ভাঙা হয়েছে মোটে ২৭টি। —প্রতীকী চিত্র।
গার্ডেনরিচ-মেটিয়াবুরুজ এলাকার ১৫ নম্বর বরোয় বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ জমা পড়েছে ১২৭টি। কিন্তু তার মধ্যে ভাঙা হয়েছে মোটে ২৭টি। এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে খাস কলকাতা পুরসভা থেকেই। যেখানে বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে গেলে খোদ এলাকার পুরপ্রতিনিধি বাধা হয়ে দাঁড়ান এবং পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারদের সরাসরি হুমকি দিয়ে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেন, সেখানে এটাই যে প্রত্যাশিত, তা নিয়ে পুরসভার অন্দরেও বিশেষ দ্বিমত নেই। অথচ, এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলেই পুরসভার সর্বোচ্চ স্তর থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়, বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষ নাকি সদাই তৎপর। যদিও গত ২৮ জুন থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাওয়া উপরের হিসাব সম্পূর্ণ অন্য কথাই বলছে।
গত ১৭ মার্চ গভীর রাতে গার্ডেনরিচে একটি বেআইনি বহুতল ভেঙে পড়ায় ১৩ জনের মৃত্যু ঘটনার স্মৃতি এখনও দগদগে। গার্ডেনরিচ-কাণ্ডের পরে বেআইনি নির্মাণ ঠেকাতে কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষের তরফে একাধিক বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। বিল্ডিং বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারদের মাধ্যমে অবৈধ নির্মাণ চিহ্নিত করার কাজে যাতে স্বচ্ছতা বজায় থাকে, তার জন্য ‘এসওপি’ (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর) তৈরি করেছেন পুর কর্তৃপক্ষ। তবু গার্ডেনরিচ, মেটিয়াবুরুজ, অর্থাৎ পুরসভার ১৫ নম্বর বরো এলাকায় বেআইনি নির্মাণের বিরাম নেই।
১৭ মার্চ রাতে পুরসভার ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে, গার্ডেনরিচের আজহার মোল্লা লেনে একটি নির্মীয়মাণ চারতলা বেআইনি বাড়ি ভেঙে পড়ায় ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ওই ওয়ার্ড ১৫ নম্বর বরোর অন্তর্গত। পুরসভার ১৩৩ থেকে ১৪১ নম্বর ওয়ার্ড ১৫ নম্বর বরো এলাকার মধ্যে। চারতলা ওই বেআইনি বাড়িটি পুকুরের উপরে অবৈধ ভাবে তৈরি হয়েছিল। গার্ডেনরিচ, মেটিয়াবুরুজ এলাকায় পুকুর ভরাটের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। বছরখানেক আগে পুকুর ভরাটের অভিযোগ পেয়ে পুরসভার এক সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সেখানে গেলে তাঁকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে পুলিশ এসে সেই ইঞ্জিনিয়ারকে কোনও মতে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
১৭ মার্চ রাতের সেই ঘটনার পরে ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানে মেয়র একাধিক বার দাবি করেছেন, বেআইনি বাড়ি সংক্রান্ত অভিযোগ পেলেই পুরসভার তরফে কঠোর পদক্ষেপ করা হচ্ছে। বেআইনি বাড়ি দেখলেই বিল্ডিং দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের সেটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, আগের তুলনায় এখন বেআইনি নির্মাণ অনেক কমেছে। যদিও পরিসংখ্যান সে কথা বলছে না। পুরসভার বিজেপি পুরপ্রতিনিধি সজল ঘোষের অভিযোগ, ‘‘বেআইনি বাড়ির তথ্য লুকনো হচ্ছে। গার্ডেনরিচের বেআইনি নির্মাণ সংক্রান্ত প্রকৃত তথ্যই চোখে আঙুল দিয়ে তা দেখিয়ে দিচ্ছে। বেআইনি বহুতল ভেঙে মৃত্যুর ঘটনার পরেও সেখানে বেআইনি নির্মাণ থামছে না। এর দায় এড়াতে পারেন না পুর কর্তৃপক্ষ।’’
গত পাঁচ মাসে গার্ডেনরিচে ১২৭টি বেআইনি বাড়ির মধ্যে ১০০টি ভাঙা গেল না কেন? গত সপ্তাহে গার্ডেনরিচের ১৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে বেআইনি বহুতল ভাঙতে গিয়ে স্থানীয় পুরপ্রতিনিধির বাধার মুখে পড়ে ফিরে আসতে হয় বিল্ডিং বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারদের। অভিযোগ, শাসকদলের ওই পুরপ্রতিনিধি ইঞ্জিনিয়ারদের রীতমতো মারধরের হুমকি দেন। কটূক্তিও করা হয় বলে অভিযোগ।
গার্ডেনরিচ, মেটিয়াবুরুজ এলাকায় বেশির ভাগ বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে না পারার পিছনে পুরসভার বিল্ডিং দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের যুক্তি, ‘‘অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শাসানির মুখে পড়তে হচ্ছে পুরকর্মীদের। অনেক ক্ষেত্রে বেআইনি বাড়ি ভাঙতে গিয়ে স্থানীয় মহিলাদের বিক্ষোভের মুখেও পড়তে হচ্ছে। পর্যাপ্ত মহিলা পুলিশ থাকছে না। আবার অনেক ক্ষেত্রে বেআইনি বাড়ির মালিকেরা আদালতের শরণাপন্ন হচ্ছেন। তার জেরে আটকে যাচ্ছে ভাঙার কাজ।’’
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy