাসপাতালে ভাঙচুর চালাতে গেলেন কেন?

শুধু তা-ই নয়, হাসপাতালের ভিতরে যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁদের মঞ্চই বা ভেঙে দেওয়া হল কেন? প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলাকারীদের কেউ কেউ হাফপ্যান্ট পরে এসেছিলেন। কেউ এসেছিলেন স্যান্ডো গেঞ্জি পরে। তা থেকেই অনেকের অনুমান, হামলাকারীরা কাছেপিঠেরই বাসিন্দা। তাঁদের অনেকের মুখ চেনা বলেও দাবি করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ কেউ। পুলিশের একাংশও মনে করছে, দমদম, টালা, সিঁথি ও দক্ষিণদাঁড়ি এলাকার কিছু লোকই এই কাজ করেছেন।

ঘটনার পর থেকেই প্রত্যাশিত ভাবে একে অপরের দিকে আঙুল তুলতে শুরু করেছে শাসক ও বিরোধী। ‘রাত দখলের’ কর্মসূচিকে রাম-বাম কর্মসূচি বলে শুরু থেকেই কটাক্ষ করছিলেন তৃণমূলের একাংশ। রাতে সেই কর্মসূচির মাঝেই হামলার নেপথ্যে সিপিএম-বিজেপির হাত থাকতে পারে বলেই মনে করছেন শাসক শিবিরের কেউ কেউ। অন্য দিকে, গোটা ঘটনার দায় শাসক তৃণমূলের ঘাড়েই চাপিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের গুন্ডারা এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন একটি অরাজনৈতিক আন্দোলনকে দমাতে চেয়ে। শুভেন্দুর আরও দাবি, মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের মামলার তদন্তভার যে হেতু সিবিআইয়ের হাতে গিয়েছে, তাই তথ্যপ্রমাণ লোপাটের জন্য এ ভাবে হামলা চালানো হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীদের প্রথম নিশানাই ছিল জরুরি বিভাগ। কোলাপসিবল গেট ভেঙে তাঁর ভিতরে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছেন তাঁরা। কারও হাতে লাঠি, কারও হাতে রড, ইট, পাথর! হাতের সামনে যা পেয়েছেন, তা-ই ভেঙেছেন হামলাকারীরা। কিন্তু জরুরি বিভাগের চার তলার যে সেমিনার হল থেকে ওই মহিলা চিকিৎসকের দেহ গত শুক্রবার উদ্ধার হয়েছিল, হামলাকারীরা সেখানে গিয়েছিলেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। অনিলকুমার মণ্ডল নামে হাসপাতালের এক কর্মী বলেন, ‘‘আমরা এখানে যাঁরা ছিলাম, কোনও ক্রমে ছ’তলায় উঠে বেঁচেছি। হামলাকারীরা চার তলা পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল। দরজাও ভেঙেছে। কিন্তু সেমিনার হলের দিকে ওরা গিয়েছিল কি না, সেটা বলতে পারব না।’’ চার তলায় থাকা পুলিশকর্মীদেরও দাবি, সেখানে কেউই উঠে আসেননি। পুলিশ সূত্রে দাবি, মূল ঘটনাস্থলে কেউ যাননি। তা অক্ষতই রয়েছে। সেই জায়গাটি নতুন বসানো আটটি সিসি ক্যামেরা নজরদারিতে রয়েছে। আগে ওই জায়গায় মাত্র দু’টি সিসি ক্যামেরা ছিল।

পুলিশের একাংশের অবশ্য দাবি, তাদের মনোবল ভাঙতেই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। পুলিশ ভিতরেও যেমন আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা দিচ্ছে, তেমন বাইরের পরিস্থিতিও সামাল দিচ্ছে। পুলিশের কাজে বাধা দিতেই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে মনে করছেন বাহিনীর একাংশ।

হাসপাতালে হামলার ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে যান পুলিশ কমিশনার। এলাকা ঘুরে ‘ক্রুদ্ধ’ বিনীত বলেন, ‘‘ডিসি নর্থ প্রতিবাদকারীদের রক্ষা করতে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছেন। এখানে যা হয়েছে তা ভুল প্রচারের জন্য। কলকাতা পুলিশ এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত।’’

এর পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন সিপি। তিনি বলেন, “কলকাতা পুলিশ কী করেনি! আরজি করের ঘটনার তদন্তের জন্য পুলিশ সব কিছু করেছে। আমি দায়িত্ব নিয়ে এই কথা বলছি। আমার সহকর্মীরা দিন-রাত এক করে দিয়ে এই তদন্তের কিনারা করার চেষ্টা করেছেন। তাঁরা প্রমাণ সংগ্রহে কোনও রকম ত্রুটি রাখেননি। ইতিমধ্যেই মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা পরিবারের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। নানা রকম গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ ভুল প্রচারে কলকাতা পুলিশের সম্মানহানি হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন সিপি।

অন্য বিষয়গুলি:

RG Kar Medical College And Hospital protests
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy